উসিলা ধরা জায়েজ কোরআন হাদিস থেকে দলিল
এই পোষ্টের মাধ্যমে উসিলা ধরা জায়েজ কোরআন হাদিস থেকে দলিল জানতে পারবেন। আশা করি উছিলা কি কেন দরকার জেনে নিতে পারবেন।
উসিলা ধরা জায়েজ নাকি শিরক এ নিয়ে অনেক মুসলমানদের মধ্যে কিছু মানুষ মতবিরুধ সৃষ্টি করা হয়েছে। ইসলাম পরিপূর্ণ একটি ধর্ম এখানে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন পন্থায় গবেষণা করতে পারবে। তাই কিছু মানুষ উছিলা ধরাকে অল্প জ্ঞানে শিরক মনে করতে পারে। তারা মনে করে উসিলা ধরা মানে উসিলা ব্যক্তিকে ক্ষমতার উর্ধে চিন্তা করে ফেলা। কিন্তু সকল ক্ষমতার মালিক মহান আল্লাহ তায়ালা এটা আমাদেরকে বুঝতে হবে। কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে ও গভীর গভীর ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করতে পারে আর তিনির উসিলায় যদি আল্লাহর বান্দার বা দুনিয়াবির কোন উপকার হয় তাহলে সেটাকে শিরক ভাবার মত কোন সুযোগ নেই ইসলামে। ইসলাম নিয়ে যে যতবেশি জানবে সে ততবেশি শিখবে। ইসলাম একটি বই নয় এটাকে পড়ে ফেললেই হবে, সব শিখে যাবে। পৃথিবীর অন্ত পর্যন্ত কোরআন সুন্নাহ নিয়ে মানুষ গবেষনা করতে পারবে, মানুষের জ্ঞান শেষ পর্যন্ত পাবে এটা বিশ্বাস করি।
আমাদের দেশে অনেকেই অল্প বিদ্যায় ভয়ংকর এই উদাহরণের মধ্যে পরে থাকে। কারণ অনেকেই ইসলাম নিয়ে কিছু পড়া শুনা করার পর দ্বীনি বুজুর্গব্যক্তিদের ভুল ধরতে যায়। অথচ ইসলাম সম্পর্কে নিতান্তই তারা অজ্ঞ, যদিও তাদেরকে ইসলামে জ্ঞান পাপী বলা হয়েছে এবং জ্ঞানপাপী থেকে দুরে থাকতেও বলা হয়েছে। এবং নবীজি সাঃ এই জ্ঞান পাপীদের ফেতনা নিয়ে চিন্তা করেছিলেন।
উসিলা ধরা জায়েজ হাদিসের আলোকে
হযরত উমর (রা:) থেকে বর্ণিত হাদিস, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন যে, দরূদ শরীফ পাঠ করা না হলে উম্মতের দোয়াসমূহ আসমান ও জমিনের মাঝে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। যখন দরূদ শরীফ পাঠ করা হয়, তখন তা আল্লাহতায়ালার দরবারে পেশ করা হয় এবং তা কবুল হয়’ (মিশকাত শরীফ)।
হযরত আলী (রা:) বর্ণনা করেন, আমি নবী করিম (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, সিরিয়ায় চল্লিশজন আবদাল আছেন তাদের ওছিলায় বৃষ্টি বর্ষিত হয়, শত্রুরা তাদের ওছিলায় পরাজিত হয় এবং তাদের ওছিলায় সিরিয়াবাসীদের ওপর থেকে আযাব দূরীভূত হয়’ (মিশকাত শরীফ)।
হযরত উমর (রা:) থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে যে, হযরত আদম (আঃ)-কে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত রাসুলে করিম (সাঃ)-এর ওছিলায় আল্লাহপাকের মহান দরবারে ক্ষমা প্রার্থী হয়েছে। তখন আল্লাহপাক তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আদম! মোহাম্মদ (সাঃ)-কে তুমি কীভাবে জানলে?
তদুত্তরে হযরত আদম (আঃ) আরজ করলেন, হে মহান মালিক! আমার সৃষ্টির পর আমি যখন আরশের দিকে তাকালাম তখন তাতে দেখতে পেলাম লেখা হয়েছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’। তখনই আমি উপলদ্ধি করেছি যে, আপনার মহান দরবারে সর্বাধিক সম্মানের অধিকারী হলেন হযরত মোহাম্মদ (সঃ)। এ জন্যই তাঁর ওছিলায়ই ক্ষমা প্রার্থনা করেছি। তখন আল্লাহপাক এরশাদ করেন, হে আদম! তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, তিনি তোমাদেরই সন্তান। তাঁকে সৃষ্টি না করলে আমি তোমাকেও সৃষ্টি করতাম না (খোলাসাতুত তাফসীর)।
উসিলা ধরা জায়েজ কোরআনের আলোকে
যদি এ সকল লোকেরা নিজেদের আত্মা সমূহের ওপর অত্যাচার করে, হে নবী (সঃ) আপনার দরবারে এসে হাজির হয়ে যায় এবং আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবায়ে নছুহা করে এবং আপনিও (ইয়া রাসুলুল্লাহ সঃ) তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তাহলে নি:সন্দেহে এরা আমি আল্লাহতায়ালাকে তওবা কবুলকারী, ক্ষমাকারী মেহেরবান হিসেবে পাবে। (সূরা : নিসা আয়াত ৬৪)।
এ আয়াত কারীমা দ্বারা প্রমাণ হয়ে গেল হুজুর (সঃ) প্রত্যেক গুনাহ্গারের জন্য সর্বসময় (কিয়ামতাবধি) মাগফিরাতের (ক্ষমা) ওয়াছিলা।
ওলী আউলিয়াগণের উসিলা ধরা জায়েজ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ, রাসুল (সঃ) ও আউলিয়াগণের আনুগত্য কর। কোন বিষয়ে মতভেদ দেখা দিলে তা আল্লাহ ও রাসুল (সঃ)-এর ওপর ন্যস্ত কর। যদি আল্লাহ এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখ, এ ব্যবস্থা তোমাদের জন্য উত্তম। (সূরা : নিসা, পারা- ৪ আয়াত- ৫৯)।
আল্লাহ বলেন-
হে মুমিনরা! আল্লাহকে ভয় কর, আর সৎকর্মপরায়নশীলদের সাথে থাক। {সূরা তাওবা-১১৯)
এ আয়াতে কারীমায় সুষ্পষ্টভাবে বুযুর্গদের সাহচর্যে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যা আল্লাহকে পাওয়ার পথে উসিলা সরূপ।
আল্লাহ বলেন-
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো, তাঁর দরবারে নৈকট্য লাভের উপায় ( উছিলা) অনুসন্ধান করো এবং তাঁর পথে প্রচেষ্টা ও সাধনা করো, সম্ভবত তোমরা সফলকাম হতে পারবে। -সুরা মায়েদা আয়াত ৩৫।
সূরা মায়েদা এই আয়াতের ব্যাখ্যা অনেকজন অনেকভাবে দেয়, আমার দৃষ্টিতে সেগুলোও ঠিক আছে কিন্তু উছিলা বলতে আপনি সব কিছুই বুঝতে পারেন ইসলামিক পথে। আল্লাহকে পাইবার পথে কোরআন উছিলা হতে পারে, আল্লাহর ওলীগন হতে পারে যারা আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করেছেন।
যেমন আল্লাহ বলেছেন-
আমাদের সরল সঠিক পথ [সীরাতে মুস্তাকিম] দেখাও। তোমার নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের পথ। {সূরা ফাতিহা-৬,৭}
এভাবে বলার জন্যও সূরা ফাতিহার অর্থ ধারায়, তাহলে আমাদের একটু কষ্ট করে বুঝতে হবে আল্লাহ নিজেই আমাদের শিখিয়েছেন আল্লাহর নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের পথে পরিচালিত হওয়ার কথা আল্লাহকে বলতে।
আল্লাহ আরো বলেন-
যাদের উপর আল্লাহ তাআলা নিয়ামত দিয়েছেন, তারা হল নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, ও নেককার বান্দাগণ। {সূরা নিসা-৬৯}
মৃত ব্যক্তির উসিলা
অনেকেই মাজারে গিয়ে উসিলা ধরে থাকে বা উছিলা ধরে মোনাজাত করে। এটাকে অনেকেই মেনে নিতে পারে না। অনেকেই বলে মৃত ব্যক্তি কোন উপকার করতে পারে না।
কিন্তু আল্লাহতায়ালা বলেন-
যারা আল্লাহর মহব্বতে জীবনকে উৎসর্গ করেছে, তাদেরকে মৃত মনে কর না, বরং তারা জীবিত, স্বীয় রবের নৈকট্যপ্রাপ্ত, স্বীয় রবের পক্ষ থেকে রিযিকপ্রাপ্ত’ (সূরা : ইমরান পারা : ৩ আয়াত : ১৬৯)।
আল্লাহর রাস্তায় বা আল্লাহর মহব্বতে যারা জীবনকে উৎসর্গ করেছে তারা মৃত নয়। মৃত বলা যাবে না। আল্লাহর নবীগণ, ওলীগণ ও শহীদগণকে মৃত বলতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন।
রাসুল (সাঃ) অন্যান্য নবী গণের উসিলা নিয়ে মোনাজাত করেছেন এটাও হাদিসে প্রমাণিত, তাই যেসব নবীগণ শরীয়তের অন্তরালে চলে যাওয়ার পরও তিনিদের উসিলা দিয়ে মোনাজাত করেছেন সয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম, তাই নবীজির উম্মতগণের মধ্যেও এ পন্থায় উসিলা নেওয়া যাবে।
নবী ওলীকে উসীলা করে দু আ করার বিধান কি
নবী ওলীকে উসীলা করে দু আ করা বৈধ। কারন হলো আমরা যখন উসিলা নিয়ে দুআ করি তখন এই বলে মোনাজাত করি- ‘হে আল্লাহ, রাসুলের উসিলায়/আউলিয়াদের উসিলায় আপনি আমাদের কবুল করে নিন’ বলার অর্থ হচ্ছে, ‘হে আল্লাহ, রাসুল (সা.) আপনার প্রিয় এবং আমরা আপনার সেই প্রিয়জনকে ভালোবাসি। আপনার প্রিয়জনও আমাদেরকে ভালোবাসতেন। আপনার প্রিয়জনের প্রিয়জন হিসেবে, অনুগত উম্মত হিসেবে আমাদের ওপরে রহম করুন, আমাদের দোয়া কবুল করুন।
আমরা আপনার অনুগত ও প্রিয় বান্দা হিসেবে আপনার ওলীদেরকে ভালোবাসি। আপনার প্রিয় বান্দাদের প্রতি এই ভালোবাসার উসিলায় আপনি আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
শেষ কথাঃ
উসিলা ধরা ইসলাম জানার জন্য, মানার জন্য এটা কোরআন হাদিস ধারা জায়েজ, উসিলা ধরে দুআ করাও জায়েজ। এটা কেউ নরমাল জ্ঞানে অস্বিকার করতে পারবে না। আপনি দেখবেন যখন কেউ বলে উসিলা ধরা যাবে না, তিনিও কিন্তু কারো না কারো থেকে জেনেছে উসিলা ধরা যাবে না, সে ক্ষেত্রে সে ব্যক্তিও কিন্তু আরেকজন উসিলার মাধ্যমেই জানতে পারলো উসিলা ধরা যাবে না।
আল্লাহ বলেছেন-“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমাকে পাওয়ার জন্য উসিলা তালাশ কর”। এই কথাটি অস্বিকার করা বা গুরিয়ে ফিরিয়ে চিন্তা করে ইসলামিক শিক্ষক বা বুজুর্গব্যক্তিকে উসিলা হিসেবে চিন্তা না করা এক ধরনের বোকামো কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়।
উসিলা ধরা জায়েজ নাকি শিরক আরো ভালভাবে জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন-
আরো পড়ুন-
- নবী আমাদের মতই মানুষ ছিলেন এই বিশ্বাস কাফেরদের ছিল
- মাযহাব না মানলে ঈমান থাকবে না এই জামানায়
- মহিলারা কবর জিয়ারত করতে পারবে
- পীরের কাছে সাহায্য চাওয়া জায়েজ কেন
- মাজারে মানত করা জায়েজ ও মান্নত করার বিধান
তথ্য সূত্রেঃ
kutubbaghdarbar.org.bd/উছিলা-বা-মধ্যস্থতা-ধরার-ব/