ইসলাম নলেজইসলামিক প্রশ্ন উত্তর

ফরজ নামাজের পর মোনাজাতের দলিল সহিহ হাদিসের আলোকে

এই পোষ্টে ফরজ নামাজের পর মোনাজাতের দলিল সহিহ হাদিসের আলোকে জানতে পারবেন। বিতর্ককারী ও ফেতনা সৃষ্টিকারীরা জবাব পেয়ে যাবেন।

সাহাবায়ে কেরামের জামানা থেকে আজ পর্যন্ত হাজার বছর ধরে ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করার নিয়ম চলে আসছে। এতে কেউ আপত্তি করেনি। ইমাম আবু হানিফা (রহ.), ইমাম মালেক (রহ.), ইমাম শাফেয়ি (রহ.) এবং ইমাম আহমদ (রহ.)-এর মতো অগণিত ফকিহ ও মুহাদ্দিসগণ গত হয়ে গেছেন। কোনো একজন ইমামও এ বিষয়ে আপত্তি করেননি।

কিন্তু এখন এই সময় এসে কিছু নামদারি প্রচার করছেন ফরজ নামের পর মোনাজাত করার দলিল নেই। মানে সহিহ হাদিসের আলোকে ফরজ নামাজের পর মোনাজাত নেই। তবে এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করব বা জানার চেষ্টা করব ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মোনাজাত করা যাবে কিনা, ফরজ নামাজের পর মোনাজাতের দলিল সহিহ হাদিসের আলোকে জানতে পারবেন।

ফরজ নামাজের পর মোনাজাতের দলিল সহিহ হাদিসের আলোকে

ফরজ নামাজের পর মোনাজাত করা মোস্তাহাব বা উত্তম।

এ ব্যাপারে হজরত মুহাম্মদের (সা.) উৎসাহ প্রদান সম্পর্কিত হাদিস নিম্নরূপ

*** আবু উমামা বাহেলি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করা হলো, কোন মুহূর্তের দোয়া অধিক কবুল হয়ে থাকে? রাসূল (সা.) বললেন, রাতের শেষাংশের দোয়া এবং ফরজ নামাজগুলোর পরের দোয়া। (জামে তিরমিজি, কিতাবুদ দাওয়াত, বাব. ৮, হাদিস : ৩৪৯৯, খ. ৫, পৃ. ১৮৮; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা, হাদিস : ৯৯৩৬)।

*** ইমাম তবারি (রহ.) হজরত ইমাম জাফর সাদিকের (রহ.) প্রতিবেদন সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, ফরজ নামাজের পর দোয়া প্রার্থনা করাটা নফল নামাজের পর দোয়া করার চেয়ে ওইরূপ উত্তম, যেরূপ নফল নামাজের চেয়ে ফরজ নামাজ উত্তম। এ বর্ণনাটি হাফেজ ইবনে হাজার তার ফতহুল বারির খ- ১১, পৃ. ১৪৫-এর মধ্যে এনেছেন। এ বর্ণনাটি হাসান স্তরের।

*** মুহাম্মদ বিন আবি ইয়াহইয়া বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইরকে (রা.) দেখলাম, তিনি এক ব্যক্তিকে সালাত শেষ করার আগেই দুই হাত উঠিয়ে দোয়া করতে দেখে বললেন, রাসূূলুল্লাহ (সা.) কখনও সালাত থেকে অবসর না হয়ে দুই হাত ওঠাতেন না। অর্থাৎ নামাজ শেষ করে তবেই দুই হাত তুলে মোনাজাত করতেন। মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন, খ. ১০, পৃ. ২৬৬, হাদিস : ১৭৩৪৫; মুজামুল কাবির লিত তবারানি, পৃ. ২২, খ. ১১; হাফেজ হাইছামি বলেন, ইমাম তাবরানি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন এবং এ হাদিসের রাবিরা নির্ভরযোগ্য।

*** সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করিম (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা লজ্জাশীল, দয়াবান। কোনো ব্যক্তি তার কাছে দুই হাত ওঠালে তিনি তা ব্যর্থ ও শূন্য অবস্থায় ফেরত দিতে লজ্জা পান। জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৫৬, হাদিসটি ইমাম তিরমিজি হাসান এবং শায়খ আলবানি সহিহ বলেছেন।

দুই হাত তুলে মুনাজাত করা জায়েজ সম্পর্কে হাদিস

*** সাহাবি হজরত মালেক ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, যখন তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে, তখন তোমাদের হাতের তালু দিয়ে প্রার্থনা করবে, হাতের পিঠ দিয়ে নয়। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৮৮, কিতাবুস সালাত, বাবুদ দোয়া, নাসিরুদ্দীন আলবানি বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ।

*** সালমান ফারসি (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা লজ্জাশীল ও দয়াবান, যখন কোনো মানুষ তাঁর দিকে দুই হাত ওঠায়, তখন তিনি তা ব্যর্থ ও শূন্যভাবে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান। জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৫৬, কিতাবুদ দাওয়াত, পৃ. ৫৫৬/৫ ইমাম তিরমিজি (রহ.) হাদিসটি হাসান বলেছেন; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮৬৫, কিতাবুদ দোয়া, বাবু রফইল ইয়াদাইন ফিদ দোয়া, আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন; সহিহ ইবনে হাব্বান, হাদিস : ৮৭৬, পৃ. ১৬০/৩।

সম্মিলিত মোনাজাত জায়েজ সম্পর্কে হাদিস

*** মুত্তালিব ইবনে আবি ওদায়াহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন, রাতের সালাত দুই রাকাত দুই রাকাত করে, প্রত্যেক দুই রাকাতে তাশাহুদ পড়বে, বিনীত হবে, অসহায়ত্ত প্রকাশ করবে এবং তোমার দুই হাত প্রভুর দিকে উঠিয়ে বলবে, হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করে দাও। যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, তার সালাত অসম্পূর্ণ। সুনানু আবি দাউদ : আল মাকতাবাতুল আশরাফিয়া, দেওবন্দ, খ. ১, পৃ. ১৮৩, আবু দাউদ শামেলা হাদিস : ১২৯৮, কিতাবুস সালাত, বাবু সালাতিন নাহার, পৃ. ৪০/২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩২৫, পৃ. ৪১৯/১, কিতাবু ইকামাতিস সালাত।

*** সাহাবি হজরত হাবিব ইবনে মাসলামা আল ফিহরি (রাঃ) যিনি মুস্তাজাবুদ দাওয়াত ছিলেন, তিনি সৈন্যদের অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দিলেন, যুদ্ধের ডঙ্কা বেজে উঠল, যখন শত্রুর মুখোমুখি হলেন তিনি বললেন, আমি রাসূলকে (সাঃ) বলতে শুনেছি, কিছু মানুষ যখন কোথাও একত্র হয়ে এভাবে দোয়া করে যে, একজন দোয়া করে এবং বাকিরা আমিন আমিন বলে, তবে আল্লাহ তায়ালা তাদের দোয়া কবুল করেন। আল মুজামুল কাবির লিত তাবরানি, খ. ৪, পৃ. ২৬, হাদিস : ৩৫৩৬; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ লিল হাহছামি, খ. ১০, পৃ. ১৭ হাদিস : ১৭৩৪৭, হাদিসটির সনদ সহিহ।

*** সাহাবায়ে কেরাম এরূপ বিভিন্ন হাজতের কথা উল্লেখ করে ফরজ নামাজের পরে সবাই একত্র হয়ে মোনাজাত করতেন। যেমন : এরকম একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে…। অতঃপর ফজরের নামাজের আজান হলো। তিনি সবাইকে নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর তিনি হাঁটু গেড়ে চারজানু হয়ে বসলেন, মুজাহিদরাও চারজানু হয়ে বসল। এরপর তিনি দোয়ার জন্য হাত ওঠালেন আর লোকেরাও হাত ওঠাল। আল বেদায় ওয়ান নেহায়া, ফি জিকরি রদ্দাতি আহলিল বাহরাইন ওয়া আওদিহিম ইলাল ইসলাম। খ. ৬, পৃ. ৩৪৭, দারুত তাকওয়া, কায়রো, মিসর; তারিখে তাবারি, জিকরু খবরি আহলিল বাহরাইন, খ. ২, পৃ. ২৮৮।

সহিহ হাদিসের আলোকে ফরজ নামাজের পর মোনাজাত

*** হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেন, একবার নবী (সাঃ) নামাজ শেষে সালামের পর হাত উঠিয়ে কেবলামুখী হয়ে বললেন, হে আল্লাহ ওলিদ ইবনে ওলিদ, আইয়াশ ইবনে আবু রাবিয়া, সালামা ইবনে হিশামসহ যেসব দুর্বল মুসলিম কোনোরূপ উপায় উদ্ভাবন করতে পারে না, কোনো পথ পায় না, তাদের কাফেরের হাত থেকে মুক্তি দাও। হাদিসটি গ্রহণযোগ্য। (তাফসিরে ইবনে কাসির খ. ১ পৃ. ১২৩)।

*** হজরত উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়ার সময় হাত উঠালে তা নামানোর আগে চেহারা মোবারকে মুছে নিতেন (জামেয়ে তিরমিজি ২/১৭৬, আল মুজামুল আওসাত লিত্তাবরানি ৫/১৯৭, হাদিস: ৭০৫৩)।এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেছেন, হাদিসটি সহিহ। বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) বলেন, হাদিসটি হাসান।

[হজরত উমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, এ হাদিসের মধ্যে স্পষ্টভাবে দোয়ার সময় হাত তোলার কথা উল্লেখ আছে। এতে বোঝা যায়, দোয়ার সময় হাত তোলা নবীজি (সা.)-এর সুন্নাত এবং দোয়ার শেষে হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মাসেহ করাও সুন্নাত।]

হাত তুলে দোয়া এবং মুখে মাসেহ করা

*** হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করার সময় হাতের তালু ওপর দিকে করো। হাতের তালুর উল্টো দিক করে প্রার্থনা করো না। যখন দোয়া করা শেষ হবে, দুই হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মাসেহ করো (আবু দাউদ ৫৫৩, আদ্দাওয়াতুল কবির লিল বায়হাকি, পৃ. ৩৯)।

*** রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়ম ছিল, ‘তিনি যখন হাত উঠিয়ে দোয়া করতেন, তখন নিজের হাত চেহারা মোবারকে ফেরাতেন’ (আবু দাউদ) (হাদিসটি মুহাদ্দিসিনের কাছে গ্রহণযোগ্য)।

ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা যাবে কি

ফরজ নামাজের পর দোয়া করা নবী করিম (সাঃ)এর তরীকা ও সূন্নত

নবী করিম (সাঃ) প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর দোয়া প্রার্থনা করতেন । নিম্নের এই হাদীস প্রমাণ-

নবী (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হলো কোন সময় বেশী দোয়া কবুল হয় ? তখন নবী (সাঃ) বললেন রাতের শেষ অংশের দোয়া এবং ফরজ নামাজের পরের দোয়া । -তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাই শরিফ, মেশকাত শরিফ

শেষ কথাঃ

ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা যেমন বাধ্যতামূলক নয়, তেমনি এটি বিদ’আতও নয়। বরং এটি একটি মুসতাহসান বা উত্তম কাজ। কেউ যদি স্বেচ্ছায় করে ভালো, না করলে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। কোরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে এটি একটি সুন্নাত আমল। এটিকে বিদ’আত বলার কোনো অবকাশ নেই। ফরজ নামাজের পর দোয়া করা হাদিসের ছয়টি নির্ভরযোগ্য কিতাব অর্থাৎ সিহাহ সিত্তার মাধ্যমে প্রমাণিত। অন্যদিকে দোয়ার সময় হাত তোলার কথাও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ নেই, যাতে ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করাকে হারাম কিংবা নিষেধ করা হয়েছে।

তাই আমাদের উচিত ফেতনা সৃষ্টি না করে বরং কিছু কিছু জায়গায় চুপ করে থাকা। যারা ইসলামের নামে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন তুলে থাকেন- এটা করা যাবে না এটা করা যাবে, এরকম বিশেষ আমলের ক্ষেত্রে তাদের যতই মনে হওক আলেম জ্ঞানী তবে তাদের থেকে দূরে থাকাই সাধারণ মুসলমানের জন্য ভাল। মনে রাখতে হবে ঈমানের বিষয়ে কোন সমাজতা থাকে না। ফেতনা সৃষ্টি করে ইসলামে থাকা যায় না।

??ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করার দলিল জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন-

ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত, আলাউদ্দিন জিহাদী

ফরজ নামাজের পর হাত তুলে সম্মিলিত মুনাজাত করা যাবে?

আরো পড়ুন-

তথ্য সূত্রেঃ

*অনলাইন

*kalerkantho.com/print-edition/dhormo/2014/03/28/66311

Quick Bangla

বাংলা তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট হিসেবে পরিচালিত এই সাইটটি। তাই বাংলায় অনেক ধরনের তথ্যই এখানে পেয়ে যাবেন। আশা করি সঠিক তথ্য বিষয়বস্তু জানতে পারবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

Adblock Detected

Please Turn off ad blocker