ইসলাম নলেজইসলামিক প্রশ্ন উত্তর

মিলাদ কিয়াম জায়েজ কোরআন হাদিস থেকে

এই পোষ্টের মাধ্যমে মিলাদ কিয়াম করা জায়েজ কোরআন হাদিস থেকে জানতে পারবেন। আশা করি যাদের মনে এই প্রশ্ন আছে তারা উত্তর পেয়ে যাবেন।

নবীজিকে দাড়িয়ে সালাম দেওয়া, মিলাদ কিয়াম করা, নবীজি সাঃ এর সম্মানে দাড়ানো জায়েজ কিনা তা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে।

স্বয়ং আল্লাহ তাঁর রাসূল পাক (সা:) এর উপর মিলাদ পড়েন

মিলাদ আরবী শব্দ, এর অর্থ জন্মকাল। এককথায় বলতে গেলে বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর জন্মকালীন ঘটনাবলী উল্লেখ করা ও দরুদ পাঠ করাকে মিলাদ বলা হয়ে থাকে।

পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ বলেন-
“নিশ্চয়ই আল্লাহ স্বয়ং ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর উপরে দরুদ পাঠ করেন, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরাও তাঁর উপরে দরুদ পড় এবং শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ কর।” (সূরা আহযাব, আয়াত নং ৫৬)।

রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম বৃত্তান্ত ও গুণকীর্তন পেশ করার নামই হলো মিলাদ। মিলাদ অর্থ নবীজি (সাঃ) এর উপর দরুদ ও সালাম পেশ করা। পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা দিয়েছেন: সূরা আজহাব ৫৬ নং আয়াতে, সেটাই করা হয়।

সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন শরীফের কোথাও বলেননি আমি নামাজ পড়ি, আমি রোজা রাখি, আমি হজ করি, আমি যাকাত দেই, হে মুমিনগণ তোমরাও কর। বরং এটা বলেছেন আমি নবীর উপর দরুদ পাঠ করি হে বিশ্বাসীগণ তোমরাও তাঁর উপর দরুদ পড়।

আল্লাহ তায়ালা একটা কাজ করেন তা হলো নবীর উপর দরুদ পাঠ করেন। আমরাও মিলাদের মাধ্যমে রাসুল (সাঃ) এর উপর দরুদ পাঠ করি।

রাসূলে করিম সাঃ নিজেই মিলাদ পালন করেছিলেন

১। পবিত্র হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি নবীজীকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আপনি কেন প্রতি সোমবারে রোযা রাখেন? প্রতি উত্তরে নবীজী বললেন, আমি ঐ তারিখে শুভ আগমন করেছি এবং ঐ তারিখেই আমার ওপর পবিত্র কোরআনের (প্রথম পাঁচ আয়াত) নাযিল হয়৷
[সহিহ মুসলিম শরীফ- কিতাবুস সওম হাদীছ নং ১১৬২ ও আরাবী মেশকাত শরীফ ১৭৯ নং পৃষ্টা]

২। পবিত্র হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে

হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একজন সাহাবী হুজুর পাক সাঃ এর খেদমতে আরজ করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ, ইয়া হাবিবাল্লাহ আমার মাতা পিতা আপনার নূরের পাক কদমে কুরবান হোক। আপনি প্রতি সোমবার রোজা পালন করেন কেন? জবাবে হুজুর পাক সাঃ বলেন,“ এই দিনে আমি প্রেরিত হয়েছি এবং পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ এই দিনেই আমার উপর নাজিল হয়েছে।”


দলিল

  • সহীহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, ৮১৯ পৃষ্ঠা,
  • বায়হাকী: আহসানুল কুবরা,৪র্থ খন্ড,২৮৬ পৃষ্ঠা,
  • মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল,৫ম খন্ড,২৯৭ পৃষ্ঠা,
  • মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,৪র্থ খন্ড, ২৯৬ পৃষ্ঠা,
  • হিলিয়াতুল আউলিয়া,৯ম খন্ড, ৫২ পৃষ্ঠা,
  • মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদিস নং-২৯২৬
  • সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস নং-২১১৭
  • সুনানে আবী দাউদ,হাদীস নং-২৪২৮

সাহাবায়ে কিরামগনও মিলাদ কিয়াম করতেন

মিলাদ কিয়াম করা জায়েজ হাদিস শরীফ থেকে দলিল দেওয়া হলোঃ

আমরা যেভাবে করে মিলাদ মাহফিল আয়োজন করে থাকি তা সাহাবায়ে কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের যামানাতেই ছিল।

১. হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা তাঁর নিজ গৃহে সমবেত সাহাবীগণকে আল্লাহ পাক এর হাবীব রাসুলে পাক (সাঃ) এর বিলাদত শরীফ-এর ঘটনা সমূহ শুনাচ্ছিলেন।

এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশী প্রকাশ করেছিলেন এবং আল্লাহ পাক এর প্রশংসা তথা তাসবীহ তাহলীল পাঠ করছিলেন। সাথে সাথে আল্লাহ পাক এর হাবীব হুজুর পাক সাঃ এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেথায় উপস্থিত হলেন। (নবী করিম সাঃ যখন উপস্থিত হলেন, সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে অর্থাৎ ক্বিয়াম শরীফ করে সালাম পেশ করলেন এবং আসনে বসালেন)। তিঁনি লোকজনের মিলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।”
[সুবুলুল হুদা ফি মাওলিদে মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী, পৃষ্ঠা- ৩৫৫]

২. হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

মিশকাত শরীফের ৪১০ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত হাসসান (রাঃ) এর জন্য মসজিদে নববীতে একটি মিম্বর স্থাপন করলেন। তিনি উহার উপর দাঁড়িয়ে আল্লাহর হাবিবের পদমর্যাদা (গুণাবলী ও গৌরবময় জীবনী) সজোরে বয়ান করতেন। আল্লাহর হাবিব (তা শ্রবণ করে সন্তুষ্টচিত্তে) বলতেন, নিশ্চয়ই হাসসান যতক্ষণ হুজুরের গুণরাজী বয়ান করতে থাকেন ততক্ষণ আল্লাহ তা’য়ালা হযরত জিব্রাঈল (আঃ) দ্বারা তাঁর সহায়তা করতে থাকেন।’

[বুখারী শরীফ,তিরমিযী:২৮৪৬, মুসনাদে আহমাদ, হাকীমের মুস্তাদরাক ও মুসনাদে আবূ ইয়ালা]

উপরোক্ত হাদিস শরীফ দ্বারা সু-পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, প্রিয় নবীজি সাঃ এর পদ-মর্যাদাসূচক শ্লোক বা কবিতা পাঠকালে দণ্ডায়মান হওয়া (কিয়াম করা) সুন্নাতে সাহাবা।

হাদিসে কিয়াম নিষেধ করা হয়েছে কেন

আজমীদের মতো কিয়াম, যাহা তাদের রাজা বাদশার সম্মানে মূর্তিবৎ নতজানু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার মতো, এ কিয়াম অবশ্যই নিষিদ্ধ করেছেন, মূল কিয়ামকে নিষিদ্ধ করেন নি। হুজুর সাঃ এ কথা বলেন নি যে, তোমরা কিয়াম করো না বরং বলেছেন আজমীদের মতো অর্থাৎ পারস্যবাসী অনারবীদের মতো কিয়াম করো না।

যেমন হাদিস শরীফে বলা হয়েছে; তোমরা গরুর মতো পানি পান করো না। এর অর্থ হলো পানি পান কর, তবে গরুর মতো নয়। অনুরূপ হাদীসের অর্থ হবে কিয়াম করো তবে আজমী পারস্যবাসী অনারবীদের মতো নয়। হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার ভাষ্য নয়। এই অপছন্দ ছিলো হুজুরের বিনয় মূলক, নিষেধমূলক নহে।

মিশকাত শরীফের ৪০৩ পৃ: ৫ নং হাশিয়ায় উক্ত হাদীসে বর্ণিত কিয়ামের ধরন সম্পর্কে মোল্লা আলী কারী (রহ:) মিরকাত গ্রন্থে বর্ণনা করেন:- “ক্বাওলুহু লিজালিকা আয় লিকিয়ামিহিম তাওয়াজ্জুয়ান লিরাব্বিহী মুখালিফাতান লি আদাতি মুতাকাব্বিরিন” অর্থাৎ, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাগণের ঐ ধরনের কিয়ামকেই অপছন্দ করতেন যে ধরনের বিনয়মূলক কিয়াম আল্লাহর জন্য করা হয় বা অহংকারী ব্যক্তিদের জন্য যে ধরনের বিনয়মূলক কিয়াম করা হয়, ঐ ধরনের কিয়াম তিঁনি নিঁজের জন্য অপছন্দ করতেন ও বিরোধিতা করতেন।

হযরত মাবিয়া (রাঃ)- এর বর্ণিত হাদিস হুজুরের বেলায় প্রযোজ্য নয় বরং অহংকারী ও দাম্ভিক ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য। রাসূলের এ নিষেধ ছিলো শর্ত সাপেক্ষে অর্থাৎ মূর্তির মতো কিয়াম নিষিদ্ধ, মূল কিয়াম নিষিদ্ধ নয়।

বায়হাকী শরীফ থেকে মিশকাত শরীফের ৪০৩ পৃঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিঁনি বলেন, হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সাথে মসজিদে নববীতে বসে হাদিস বর্ণনা করতেন। অতঃপর তিনি যখন দাঁড়াতেন আমরাও তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়াতাম। এমনকি যতক্ষণ পর্যন্ত তিঁনি তাঁর কোনো বিবি ছাহেবার ঘরে প্রবেশ না করতেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা দাঁড়িয়ে থাকতাম।

আরো ভালভাবে জানতে নিচের ভিডিও দেখুন-

মিলাদ কিয়াম করা কি জায়েজ

আরো পড়ুন-

তথ্যসূত্রেঃ

omarfaruk.home.blog/2019/05/10/মিলাদ-ক্বিয়াম-সম্পর্কে-দ-4/

sufibad24.com/post/3113/

Quick Bangla

বাংলা তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট হিসেবে পরিচালিত এই সাইটটি। তাই বাংলায় অনেক ধরনের তথ্যই এখানে পেয়ে যাবেন। আশা করি সঠিক তথ্য বিষয়বস্তু জানতে পারবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

Adblock Detected

Please Turn off ad blocker