ইসলাম নলেজইসলামিক প্রশ্ন উত্তর

পীরকে বাবা বলা জায়েজ কোরআন হাদিস থেকে দলিল

এই পোষ্টের মাধ্যমে পীরকে বাবা বলা জায়েজ কোরআন হাদিস থেকে দলিল জানতে পারবেন। আশা করি যাদের মনে এই প্রশ্ন আছে তারা উত্তর পেয়ে যাবেন।

আপনার মনে যদি প্রশ্ন থাকে পীরকে বাবা বলা কি জায়েজ? তাহলে আপনার জন্যই আজকের এই আর্টিকেলটি। এই লেখাটি পুরোপুরি পড়লে আশা করি পীরকে কেন বাবা ডাকা হয় জানতে পারবেন। সেই সাথে ইসলামীক দৃষ্টিতে ৮জনকে ”বাবা” বলে ডাকা যায় জানতে পারবেন।

পীরকে বাবা বলা জায়েজ কোরআন থেকে দলিল

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের এরশাদ করেছেন, “নবী পাক (সাঃ) মুমিনদের প্রাণের চেয়েও অধিকতর
নিকটবর্তী এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের (মুমিনদের) মাতা।” [সুরা আহযাব ৬নং আয়াত]

সুতরাং, নবী সঃ এর স্ত্রী মুমিনদের মাতা হলে, নিঃসন্দেহে নবীগণ মুমিনের ‘বাবা’। এই পিতৃত্বের সাথে রয়েছে আধ্যাত্মিক ও রুহানী সম্পর্ক।

পবিত্র কোরআনের বলা হয়েছে- “হজরত ইব্রাহিম আঃ তোমাদের (মুসলমানদের) জাতির পিতা”। [সুরা হজ্ব ৭৮নং আয়াত]

তাই কোরআনের ঘোষনায় ইব্রাহিম আঃ কেও বাবা বলা যাবে।

আউলিয়া কেরামগণ (পীর মাশায়েক) নবীগণের পরবর্তী দ্বীনের হেদায়েতকারী ও ওয়ারিশ। তাই তাঁদেরকেও বাবা বলা কোরানের দৃষ্টিতে জায়েজ।

ইসলামীক দৃষ্টিতে কতজনকে বাবা বলে ডাকা যাবে?

আপন পীরকে বা মোর্শেদকে অথবা ধর্মীয় শিক্ষাগুরুকে বাবা বললেই কিছু লোক তিরস্কার ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেন। এই জন্যে এই অধ্যায়ে বাবা কয় শ্রেণী সে বিষয়ে আলোচনা করব।
জেনে রাখা দরকার যে, বাবা বা পিতা মোট আট শ্রেণীর হয়ে থাকে। এই আট শ্রেণী পিতাকেই “বাবা’ বলে সম্বোধন করা জায়েয।

আর তা কুরআন হাদিস মোতাবেক প্রমানিত। নিচে লক্ষ্য করুনঃ

ইসলামীক দৃষ্টিতে ৮জনকে ”বাবা” বলে ডাকা যাবে

১। হযরত মুহাম্মদ সাঃ, সৃষ্টি জাতির পিতা, হাকিকী পিতা।

২। হযরত আদম আঃ, মানবজাতির পিতা।

৩। ইব্রাহিম আঃ, মুসলমান জাতির পিতা।

৪। নূহ (আঃ), শরিয়তের পিতা, তিনি আব্দুল গাফ্ফার (তাফছিরে রুহুল বয়ান)।

৫। তিনি হজরত আলী (রাঃ), মারেফাত হাছিলের পিতা।

৬। আপন মোর্শেদ, আপন পীর, ত্বরিকতের পিতা, মুরিদানগণের রূহানী পিতা।

৭। নিজের বাবা, জন্মদাতা পিতা (যিনি আপন মায়ের স্বামী)।

৮। সম্মানে ও তাজিম কিংবা স্নেহের কারণে কাউকে আব্বু বা বাবা বলা। এই শ্রেণীতেই আপনার স্ত্রীর বাবা অর্থাৎ শশুরকে বাবা ডাকা।

অনেকে বলবে তুমি যে তোমার পীর সাহেবকে “বাবা” ডাকো তোমার মাকে কি বিয়ে দিয়েছো পীরের কাছে? উনাকে বলবেন আপনি যে আপনার শশুরকে বাবা ডাকেন আপনার মাকে কি আপনার শ্বশুরের কাছে বিয়ে দিয়েছেন? এধরনের প্রশ্ন আসলে অজ্ঞতার প্রকাশ মাত্র। আর আমাদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে ইসলামে ফেতনার সৃষ্টি করছে কিছু নামদারী আলেম সমাজ।

আমরা অনেক সময় আমাদের বাচ্চাদেরকেও মহব্বত করে বা ভালোবেসে বাবা বলে থাকি, যে বাবা এদিকে আসো- বাবা এটা খাও। আবার অনেক সময় বৃদ্ধ বাবার বয়সি লোকের সাহায্য করলে বাবা সম্বোধন করে দোয়া দেন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকেন। অনেক সময় চাচাদেরও বড় বাবা ছোট বাবা বলে সম্বোধন করে থাকি। এসকল বাবা ডাকা সম্মানের কারনে হয় এবং মহব্বতের কারনে হয়।

আসলে আমাদের বুঝতে হবে বাবা বললেই কেউ নিজের আপন মায়ের স্বামী হয় না। জন্মদাতা পিতা একজনই।

পীর তার মুরিদানদেরকে সন্তানের স্নেহের বন্ধনে রাখেন এবং ভালোবাসেন বিধায় তাকে বাবা বলে থাকি। তিঁনির মাধ্যমে রুহানি ফয়েজ আসে, আপন পীর তার মুরিদানদের ইসলামের সঠিক পথ দেখান, মুরিদানের অভিভাবক। পীরকে বাবা ডাকা হয় সম্মান করনে, ইসলামের তরিকতের কারনে, রুহানী পিতার কারনে।

উল্লেখিত ৮ শ্রেণীর পিতার বিবরনঃ

১। (আবুল হাকিকাত) তথা হাকিকী পিতাঃ তিনি হযরত রাসূলে পাক (সাঃ)।
দলিলঃ রাসূলে পাক (সাঃ) বলেনঃ আমি সকল রুহের পিতা, আর আমি আল্লাহর নুর থেকে সৃষ্টি ও মুমিনগণ আমার নুরের ফয়েজ থেকে সৃষ্টি (তাফছিরে রুহুল বয়ান, ২য় খন্ড, ৩৭১ পৃঃ)।
নবী মু‘মিনের জানের চেয়েও নিকটে আর নবীর স্ত্রীগণ মু‘মিনের মা এবং তিনি মু‘মিনদের পিতা (তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ১ম খন্ড, ৫৭ পৃষ্টা, মুস্তাদ্রাকে হাকেম, ৪র্থ খন্ড, ১৩৩৫ পৃঃ হাদিস নং ৩৫৫৬; বায়হাক্বী সুনানে কুবরা, হাঃ নং ১৩১৯৮) হাদিসের সনদ সহি।
যেহেতু নবীজি সকল সৃষ্টির মূল এবং নবীজির উছিলায় সব কিছু সৃষ্টি হয়েছে সেহেতু তিনি সব কিছুর রুহানী ভাবে হাকিকী পিতা।

২। (আবুল বাশার) তথা মানব জাতির পিতা, তিনি হযরত আদম (আঃ)। বাবা আদম (আঃ) যে আদি পিতা এ ব্যাপারে কারোও কোন দ্বিমত নেই্।
দলিলঃ তোমাদের বাবা ‘আদম’কে আমি জমীনের মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি (তাফছিরে মাজহারী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৭৩পৃঃ)।
সুতরাং হজরত আদম (আঃ) আমাদের আদি পিতা।

৩।(আবু লি মুছলীম মিল্লাত) তথা মুসলীম জাতির পিতা তিনি হজরত ইব্রাহিম (আঃ)।
দলিলঃ তোমাদের (মুসলীমদের) জাতির পিতা ইব্রাহিম আর সেই তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলমান (আল কোরআন)। সুতরাং মুসলমানদের জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আঃ)।

৪। শরিয়তের পিতা তিনি আব্দুল গাফ্ফার আর্থাৎ নূহ (আঃ) (তাফছিরে রুহুল বয়ান)।
পূর্ণাঙ্গ শরিয়তের প্রবর্তন হয় সর্ব প্রথম হজরত নূহ (আঃ) এর জামানায় তাই তাঁকে শরিয়তের পিতা বলা হয়।

৫। (আবু লিতাহছিলুল মারেফাত) তথা মারেফাত হাছিলের পিতা, তিনি হজরত আলী (রাঃ)।
দলিলঃ রাসূলে পাক (সাঃ) বলেন, আমি এলেমের (এলমে মারেফাতের) শহর হজরত আলী (রাঃ) তাঁর দরজা (হাকেম শরিফ, ৫ম খন্ড, মেসকাত শরিফ, মেরকাত, ১১তম খন্ড, জামেউছ ছাগীর, ১ম জিঃ মাকাছিদুল হাছানাহ, ৯৭ পৃঃ।
সুতরাং ইল্মে মারেফাতের শহরে প্রবেশ করতে হলে হজরত আলী (রাঃ) তার দরজা। যে এলেম (মারেফাত) অর্জন করতে চায় তাহলে সেই দরজা হয়েই অর্জন করতে হবে। (মুস্তাদরাকে হাকেম, ৫ম খন্ড, ১৭৪৪ পৃঃ; মেরকাত শরহে মেসকাত, ১১তম খন্ড)।

৬। আবুত ত্বারিকাত তথা ত্বরিকতের পিতাঃ তিনি আপন মোর্শেদ বা আপন পীর।
দলিলঃ আর যাকে পথভ্রষ্ট বা ত্বরিকাভ্রষ্ট করি সে কোন ওলীকে মোর্শেদ হিসেবে পাবেনা। (সূরা কাহাফ, ১৭ নং আয়াত)।

‘পথ’ শব্দটাকে আরবীতে বলা হয় ‘ত্বরিকা’। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, যে পথভ্রষ্ট তথা ত্বরিকাভ্রষ্ট তার কোন মোর্শেদ নেই। তাহলে বুঝা যায় সঠিক পথ বা সঠিক ত্বরিকার জন্য মোর্শেদে কামেল এক মাত্র উপায়, কারণ সঠিক পথের জন্য মোর্শেদে কামেল তেমন, যেমন সন্তানদের কল্যাণের জন্য তার পিতা। এই কারণে আপন মোর্শেদকে ত্বরিকতের পিতা বলা হয়।

৭। (আবুল ওয়ালাদ) তথা জন্মদাতা পিতা। নিজের জন্মদাতাই এই শ্রেণীর পিতা।

৮। (আবু লিত তাজিম ওয়া তাক্বরীম) তথা সম্মানে ও তাজিম কিংবা স্নেহের কারণে কাউকে আব্বু বা বাবা বলা। এই শ্রেণীতেই পরেন শশুর মশাই। শশুরকে পিতার মত সম্মানী বলেই বাবা বলা হয়। নিজের ছেলেকে আব্বু বলা, ছোট বাচ্চাদেরকে মুরব্বীরা ‘বাবা’ বলে ডাক দেওয়া, রিক্সা ড্রাইভারকে আরোহীগণ ‘বাবা আস্তে চালাও’ বলা, দাদার পিতাকে ‘বড় আব্বা’ বলা ইত্যাদি এগুলো এই স্তরের অন্তর্ভুক্ত এই স্তরের অন্তর্ভুক্ত।
যদিও তাঁরা পিতা নয় তবুও সম্মান, তাজিম ও স্নেহের কারণে পিতা বলা হয়।

পীরকে বাবা বলা জায়েজ

শেষ কথাঃ

আশা করি পীরকে বাবা ডাকার দলিল পেয়ে গেছেন। আপন পীরকে বাবা বলা ফরজ, ওয়াজিব কোনটিই নয় বরং ইহা একটি আদব। কথায় আছে আদবে আউলিয়া আর বেয়াদবে দেওলিয়া। পীর তার মুরিদানদেরকে সন্তানের মত করে ভালবাসেন ও স্নেহের বন্ধনে রাখেন তাই তিনিকে বাবা বলা হয়ে থাকে। তিঁনির মাধ্যমে তরিকতের জ্ঞান হাসিল হয়, ইসলামের জ্ঞান হাসিল হয় ও রুহানি ফয়েজ আসে। যখন কারো ইসলামের সঠিক সত্য বাবা না থাকে তখন সে বিপথগ্রস্থ হয়, একেকজন আলেম একেক পথ দেখায় ইসলামের, মানুষদের গুমরাহি ও ফেতনার দিকে নিয়ে যায়। যার কারনে দেখবেন যাদের কপালে কামেল খাঁটি সত্য পীর নাই তারাই বেশি ফেৎনা সৃষ্টি করছে আর ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

ইসলামের ভবিষ্যৎবানী গুলো আমাদের সবার খেয়াল রাখা দরকার, যেমন- * ইসলামে ৭৩টা দল হবে আর একটি মাত্র দল সঠিক হবে। * শেষ জামানায় মসজিদ থাকবে জাকজমকপূর্ণ ও নামাজি থাকবে কিন্তু তাদের ভিতরে ঈমান থাকবে না। * ইসলামে নতুন নতুন কথা আসবে যেগুলো কেউ কোনদিন শুনেনি। * একটা সময় ঈমান রাখা আর হাতে আগুন রাখার মত হবে। এরকম অনেক ভবিষ্যতবাণী আছে যেগুলোর মাধ্যমে আমাদের বুঝতে হবে শেষ জামানায় আলেমরা ফেতনা সৃষ্টি করবে ও মানুষদের ঈমান হারা করবেন এবং নিজেরাতো ঈমান হারা হয়েছেনই।

আমাদের উচিত যারা এসব ছোট ছোট বিষয় নিয়ে ফেতনা সৃষ্টি করে তাদের থেকে দূরে থাকা। ইসলামে ঈমান আগে তারপর আমল। ঈমান বিহীন আমলের কোন মূল্য নেই।

*** বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব বলেন- “খোদাকে পাওয়ার ইচ্ছা থাকলে কোনো কামেল পীর তালাশ করে নাও! কেননা, কামেল পীরের সাহায্য ব্যতিরেকে জীবনভর পরিশ্রম করলেও আল্লাহর সন্ধান পাবে না”। “পীরের ভালোবাসা ভিতর দিয়া, পীরের মহব্বতের ভিতর দিয়া আল্লাহর উপর মহব্বত পয়দা হয়”।***

আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের ফেতনা ফেসাদ থেকে মুক্ত করে, কামেল মোকাম্মেল আল্লাহর ওলী খাঁটি পীরের ছত্রছায়া পাওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

পীরকে বাবা বলা কি জায়েজ

আরো পড়ুন-

তথ্য সূত্রেঃ

sufibad24.com/post/7255/

Quick Bangla

বাংলা তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট হিসেবে পরিচালিত এই সাইটটি। তাই বাংলায় অনেক ধরনের তথ্যই এখানে পেয়ে যাবেন। আশা করি সঠিক তথ্য বিষয়বস্তু জানতে পারবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

Adblock Detected

Please Turn off ad blocker