বানর ও মানুষের সৃষ্টি নিয়ে কোরআন হাদিস বিজ্ঞানের প্রমাণ
এই পোষ্টের মাধ্যমে বানর ও মানুষের সৃষ্টি নিয়ে কোরআন হাদিস বিজ্ঞানের প্রমাণ জানতে পারবেন। আশা করি ডারউইন মতবাদের উত্তর পেয়ে যাবেন।
আজকের আলোচনা করব মানুষের উৎপত্তি কোথা থেকে, বানরের হওয়ার ইতিহাস, বানর থেকে মানুষের সৃষ্টি, বানর থেকে মানুষ ইসলাম কি বলে এবং বানর থেকে কি মানুষ হয়েছে কোরআন হাদিস বিজ্ঞান কি বলে। মানুষ বানর থেকে এসেছে কে বলেছে? এই আলোচনায় প্রমাণ করব বানর থেকে মানুষ হয়নি বরং মানুষ থেকেই মানুষ হয়েছে এবং বানর থেকে বানর হয়েছে। ডারউইনের মতবাদ ভুল ছিল এটা এক সময় কিছু মানুষ ভুল জানত বরং বিজ্ঞানই প্রমাণ করেছে মানুষ থেকেই মানুষের উৎপত্তি। বানর থেকে মানুষ হওয়ার ছবি যেটি দেখানো হয় সেটিও ভুল।
বানর ও মানুষ সৃষ্টি নিয়ে রাসুল সাঃ এর হাদিস
মানুষ সৃষ্টির পূর্বেই কি বানর ছিল নাকি মানুষ সৃষ্টি করার পরে বানরকে সৃষ্টি করা হয়েছে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম কে এক সাহাবী প্রশ্ন করেছেন- ইয়া রাসুল আল্লাহ দাউদ আলাইহিস সালামের সময় কিছু অভিশপ্ত মানুষকে আল্লাহ তা’আলা বানর বানিয়ে দিয়েছিলেন, ওই মানুষগুলোর বংশধর কি বর্তমান পৃথিবীর সকল বানর? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই প্রশ্নটির উত্তর জানার পূর্বে হযরত দাউদ আলাই সালাম এর কোন কওম কে বানর বানানো হয়েছিল আর কি অপরাধে বানর বানানো হয়েছিল তা আমাদের সংক্ষেপে জানা উচিত।
বর্তমানে বাংলাদেশে একটি আলোচনা সমালোচনা খুবই চলছে তা হচ্ছে বানর থেকে মানুষ সৃষ্টির যে ডারউইন মতবাদ সেটা নিয়েও আজকে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন- হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের কাওমির মধ্যে ৭০ হাজার মানুষ সমুদ্রের তীরবর্তী ইলাহ নামক একটি অঞ্চলে বসবাস করত আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে দুনিয়াবী অনেক নেয়ামত দিয়েছিলেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ওই সমুদ্র তীরে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মাছ ধরা পড়ত। জাল বিছালিই টনের টন মাছ উঠে আসতো এবং সেখানের জেলেরা অনেক ধনী ছিল। দাউদ আলাই সাল্লাম এর সুরেলা কন্ঠের আওয়াজ শোনার জন্য শনিবার দিনে মাছ এসে সমুদ্রের তীরে ভিড় করতো। আল্লাহতালা হুকুম জারি করলেন ওই একটি দিন মানে শনিবার দিনটাতে কোন মানুষ বা জেলে সমুদ্র তীরে মাছ ধরতে পারবে না। কেননা এই মাখলুকেরা আল্লাহর নবীর সুরেলা কন্ঠে আওয়াজ শোনার জন্য বা কালামে পাক শোনার জন্য তারা এখানে আসছে।
তো শয়তান ওই জেলেদেরকে পথভ্রষ্ট করতে থাকলো। শয়তান বোঝালো দেখো শনিবার দিন সবচেয়ে বেশি মাছ পাওয়া যায়। আর তোমরা কিনা এই সপ্তাহে ছয়টি দিন ধরে পরিশ্রম করছে। শনিবার দিনে মাছ ধরতে যখন দিচ্ছে না, তোমরা কৌশল করো, মাছগুলোকে বশির মধ্যে গোপনে শনিবার দিনে আটকে ফেলো অর্থাৎ তোমরা শুক্রবারে এমন জাল পেতে যাও অথবা বড়শি ফেলে যাও যাতে নিষিদ্ধ দিনের সব মাছ ধরা পড়ে থাকে। তোমরা রবিবারে সেগুলো উঠিয়ে নিও। তো সেই কাওমের কিছু সংখ্যক মানুষ ছিল যারা খুব ভাল মানুষ ছিল, যারা অত্যন্ত নেককার। তারা শয়তানের এই প্ররোচনার বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে পানা চাইল, তারা বলল আমরা বিতাড়িত শয়তানের হাত থেকে পানা চাই, আমরা আল্লাহর নবীর নাফরমানি করতে চাই না, আমরা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা হতে চাই। কিন্তু অধিকাংশই তার নাফরমানী করলো। আল্লাহর নবী বললেন যারা শনিবার দিন মাছ ধরেছ অথবা মাছ ধরার জন্য আল্লাহর সাথে কৌশল অবলম্বন করেছো, অবশ্যই আল্লাহতায়ালা তোমাদের আযাব দিবেন।
এই কথা শুনে তারা হাসি ঠাট্টা করে বললো হে নবী দাউদ আরে বাদ দাও তো তোমার এই সকল কিচ্ছা কাহিনী কোন আজাব আজব কিছুই হবে না। তারা হাসি মশকরা করল, এদিকে যারা দ্বীনদার ছিল তারা জেলেপল্লীতে একটা বড় দেয়াল তৈরি করে দেয়ালের একপাশে সবাই একত্রিত হলো এবং আল্লাহর কাছে অনবরত প্রার্থনা করতে থাকলো কেননা দাউদ আলাই সাল্লাম তাদেরকে পূর্বকার নবী নূহ আলাইহিস সাল্লাম এবং সাবুদ আলাইহিস সালামের কওমের সেই আজাবের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন সুতরাং সেই দ্বীনদাররা আজাব আসার পূর্বেই আল্লাহর কাছে পানা চাইতে শুরু করলো। বললো হে আল্লাহ কিছু সংখ্যক অপরাধী এবং সীমালংঘনকারীদের জন্য আমাদের উপর বিপদ আপদ দিবেন না, আমরা আপনার কাছে পানাহ চাই, আল্লাহু আকবার।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বড় ধরনের কোন আজাব দেননি বরং সেই দেয়ালের অপর পাশে যেই সকল পথভ্রষ্ট এবং আল্লাহর নিয়ম অমান্যকারী জেলে ছিল এদের প্রত্যেককে পরের দিন বানরের রূপান্তর করা হয়েছিল। যখন সকাল হলো তখন নেককার ব্যক্তিরা লক্ষ্য করল যে প্রাচীরের ওপার থেকে কোন প্রকার আওয়াজ আসছে না। তারপর তারা লক্ষ্য করল প্রাচীরের ওপাশে থাকা সমস্ত ব্যক্তিরা বানরে পরিণত হয়ে গেছে। এমনকি তারা বানরের মতো আচার আচরণ করতে শুরু করলো। তারপর নেককার ব্যক্তিরা প্রাচীরের ওপাশে থাকা তাদের আত্মীয়দেরকে তাদের পরনের কাপড় দেখে চিনতে পারল, তাদের চেহারা দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না। কেননা বানরের গায়ে এই সকল জামা কাপড় ছিল তারপর তারা চিৎকার করতে থাকলো এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চাইতে থাকল কিন্তু যে সকল সীমালংঘনকারীদেরকে আল্লাহ একবার আজাবে পতিত করে ফেলেন সেইখান থেকে আর কোন ভাবে ফেরত আসার সুযোগ থাকে না। রেওয়াতে এসেছে সাজা প্রাপ্ত ইয়াহুদীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ১২ হাজারের মতো আর এই ১২০০০ মানুষ যারা বানর হয়ে গিয়েছিল। তারা কিছুই খেতে পারছিল না এবং যার কারণে তিনদিন পর তারা এই আজাবের কারনে ধ্বংস হয়ে গেল।
বানর ও মানুষের সৃষ্টি
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এই হাদিসটি বর্ণনা করার পর সেই সাহাবীকে বললেন, সাহাবীর নাম ছিল আব্দুল্লাহ বিন মাসুদ, আল্লাহ রাসুল সাঃ বললেন হে আব্দুল্লাহ বিন মাসুদ, তুমি কি বুঝতে পেরেছ যারা বানর হয়েছিল তারা আজব প্রাপ্ত হয়ে বানর হয়েছিল এবং তিন দিনের মাথায় তারা পৃথিবীতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। মনে রেখো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যখন কোন বংশের উপর আজাব পাঠিয়ে দেন তখন সে জাতি আর সামনের দিকে এগিয়ে যায় না। তাদের পক্ষে আর বংশবিস্তার সম্ভব হয় না বরং তারা কিছু সময়ের মধ্যে একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়। মূলত যারা ভালো মানুষ ছিল তাদের দোয়ার কারণে আল্লাহ শুধুমাত্র পথভ্রষ্টদের স্পেসিফিক ভাবে আজাব দিয়েছিলেন। আর ভালো মানুষ অর্থাৎ দেয়ালের আরেক পাশে থাকা ভালো মানুষগুলোকে রক্ষা করেছিলেন। আর বর্তমানে তোমরা যে সকল বানর দেখছো এরা পৃথিবীর আদি লগ্ন থেকে উপস্থিত আছে।
ডারউইন মতবাদের উত্তর
এবার আমরা উত্তর দেই, সেটা হচ্ছে ডারউইনের মতবাদ, মানুষ ধীরে ধীরে বানর থেকে সৃষ্টি হয়েছে মতবাদের। মানবজাতির পূর্বপুরুষ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আবির্ভূত হয়।
ডারউইনের এই মতবাদ এতদিন বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ানো হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক জর্জিয়ার দামিনিছে ১৮ লাখ বছরের পুরনো মানুষের মাথার খুলির উপর গবেষণা করে। সেখানে জানা গেছে যে, আমাদের আদি পুরুষ ও আদি মাতা একজনই। সায়েন্স সাময়িকীতে এটা প্রকাশিতও হয়েছে। গবেষক রেবেকা এশিয়া আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে ১৪৭ জন মহিলার গর্ভফুল বাচ্চা হবার সময় সংগ্রহ করেন। তারপর বিশেষ প্রক্রিয়ায় তা থেকে এমন এক ধরনের ডিএনএ বের করে আনেন যা শুধু মা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে আসে। এই ডিএনএ বিশ্লেষণ করে তিনি লক্ষ্য করেন যে, এক মা থেকে সমগ্র মানবজাতির উৎপত্তি। আবার মানব কোষের ওয়াই ক্রোমোজোম পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, মানুষের আদি পিতাও একমাত্র একজনই।
আজকের দুনিয়ায় যত পুরুষ আছে তাদের সবার ওয়াই ক্রোমোজোম এসেছে একজন পুরুষ থেকে। তিনি হচ্ছেন হযরত আদম আলাইহিস সালাম।
সুতরাং এই পৃথিবীতে বর্তমান বিজ্ঞান ১০০ ভাগ নিশ্চয়তার সাথে বলছে, পুরো পৃথিবীর সকল মানুষ, পুরুষ মহিলা সবাই একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে এসেছে। এটা আজ বিজ্ঞানের দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত সত্য। সুতরাং এই পুরনো ডারউইনের মতবাদ কোনভাবেই টিকে না।
বানর থেকে মানুষ ইসলাম কি বলে
আল্লাহ বলেন, হে মানবজাতি তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো যিনি একজন থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার সঙ্গিনী এবং তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। -সূরা নিসা আয়াত-১।
এতদিন আধুনিক ও প্রগতিশীল দাবিদার সেকুলাররা ডারউইনের বানর তত্ত্ব দিয়ে কোরআনকে ভুল প্রমাণের চেষ্টা করত কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান তাদের মুখে কালি মেখে দিয়েছে।
আল্লাহ বলেন তারা কি দাবি করে যে কোরআন বানানো। আপনি বলুন- তোমরা যদি তোমাদের দাবিতে সত্যবাদী হও তাহলে অন্তত এই কোরানের মত একটা সূরা তৈরি করে নিয়ে এসো, আর এ ব্যাপারে আল্লাহ ব্যতীত যাদের সাহায্য লাগে সাধ্যমত তাদেরও ডেকে আনো। -সূরা ইউনুস আয়াত নাম্বার-৩৮।
আধুনিক বিজ্ঞান আজ স্বীকার করতে বাধ্য যে কোরআন হচ্ছে চিরন্তর নির্ভুল ও চূড়ান্ত সত্য। আল্লাহু আকবার।
বানর ও মানুষের সৃষ্টি ইসলাম কি বলে
”যিনি তার প্রত্যেক সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন।হাতে রুহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে দেন কান, চোখ ও অন্তঃকরণ। তোমরা তার সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।”(আস সাজদাহ -৭-৯)।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন।হযরত আদম(আ.) পৃথিবীর প্রথম মানুষ। হযরত আদম(আ) কে আল্লাহ তায়ালা মাটি থেকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার মধ্যে রুহ দিয়েছেন।মানুষ সমস্ত সৃষ্টিকুলের মধ্যে সুন্দর আকার আকৃতি দ্বারা গঠিত।
শেষ কথা হলোঃ
বানর থেকে মানুষের সৃষ্টি হয়নি বরং বানর থেকেই বানর হয়েছে আর মানুষ থেকেই মানুষ হয়েছে। ডারউইনের মতবাদ ভুল কোরআন হাদিস ও বিজ্ঞান থেকেই।
নিচের ভিডিওটি দেখুন-বানর থেকে মানুষ এই বক্তব্যের সুন্দর জবাব দিলেন সাইফুল আযহারী
আরো পড়ুন-
- শবে মেরাজ পালন করা জায়েজ কোরআন হাদিস থেকে
- রাসুল সাঃ হাজির নাজির কোরআন হাদিস থেকে দলিল
- ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা জায়েজ কোরআন হাদিস থেকে
- মিলাদ কিয়াম করা জায়েজ কোরআন হাদিস থেকে
- পীর ধরা জায়েজ কোরআন থেকে দলিল