জমি বন্ধক রাখার দলিল লেখার নিয়ম, জমি বন্ধকী চুক্তিনামা
আমাদের টাকা প্রয়োজনে বা যেকোন প্রয়োজনে অনেক সময় নিজেদের জমি অন্যের কাছে বন্ধক বা মর্গেজ দিতে হয়। আমরা যখন কোন জমি বন্ধক দিতে যাই তখন কিভাবে জমি বন্ধক দেওয়ার চুক্তিপত্র তৈরি করতে হয় জানি না। জমি বন্ধক রাখার দলিল লেখার নিয়ম এবং জমি বন্ধকী চুক্তিনামা দলিলে কি কি শর্ত থাকে তা এই পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন। নিম্নে জমি বন্ধক নামা লেখার নিয়ম এর একটি নমুনা ফরমেট দেওয়া হলো যে ফরমেটটি দেখে ও তথ্য গুলো পরিবর্তন করে জমি বন্ধকনামা চুক্তিপত্র (Rules for land mortgage agreement) করা সম্ভব হবে। তাছাড়াও এই ফরমেটটি দেখে বুঝতে পারবেন কিভাবে জমি বন্ধকনামা তৈরি করতে হয়।
নিচে জমি বন্ধকী চুক্তিনামা নমুনা ফরমেট তুলে ধরা হলোঃ-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
জমি বন্ধক নামা চুক্তিপত্র
নাম:………….., পিতা:…………………ঠিকানা:………………. জাতীয়তা- বাংলাদেশী, ধর্ম- ইসলাম, পেশা- ব্যবসা।
—-প্রথম পক্ষ / জমির মালিক/ বন্ধক দাতা॥
নাম:………….., পিতা:…………………ঠিকানা:………………. জাতীয়তা- বাংলাদেশী, ধর্ম- ইসলাম, পেশা- ব্যবসা।
—-২য় পক্ষ/ বন্ধক গ্রহীতা।
পরম করুণাময় মহান আল্লাহতায়ালার নাম স্মরণ করিয়া অত্র বন্ধকনামা চুক্তিপত্রের আইনানুগ বয়ান আরম্ভ করিতেছি। যেহেতু প্রথম পক্ষ নিম্নে তফসিল বর্ণিত সম্পত্তির ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত হইয়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখল করিয়া আসিতেছি। প্রথম পক্ষের নগদ টাকার বিশেষ প্রয়োজন হইলে দ্বিতীয় পক্ষকে নিম্নে তফসিল বর্ণিত ২ দাগে ১১.৫ (সারে এগার) কাঠা জমি বন্ধক দেওয়ার প্রস্তাব করিলে আপনি দ্বিতীয় পক্ষ উক্ত প্রস্তাব গ্রহণ করিয়া নিম্নে তফসিল বর্ণিত ১১.৫ (সারে এগার) কাঠা জমি বন্ধক নিতে রাজী ও সম্মত হইয়াছেন। যেহেতু উভয় পক্ষ কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে অত্র জমি বন্ধকনামা চুক্তিপত্রে আবদ্ধ হইলাম।
শর্তাবলী
০১। প্রথম পক্ষ/ বন্ধক দাতা দ্বিতীয় পক্ষ /বন্ধক গ্রহিতার নিকট হইতে নিম্নে তফসিল বর্ণিত ফসলি খালি জমিখানা বন্ধক রাখিয়া এককালীন নগদ ৩৫,০০০.০০ (পঁয়ত্রিশ হাজার) টাকা উপস্থিত স্বাক্ষীগণের মোকাবেলায় বুঝিয়া নিয়াছেন।
০২।যেহেতু, অত্র বন্ধকী জমিখানা ফসলী জমী, দ্বিতীয় পক্ষ/বন্ধক গ্রহিতা নিজেই ফসলাদী রোপন করিয়া তাহা ভোগ করিবেন অথবা অন্য কাহারো মাধ্যমে ফসলাদি লাগাইয়া ভোগ করিতে পারিবেন।
চলমান পাতা- ২
(পাতা-২)
০৩।যতদিন পর্যন্ত ১ম পক্ষ ২য় পক্ষকে টাকা ফেরত না দিতে পারিবে ততদিন পর্যন্ত দ্বিতীয় পক্ষ ভোগ দখল করিবে। ইহাতে ১ম পক্ষ কোন ওজর আপত্তি করিতে পারিবেন না।
০৪। ১ম পক্ষ যখন জমি বন্ধক বাবদ ৩৫,০০০.০০ (পঁয়ত্রিশ হাজার) টাকা দ্বিতীয় পক্ষের নিকট ফেরত দিবে, ২য় পক্ষ বন্ধকী জমির দখল প্রথম পক্ষের নিকট ফেরত বুঝাইয়া দিতে বাধ্য থাকিবেন।
০৫। প্রথম পক্ষ জমি বন্ধক থাকাবস্থায় কোনও কাহারও কাছে বন্ধকী জমি হস্তান্তর করিতে পরিবেন না। যদি হস্তান্ত করে দ্বিতীয় পক্ষ আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে পারিবে।
০৪। আল্লাহ না করুন অত্র চুক্তিপত্র সম্পাদনের পর প্রথম পক্ষ/ বন্ধক দাতা মৃত্যু বরণ করিলে তাহার স্থলবর্তী ও পরবর্তী বৈধ ওয়ারিশান প্রথম পক্ষ/ বন্ধক দাতা বলিয়া গণ্য হইয়া উক্ত বন্ধকের সম্পূর্ণ টাকা ওয়ারিশগণই দ্বিতীয় পক্ষ বন্ধক গ্রহিতাকে ফেরত প্রদান করিতে বাধ্য দিবেন।
০৫। তদরূপ ২য় পক্ষ/ বন্ধক গ্রহিতার মৃত্যু হইলে তাহার ওয়ারিশ উক্ত টাকা বুঝিয়া পাইয়া উক্ত জমিটি প্রথম পক্ষ/বন্ধক দাতাকে ফেরত বুঝাইয়া দিতে বাধ্য থাকিবেন।
০৬।এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, অত্র জমিটি বন্ধকীর বিষয়ে প্রথম পক্ষ /বন্ধক দাতার পরিবার বা তাহার ওয়ারিশগণ কোন প্রকার ওজর আপত্তি করিতে পারিবে না। করিলে তাহা সর্বাদালতে অগ্রাহ্য বা বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।
চলমান পাতা- ৩
(পাতা-৩)
এতদ্বার্থে স্বেচ্ছায়, সুস্থ শরীরে সরল মনে অন্যের বিনা প্ররোচনায় অত্র ফসলী জমির বন্ধকীনামা দলিল পাঠ করিয়া উপস্থিত স্বাক্ষীগণের মোকাবেলায় নিজ নাম সহি সম্পাদকন করিয়া দিলাম। ইতি, তাং-
বন্ধকী নামা দলিলের তফসিল পরিচয়ঃ
জেলা- ঝালকাঠী, থানা- ঝালকাঠী, জমির দাগ নংঃ
জমির দাগ নং জমির পরিমাণ
১।
২।
অত্র বন্ধকী দলিল ৩ (তিন) পাতায় কম্পিউটার কম্পোজকৃত বটে।
স্বাক্ষীগণের নাম ও স্বাক্ষর
১।
২।
৩।
প্রথম পক্ষ/ দলিল দাতার স্বাক্ষর
দ্বিতীয় পক্ষ দলিল গ্রহিতার স্বাক্ষর
জমি বন্ধকী চুক্তিনামা পেইজ সেটাপ
উপরে দেখানো বন্ধকী দলিল লেখার নিয়ম বা জমি বন্ধক নামা চুক্তিপত্র কিভাবে লেখা হয় জানতে পারলেন। তবে নিজেদের প্রয়োজনে এমএস ওয়ার্ডে লেখার পর এটিকে পেইজ সেটাপ করে নিতে হবে। পেইজ সেটাপ করার জন্য প্রথমে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের ফাইল মেনু থেকে পেইজ সেটাপে যেতে হবে বা পেইজ লেআউট থেকে মার্জিন থেকে কাস্টমস অপশনে যেতে হবে। তারপর উপরে মানে টপে 4.5 ইঞ্চি রাখতে পারেন তবে 4.3 দিলেও হয়ে যায়, লেফট ও রাইট এ 1ইঞ্চি রাখতে পারেন। তারপর নিচে মানে বোটমে 1.5 ইঞ্চি রাখতে হবে। তারপর পেইজ সেটাপটি ওকে করে দিতে হবে।
এবার আপনি প্রিন্টারে প্রিন্ট করতে পারেন। যেকোন চুক্তিপত্র বাংলাদেশ আইন অনুসারে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প যা ১০০ টাকার ৩টি ষ্ট্যাম্প পেপারে প্রিন্ট করতে হয়। আপনি তিন পেইজে ভাগ করে প্রিন্ট করে নিতে পারেন।
শেষ কথাঃ
আশা করি জমি বন্ধক নামা চুক্তিপত্র কিভাবে লেখা হয় জানতে পারলেন। উপরে দেখানো মতে জমি বন্ধকনামা চুক্তিপত্রটির মাধ্যমে আপনার প্রয়োজনে আরেকটি এরকম চুক্তিপত্র দলিল তৈরি করতে পারবেন। বন্ধকী দলিল লেখার নিয়ম পিডিএফ ফাইল শেয়ার করেনি তবে লেখাগুলো কপি করে নিয়ে আপনার মত করে চুক্তিনামা তৈরি করে নিতে পারেন। এছাড়াও কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করলে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ পোষ্ট পড়ার জন্য।
আরো জানুনঃ-
bhai eisob affidevit er jonno koto takar stamp byabohar korte hobe
বাংলাদেশের বর্তমান আইন অনুযায়ী ৩০০ টাকার মানের ষ্ট্যাম্প পেপার ছাড়া কোন চুক্তিপত্র করা হলে তা আইনত গ্রহণযোগ্য থাকে না। তাই চুক্তিপত্র ৩০০ টাকার আর যদি এফিডেভিট করেন কোন কিছু তাহলে ২০০ টাকার হলেই চলবে।
ভালো আর্টিকেল ছিল।
ধন্যবাদ
জমি বন্ধক ফিরিয়ে আনার পক্রিকা গোলো জানাতে পারলে উপক্রিত হই।
সাধারণত জমি বন্ধক ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে স্বাক্ষীর সামনে টাকা দিয়ে দলিলটি নিয়ে আসার মাধ্যমে বা দলিল ছিড়ে ফেলের মাধ্যমেই করে থাকে।