মৃত ব্যক্তির নামে মানুষকে খাওয়ানোর দলিল জেনে নিন

এই পোষ্টের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির নামে মানুষকে খাওয়ানোর দলিল জানতে পারবেন। আশা করি যাদের মনে এই প্রশ্ন আছে তারা উত্তর পেয়ে যাবেন।
মৃত ব্যক্তির নামে খাওয়ার অনুষ্ঠান করা যাবে কি
মৃত ব্যক্তির জন্য তিনদিনা চল্লিশা কুলখানী মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা কী যায়েজ, হে অবশ্যই যায়েজ। আমাদের দেশে মৃত ব্যক্তির নামে যে অনুষ্ঠানটি করা হয় তা মূলত গরিব দুঃখিকে উদ্দেশ্য করেই করা হয় এবং তার সাথে মোল্লা মুন্সিকে দাওয়াত দেওয়া হয় দোয়া করার জন্য এর সাথে দোয়ার সামিল হওয়ার জন্য আত্মীয় স্বজনদেরও দাওয়াত দেওয়া হয় সামর্থ অনুযায়ী। যা মূলত মৃত ব্যক্তির নামে ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে।
মৃত ব্যক্তির নামে মানুষকে খাওয়ানোর দলিল
সাইয়্যেদা হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি আপন ভাই আবদুর রহমান (রা.) এর তরফ থেকে এতেকাফ করেছিলেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে গোলাম আযাদ করেছিলেন।
হজরত সাআদ ইবনে উবাদা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, একদা তিনি নবী করীম (সাঃ) এর কাছে নিবেদন করলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! আমার মা তো ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি তাঁর তরফ থেকে সদকা দিতে পারি? নবী করীম (সাঃ) বললেন, পারো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোন সদকা সবচেয়ে উত্তম, নবী করীম (সাঃ), এরশাদ করলেন, মানুষকে পানি দেয়া। এ কথা শুনে হজরত সাআদ ইবনে উবাদা (রা.) একটি কূপ খনন করে দিয়ে বলেছিলেন, এটা সাআদের মায়ের কূপ।
উপরোক্ত হাদিসের আলোকে বলতে হয়-
সন্তান- সন্তুতিকে পিতামাতার মীযানের পাল্লায় তোলা হবে। অর্থাৎ তাদের কৃত ছওয়াব রেছানী, এসতেগফার, সদকা ইত্যাদি পিতামাতার মীযানের পাল্লা ভারী করবে। এ সমস্ত আমলে পিতামাতা রূহানী জগতে থেকে আনন্দিত হন। আল্লাহ্তায়ালা পিতামাতার শাফায়াত সন্তান-সন্তুতির জন্য এবং সন্তান-সন্তুতির শাফায়াত পিতামাতার জন্য কবুল করে থাকেন। এর দলীল আল্লাহ্তায়ালার এই বাণী, ‘তোমাদের পিতামাতা এবং সন্তান-সন্তুষ্টি উপকার করার দিক দিয়ে কারা যে তোমাদের অধিকতর নিকটবর্তী, এ ব্যাপারে তোমরা জানো না।’ ইমাম কুরতুবী (রা.) বলেন, বহু সংখ্যক হাদীছ- এ কথাটি প্রমাণ করে যে, মৃত মুমিন ব্যক্তির কাছে অন্যের আমলে সালেহার ছওয়াব পেঁছে থাকে।
মৃত্যুর পর চেহলাম চল্লিশা করার হুকুম কি
আমাদের দেশে যে নিয়ম গুলো চলে আসছে এর বিরুধিতা অনেকেই করে থাকে যেটা মোটেও ঠিক নয়। তারা বিরুধিতার যে কারনটি দেখিয়ে থাকে তা হলো- অনেকেই গরিব থাকে মানুষকে খাওয়ানোর সামর্থ থাকে না, তাই চারদিনা বা চল্লিশা কুলখানী করে মানুষকে খাওয়ানোর বিরুধিতা করে থাকে।
কিন্তু কথা হলো যারা গরিব তারা সবাইকে খাওয়ানোর প্রশ্নই উঠে না, যাদের সামর্থ আছে তারাই খাওয়াবে, বা যার যেরকম সামর্থ তারা সেভাবেই খাওয়াবে এটাই স্বাভাবিক।
উদাহরণ- কথা হলো হজ্ব করা ফরজ কিন্তু হজ্ব কারা করে থাকে? যাদের সামর্থ আছে তারাই হজ্ব করে থাকে। রোজা মুসলিমদের রাখতে হবে কিন্তু কারো যদি রোজা রাখার মত শক্তি না থাকে বা রোজা রাখলে সে মৃত্যুবরণ করতে পারে বা অসুস্থ্যতা হলে রোজা রাখাও নিধেষ আছে ইসলামে। আবার নামাজের দিক দিয়ে বলতে গেলে যারা অসুস্থ্য নামাজ স্বাভাবিক নিয়মে পড়তে পারবে না তাদের জন্য শুয়ে ইসারায় নামাজ আদায় করতে পারবে।
ঠিক তেমনি ভাবে নিজের আপনজন মৃত্যুবরণ করলে তাদের উদ্দেশ্যে দোয়ার আয়োজন করা মানুষকে খাওয়ানোর আয়োজন করা খারাপের কিছু নয়, এটা যার যার সামর্থ অনুযায়ী করবে এখানে বিরুধিতা করা কিছু নেই।
যারা মৃত ব্যক্তির জন্য তিনদিনা চল্লিশা কুলখানী মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার বিরুধিতা করে থাকে তাদের মধ্যে আরেকটি হাদিস বলে এটা নাকি হিন্দুদের সাদৃশ্য হয়ে যায় আর অন্যজাতির সাদৃশ্য হওয়ার জন্য ইসলামে নিষেধ রয়েছে কিন্তু কথা হলো একটা জাতির সাথে মিলে গেলেই যে আপনার ধর্ম নষ্ট হয়ে যাবে সে কথারও কোন ভিত্তি নেই।
ফাতেহা করা কি জায়েজ
শেষ কথাঃ মৃত ব্যক্তির জন্য যেকোনো দিন যেকোনো ভালো আমল দ্বারা ইসালে সওয়াব করা একটি ভালো কাজ। নগদ টাকা সদকা করা, তিলাওয়াত, তাসবিহ অথবা গরিব-মিসকিনদের খানা খাওয়ানো ইত্যাদির মাধ্যমে যেকোনো সময় ইসালে সওয়াব করা যায়। তবে দিন-তারিখ নির্ধারিত করারও কোন প্রয়োজন নেই। আর কেউ যদি কোন দিন ঠিক করে তাহলেও সমস্যা থাকার কথা নয়। তবে মৃত ব্যক্তির নামে উপরোক্ত আমল গুলো করলে এটা সকলেই বুঝতে পারে এটা একটি ভাল কাজ। আর ভাল কাজ করা ও ভাল কাজের প্রচলন করাও ইসলামে নির্দেশ রয়েছে।
((আমি অনেক কাটঠা ওহাবি দেখেছি যারা মৃত ব্যক্তির নামে অনুষ্ঠান করাটা পছন্দ করে না, মানুষকে নিষেধ করে কিন্তু সে লোকটির বাবা-মা ও ভাই এবং বোনজামাই মারা যাওয়ার পর তার মন মানেনি, সে নিজেই টাকা খরচ করে মানুষকে খাওয়ার আয়োজন করেছেন। আসলে সবার মনে চায় তার মা-বাবা ও নিকটতমদের জন্য দোয়ার আয়োজন করার জন্য এটা একটা আবেগের বেপার। এটা করলে ধর্ম ধংস হয়না। বরং যারা এই সামান্য বেপারটি নিয়ে ফেতনা সৃষ্টি করে নিষেধ করে তাদের থেকে আমাদের দূরে থাকা উচিত। কারণ ইসলামে ফেতনা সৃষ্টিকারী ও ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি একদম নিষিদ্ধ। ফেতনা সৃষ্টিকারীরা যতই লেবাসদারী জ্ঞানী গুণী হওক তাদের দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে না।))
মৃত ব্যক্তির নামে মানুষকে খাওয়ানোর দলিল
অনেকে বিরুধিতা করে কুলখানী করা নাকি বিদাত। তাহলে বলব- সাহাবিরা মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করেছেন এবং মানুষকে খাওয়ায়েছেন এটারও প্রমান রয়েছে। হাদিসটি জানতে নিচের ভিডিও গুলো দেখুন।- ওয়াজ করেছেন মাওলানা আক্কাস আলী
মৃত ব্যক্তির জন্য তিনদিনা চল্লিশা কুলখানী মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা সম্পর্কে জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন- নিম্নে চল্লিশা করা দলিল দিলেন মুফতী আলাউদ্দিন জিহাদী
আরো জানুন-
- গিবত করা কি ধরনের পাপ কাজ জেনে নিন
- নফস ও রুহ কি? নফস কি চায় আর রুহ কি চায় জানুন
- মাজার জিয়ারত করার দলিল দেখে নিন
তথ্য সূত্রেঃ
sunni-encyclopedia.com/2019/12/blog-post_303.html