ইসলামিক প্রশ্ন উত্তর

পায়ে ধরে সালাম করা জায়েজ প্রমাণ, কদমবুচি করা জায়েজ কি

এই পোষ্টের মাধ্যমে পায়ে ধরে সালাম করা জায়েজ প্রমাণ, কদমবুচি করা জায়েজ কি জানতে পারবেন। আশা করি যাদের এই প্রশ্ন আছে উত্তর পাবেন।

কদম শব্দের অর্থ হচ্ছে পা এবং বুছি শব্দের অর্থ চুম্বন করা। মানে পিতা-মাতা, দ্বীনদ্বার পরহেজগার, বুজুর্গব্যাক্তি, সম্মানিত ব্যক্তি ইত্যাদি উনাদের পায়ে চুম্বন করাকে কদমবুছী বলে। পায়ে ধরে সালাম করাকেও কদমবুচির আওতায় পরে। এই কদমবুছী খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনারা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কদমবুছী করেছেন, আবার এক সাহাবী অন্য সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কেও কদমবুছী করেছেন।

কদমবুচি করা জায়েজ কি

হাদিস শরীফের দৃষ্টিতে কদমবুচিঃ

১নং হাদিসঃ

ওয়াযি’ ইবনে আমের (রা:) বলেন, আমি একদা রাসুল (সা:) এর দরবারে গিয়ে হাজীর হলাম, আমাকে বলা হল ইনিই হলেন আল্লাহর রাসুল। আমরা তখন তাহার হস্তদ্বয় ও পদদ্বয় ধরে চুমু খেলাম। . (ইমাম বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ, অনুচ্ছেদ ৪৪৬, (তাক্ববিলুর রিজল), কদমবুছি বা পদচুম্বন)

২ নং হাদিসঃ

হযরত যারেঈ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যিনি আব্দুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধি দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তিনি বলেন- আমরা যখন মদীনা শরীফে আগমন করলাম তখন আমাদের বাহন হতে তাড়াতাড়ি নেমে পড়লাম এবং রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাত ও পা মোবারক চুম্বন করলাম। -(আবূ দাউদ, হাদিস নং ৫২২৪, ৩য় খন্ড, ৪ নং অধ্যায় ।

৩ নং হাদিসঃ

হযরত যাকওয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত ছুহাইব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- আমি হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুকে (স্বীয় চাচা) হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহ’র হাত ও পা যুগল চুম্বন করতে দেখেছি। (ইমাম বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ, অনুচ্ছেদ ৯৮৮, (তাক্ববিলুর রিজল), কদমবুচি বা পদচুম্বন। এবং মিশকাত শরিফ।)

৪নং হাদিসঃ

হযরত ছাফওয়ান বিন আসসাল রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই ইয়াহুদীদের একটি গোত্র হুজুর এ পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র হাত ও পা মোবারক চুম্বন করেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৭০৫, ৫ম খন্ড, ১৬ নং অধ্যায়, পৃ: ৩২।

৫নং হাদীসঃ

হুযূর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, হযরত ফাতেমা (নবীজীর স্নেহের কন্যা) রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহাকে চুমু খেতেন আর তিনি বলতেন আমি ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার কাছ থেকে বেহেশতের সুঘ্রান পাচ্ছি। হয়রত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহার মাথা মোবারক এ চুমু খেয়েছেন। আর প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- যে ব্যক্তি তার মায়ের পা চুম্বন করবে সে যেন বেহেশতের চৌকট চুমু খেল। (আবু দাউদ মাধ্যমে মাবসুত লিস সারাখছি, খন্ড-১০, পৃষ্ঠা: ১৪৯।

৬ নং হাদীসঃ

হযরত বুরাইদা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন-

একজন বেদুঈন হুজুর এ পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র কাছে মুজিযা দেখতে চাইল, হুজুর এ পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেদুঈনকে এরশাদ করলেন ওই বৃক্ষটাকে বলো আল্লাহর রাসূল তোমাকে ডাকছেন, সে যখন বললো বৃক্ষ তার ডানে-বামে, সম্মুখে পেছনে ঝুকল তখন ওটার শিকড়গুলো ভেঙ্গে গেল। তারপর তা মাটি খোদাই করে শিকড়গুলো টেনে বালি উড়িয়ে হুজুর এ পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মুখে এসে দাড়াল এবং বলল আস্‌সালামু আলায়কা ইয়া রাসূলাল্লাহ! বেদুঈন বললো “আপনি তাকে আদেশ করুন যেন এটা ওখানে (উৎপত্তিস্থল) ফিরে যায়” তাঁর নির্দেশে ওটা ফিরে গেল এবং তার শেকড়গুলোর উপর গিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো। বেদুঈন বললো “আমাকে অনুমতি দিন আমি আপনাকে সিজদা করবো” তিনি এরশাদ করলেন, “যদি কাউকে সাজদাহ করার হুকুম দিতাম তাহলে স্ত্রীকে আদেশ দিতাম সে যেন তার স্বামীকে সাজদাহ করে।” বেদুঈন লোকটি আরজ করলো “হুযুর তাহলে আমাকে আপনার হস্ত ও পদদ্বয় মোবারক চুম্বন করার অনুমতি দিন” তিনি (নবীজী দঃ) তাকে অনুমতি প্রদান করলেন। (শিফা শরিফ) তিরমিযি, কিতাবুল আদাব, হাদিস নং ৩১৫৫, অধ্যায় ১৮। আহমদ ১৮৮১৪.

এ প্রসঙ্গে অনেক হাদীস শরীফ বর্নিত আছেঃ
হযরত ওয়াজে ইবনে যারে উনার দাদা হতে বর্ননা করেন, আর তিনি ছিলেন আব্দুল কায়েস গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন- আমরা যখন মদীনা শরীফে আসতাম, তখন আমরা আমাদের সাওয়ারী হতে তাড়াতাড়ি অবতরন করে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাত এবং পা মুবারকে চুম্বন করতাম।


দলীল—

  • √ মিশকাত শরীফ- কিতাবুল আদব- মুছাফাহ ও
    মুয়ানাকা অধ্যায়- হাদীস নম্বর ৪৬৮৮।
  • √ আবু দাউদ শরীফ-কিতাবুস সালাম-২য়
    খন্ড-৭০৯পৃষ্ঠা- হাদীস ৫২২৫ !
  • √ ফতহুল বারী ১১ খন্ড- ৫৭ পৃষ্ঠা !
  • √ মিরকাত শরীফ ৭ম খন্ড ৮০ পৃষ্ঠা।
  • √ বজলুল মাজহুদ ৬ ষ্ঠ খন্ড ৩২৮ পৃষ্ঠা।
  • √ এলাউস সুনান ১৭ তম খন্ড ৪২৬ পৃষ্ঠা
  • √ মুছান্নাফে আবী শায়বা ।
  • √ বায়হাকী শরীফ।
  • √ কানযুল উম্মাল শরীফ।
  • √ তাফসীরে তাবারী।
  • √ মায়ালিমুস সুনান।
  • √ আইনুল মা’বুদ
  • লি হল্লি মুশকালাতি সুনানী আবু
    দাউদ।
  • √ আশয়াতুল লুময়াত

পায়ে ধরে সালাম করা জায়েজ

কদমবুচি করা জায়েজ, পায়ে সালাম করাও যায়েজ প্রমাণ রয়েছে। কদমবুছি মানে পায়ে সালাম করাকেও বুঝায়। যেমন পায়ে হাত দিয়ে চুম্বন খাওয়া। নিজের পিতা-মাতাকে বা বুজুর্গ ব্যাক্তিকে পায়ে সালাম করা জায়েজ।

পায়ে সালাম করা কি শিরক হয়ে যায়?

আমাদের আধুনিক সম্ভ্যতায় পায়ে সালাম করাকে নিজের ব্যক্তিগত অহংকারের কারনে অনেকেই করতে চায় না আর এর সুযোগে কিছু মোল্লারা ফতুয়া দিয়েছে পায়ে সালাম করা শিরক। পায়ে সালাম করলে মাথা নত হয় তখন শিরক হয়ে যায়। এই শিরক ফতুয়া দেওয়ার পর সুবিধাভোগিরা তাদের মনের মত হওয়াতে ইসলামের সুন্দর একটি সম্মান সূচক পন্থা থেকে দূরে সরে গেছে।

এখন সমাজে পিতা-মাতা, বড় ভাই-বোন ও বুজুর্গব্যাক্তিদের মানুষ সম্মান করা ভুলে গেছে তাতেই সমাজের শান্তি শৃংখলা নষ্ট হচ্ছে।

ধরুন আপনার পকেট থেকে টাকা পড়ে গেল আপনি টাকা তুলতে গেলেন তখন যদি সামনে কুকুর থাকে তাহলে কি কুকুরের সামনে মাথা জুকানোর কারনে সেজদা হয়ে যাবে? নিশ্চয় না। আপনার উদ্দেশ্য ছিল টাকা উঠানোর, কুকুরের সামনে মাথা নত করার নয়। তেমনি পায়ে সালাম করার সময় মাথা জুকে গেলে সেজদা হয় না, আপনার উদ্দেশ্য সেজদা নয় বরং সম্মান ছিল।

কেউ যদি কদমবুসি করতে না চায় বা পায়ে সালাম করতে না চায় তাহলে গুনা হবে না। এটা যার যার ইচ্ছার উপর নির্বর করে।

তবে কেউ যদি খোদা দাবি করে তার সামনে মাথা নত করতে বলে সেক্ষেত্রে সেটা শিরক হয়ে যাবে।


আরো ভালভাবে কদমবুচি সম্পর্কে জানতে নিচের ভিডিও দেখুন-

কদমবুছি জায়েজ

কদমবুচি যায়েজ কিনা

আরো জানুন-

তথ্যসূত্রেঃ

m.somewhereinblog.net/mobile/blog/shaiyan/30317425

Quick Bangla

বাংলা তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট হিসেবে পরিচালিত এই সাইটটি। তাই বাংলায় অনেক ধরনের তথ্যই এখানে পেয়ে যাবেন। আশা করি সঠিক তথ্য বিষয়বস্তু জানতে পারবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

Adblock Detected

Please Turn off ad blocker