বাংলা ব্লগ

কেনাকাটায় প্রতারিত হলে ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করার নিয়ম

এই পোষ্টের মাধ্যমে কেনাকাটায় প্রতারিত হলে ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন।

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবেন- কেনাকাটায় প্রতারণার শিকার হলে করণীয় কি ও ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করার নিয়ম কি?, কি কি অপরাধে ভোক্তা অধিকার আইনের আওতায় আসে বা কি অপরাধে দন্ড হয়?, কেনাকাটায় প্রতারিত হলে কিভাবে অভিযোগ জানাতে হয় ও কোথায় অভিযোগ জানাবেন?, ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করার জন্য কি কি তথ্য দরকার হয়?, পন্য ক্রয় করার পর কত দিনের ভিতরে অভিযোগ করতে হয়?, অভিযোগ প্রমানিত হলে বা অপরাধের দণ্ড কি হয়?

ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করার নিয়ম

কেনাকাটায় প্রতারণার শিকার হলে করণীয় কি ও ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করার নিয়ম কি?

আমরা যদি কোন জায়গা থেকে কেনাকাটা করে প্রতারণার শিকার হই সে ক্ষেত্রে কিভাবে ভোক্তা অধিকার এর মাধ্যমে আমরা আইনি সহযোগিতা পেতে পারি সে বিষয়ে বিস্তারিত আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করব। আমরা যে যেকোন কিছু কিনতে গিয়েও প্রতারণার মধ্যে পরতে হয় আবার এখন প্রায় সময় অনলাইনের মাধ্যমে কেনাকাটা করতে গিয়ে প্রতারণার মধ্যে পরতে হয় । আমরা যদি কেনাকাটায় যেকোন ধরনের প্রতারণার শিকার হই তখন ভোক্তার অধিকার এ অভিযোগ করতে পারি যাতে আমরা আমাদের নির্দিষ্ট অভিযোগ এর ন্যায় বিচার পায়।

কি অপরাধে আইনের আওতায় আসে

কি কি অপরাধে ভোক্তা অধিকার আইনের আওতায় আসে বা কি অপরাধে দন্ড হয়?

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের (৩৭) ধারা অনুযায়ী- পণ্যের মোড়ক ইত্যাদি ব্যবহার না করলে দণ্ডিত হবে, উল্লেখ করা হয়েছে। (৩৮) মূল্যের তালিকা প্রদর্শন না করা, (৩৯) সেবার মূল্যের তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা, (৪০) ধার্য্যকৃত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রয় করলে, (৪১) ভেজাল পণ্য বা ঔষধ বিক্রয় করলে, (৪২) খাদ্য পণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ করলে, (৪৩) অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করলে, (৪৪) মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করলে, (৪৫) প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করলে, (৪৬) ওজনে কারচুপি করলে, (৫০) পণ্যের নকল প্রস্তুত বা উৎপাদন করলে, (৫১) মেয়াদ উত্তীর্ণ কোন পণ্য বা ঔষধ বিক্রয় করলে, (৫২) সেবা গ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্নকারী কার্য করলে, (৫৩) অবহেলা, ইত্যাদি দ্বারা সেবা গ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য, জীবনহানি, ইত্যাদি ঘটিলে, (৫৪) মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করলে, (৫৫) একই অপরাধ দ্বিতীয় বার করিলে, এই সকল ধারা গুলোর অপরাধ করিলে ভোক্তা অধিকার আইনে অপরাধি হবে এবং দণ্ডিত হবে।

কোথায় অভিযোগ জানাতে হয়

কেনাকাটায় প্রতারিত হলে কিভাবে অভিযোগ জানাতে হয় ও কোথায় অভিযোগ জানাবেন?

কিভাবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরে যেকোন অভিযোগ জানাবেন? অভিযোগ জানানোর অনেক পন্থা আছে, এর মধ্যে ভোক্তা অধিকার অনলাইন অভিযোগ করার নিয়ম যদি জানতে চান তাহলে যেমন- আপনি ই-মেইল এর মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারেন, ওয়েবসাইটে অভিযোগ জানাতে পারেন বা অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের সাহায্যে সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারবেন। ইমেইলে অভিযোগ জানানোর জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর ওয়েবসাইটে গিয়ে ফরম ডাউনলোড করে সেটি ফিলাপ করে ক্রয়কৃত পন্যের রশিদসহ nccc@dncrp.gov.bd এই মেইলে এই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এটাচ করে অভিযোগ করা যাবে।

লিখিত আকারে অভিযোগ জানাতে পারবেন, লিখিত আকারে অভিযোগ করার জন্য অভিযোগপত্র ফরমটি পুরন করে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনের অষ্টম তলায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযোগ জানানো যাবে ও দেশের সবগুলো বিভাগীয় শহর গুলোর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গুলোতে অভিযোগ জানানো যাবে। আবার প্রত্যেক জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও লিখিতভাবে অভিযোগ করা যাবে।

অভিযোগ করার জন্য কি কি তথ্য দরকার

ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করার জন্য কি কি তথ্য দরকার হয়?

প্রথমেই ক্রয়কৃত রশিদ দরকার হবে, যদি ক্রয়কৃত রশিদ না থাকে তাহলে সেটি গ্রহণযোগ হয় না। যার নামে অভিযোগ করা হবে তার নাম ঠিকানা দরকার লাগবে। ‍যিনি অভিযোগ করবেন তিনিরও নাম ঠিকানা মোবাইল নাম্বার দরকার হবে।

কত দিনের ভিতরে অভিযোগ করতে হয়

পন্য ক্রয় করার পর কত দিনের ভিতরে অভিযোগ করতে হয়?

যেকোন পন্য ক্রয় করার পর ৩০ দিনের ভিতরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরে অভিযোগ জানাতে হবে। তবে ৩০ দিনের বেশি হয়ে গেলে তা গ্রহণযোগ্যতা থাকে না।

অপরাধের দণ্ড কি হয়

ভোক্তা অধিকার আইনে অভিযোগ প্রমানিত হলে অপরাধের দণ্ড কি হয়?

ভোক্তা অধিকার আইনে অভিযোগ করলে আর তা যদি প্রমানিত হয় তাহলে অভিযোগকারীকে আদায়কৃত জরিমানা থেকে ২৫ শতাংশ দিবেন।

প্যাকেট মোড়কে পণ্যের ওজন, পরিমান, উপাদান, ব্যবহার করার বিধি ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য কত বা উৎপাদনের তারিখ বা প্যাকেটজাতকরনের তারিখ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ স্পষ্টভাবে লিখা না থাকলে বা এসব আইন অমান্য করলে অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

ভোক্তা অধিকার আইনে বলা আছে কোন পণ্য বা সেবা বিক্রয়ে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাগণকে প্রতারিত করলে অনুর্ধ্ব ১ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।

প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা প্রদত্ত মূল্যের বিনিময়ে যথাযথভাবে বিক্রয় না করলে অনুর্ধ্ব ১ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।

আবার একই অপরাধের পুনরাবৃত্তির ঘটালে বা একই অপরাধ যদি দ্বিতীয়বার করা হয় তাহলে এই অপরাধের কারনে দ্বিগুণ দন্ডে দণ্ডিত হবে।

সর্বশেষঃ

কেউ যদি চায় তাহলে কোর্টে গিয়ে বা দেওয়ানি আদালতে গিয়ে প্রতারণার মামলাও করতে পারবেন।

ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে জানতে ভোক্তা অধিকার ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন- http://dncrp.portal.gov.bd

ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে এখান থেকে নীতিমালা দেখে নিন।

অভিযোগ করার ফরম ডাউনলোড করতে সরাসরি এখানে ক্লিক করুন

আশা করি যারা পণ্য ক্রয় করার ক্ষেত্রে প্রতারিত হবেন তারা চাইলে ভোক্তা অধিকার আইন এর সাহায্য নিয়ে প্রতিকার পেতে পারেন।

আরো পড়ুন-

Quick Bangla

বাংলা তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট হিসেবে পরিচালিত এই সাইটটি। তাই বাংলায় অনেক ধরনের তথ্যই এখানে পেয়ে যাবেন। আশা করি সঠিক তথ্য বিষয়বস্তু জানতে পারবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

Adblock Detected

Please Turn off ad blocker