নামাজে বুকে হাত বাধার সহিহ হাদিস আছে কি? একটাও নাই
এই পোষ্টের মাধ্যমে নামাজে বুকে হাত বাধার সহিহ হাদিস আছে কি? একটাও নাই জানতে পারবেন। আশা করি যাদের মনে এই প্রশ্ন আছে তারা উত্তর পেয়ে যাবেন।
আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু হলো নামাজে বুকে হাত বাধার সহিহ হাদিস আছে কি এবং বুকের উপর হাত বাঁধা : বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করব। এখানে আর্টিকেলে আলোচনা করব নামাজে হাত বাধার সঠিক নিয়ম কোনটি। সর্বশেষে একটি ভিডিও দেওয়া থাকবে চাইলে সেখানেও মুফতি সাহেবের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন নামাজে বুকের উপর হাত বাধার দলিল আছে কি না। তবে বিভিন্ন পর্যালোচনা করে জানা যায় নামাজে বুকে হাত বাধার সহিহ হাদিস একটাও নাই।
নামাজে হাত বাধার নিয়ম
নামাজে বুকের উপর হাত বাধার কথা কোন সহিহ হাদীসে নেই, বরং নাভীর নীচে হাত বাধার কথা সহিহ হাদীস দ্বারা, সহিহ সুত্রে প্রমাণিত।
বুখারীর বুকের উপর হাত বাঁধার যে দলিল ব্যবহার করে
আহলে-হাদীসপন্থী নামাযের হাত বাধাঁর স্থান নিয়ে বুখারী শরীফের যে হাদীস উল্লেখ করেন। সে হাদিসটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
ইমাম বুখারী রহ. যে শিরোনামের অধীনে হাদীসটি এনেছেন তা হল- তথা ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা অনুচ্ছেদ। তারপর তিনি হাদীস এনেছেন- সাহাল বিন সাদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকদের নির্দেশ দেওয়া হত যে, নামাযে প্রত্যেক ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখবে। আবূ হাযিম রা. বলেন, সাহল হাদীসটি নবীজী সাঃ থেকে বর্ণনা করতেন বলেই জানি। ইসমাইল রা. বলেন, এ হাদীসটি নবীজী সাঃ থেকেই বর্ণনা করা হত। তবে তিনি এরূপ বলেননি যে, সাহাল নবীজী সাঃ থেকে বর্ণনা করতেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭০৭
এবার বলুন! এ হাদীসের কোথায় বুকের উপর হাত বাঁধার কথা আছে? কোন দূরবর্তী বা অস্পষ্ট ইঙ্গিতও তো এখানে নেই। তাহলে এটি বুকের উপর হাত বাঁধার দলিল হল কি করে? ইমাম বুখারী রহ. তো স্পষ্টভাবে এটাকে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখার দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। স্পষ্টতার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত বুখারী শরীফের অনুবাদটি দেখতে পারেন। -বুখারী শরীফ-২/১০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদীস নং-৭০৪
আসলে কথিত আহলে হাদীস ভাইদের দাবি অনুপাতে সহীহ কোন হাদীস বুকের উপর হাত বাঁধার ক্ষেত্রে পাচ্ছেন না।
নামাজে নাভির নিচে হাত বাধার দলিল
হযরত আলী রা: বলেন, দুই হাত নাভীর নীচে বাধা অবস্হায় রাখা সুন্নত। আর সাহাবী থেকে কোন বর্ণনা সুন্নত হিসেবে ( মিনাস-সুন্নাহ ) বর্ণিত হলে , তা ‘মরফু’ তথা নবীজী থেকে প্রাপ্ত বলে সাব্যস্ত হয় ।
সুত্র : সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৭৫৬, মুসনাদে আহমাদ খন্ড -১, পৃষ্ঠা ১১০।
চার মাজহাবের নামাজের পদ্ধতি
চার মাজহাবের কোনটিতেই বুকের উপর হাত বাধার কথা নেই !
চার মাজ হাবের সিদ্ধান্ত অনুসারে হাত বাধার বিধান :
১। হানাফী মাজ হাবে হাত বাধা সুন্নত, এবং সেটা নাভীর নীচে ।
২। শাফেয়ীদের নিকট হাত বাধা সুন্নত, আর নাভীর উপর ও বুকের নীচে বাধা মুস্তাহাব ।
৩। মালেকিদের কাছে হাত না বেধে তা ছেড়ে দেওয়া মুস্তাহাব ।
৪। হাম্বলীদের নিকট নাভীর নীচে বা নাভীর উপর উভয় স্হানেই হাত বাধা যাবে ।
নামাজে বুকে হাত বাধার সহিহ হাদিস আছে কি
বুখারি শরীফের হাদিস থেকে বুঝতে পারলাম, যে হাদিসটি তারা ব্যবহার করে থাকে সে হাদিসটি আসলে নামাজে বুকে হাত বাধার জন্য বলা হয়নি। এমনকি চার মাযহাবের কোন ইমাম এরকম নামাজের দলিল দেননি বা নিয়ম জানাননি। কিন্তু যারা বর্তমানে বর্তমানে এসব মতবাদ তৈরি করছে তারা ইসলামকে বিকৃত করার চেষ্টা করছে। তারা আরো কিছু হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে থাকে যা পর্যালোচনা করে জানা যায় সেগুলো সহিহ হাদিস নয়।
শেষ কথাঃ
কেউ বুকে হাত বাধলেই আমাদের কোন সমস্যা নেই। নামাজ কবুল করার মালিক আল্লাহ তায়ালা কিন্তু যারা আজকে বুকে হাত বাধা শিখাচ্ছে তারা শুধু মাত্র এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা বিভিন্ন কৌশলে ইসলামের সহিহ আকিদা গুলো থেকে সাধারণ মুসলমানদের দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। তাই আমাদের উচিত মাযহাবের ইমামদের সহিহ মতামতকে সামনে রেখে ইসলামের পথ অনুসরণ করা।
শেষ জামানায় ঈমান রাখা হাতে আগুন রাখার সমান হবে। শেষ জামানায় মসজিদ থাকবে মুসল্লি থাকবে কিন্তু ঈমান থাকবে না। একথাগুলো প্রিয় নবীজি সাঃ বলে গেছেন। এই কথা গুলো আমাদের চিন্তাভাবনা করে চলা উচিত। এত কষ্ট করে ইসলাম পালন করলেন কিন্তু শেষে অংকের সমাধান না হয় তাহলে কি কাজে লাগবে।
বুকে হাত বাধার নামাজ পড়া সহিহ হাদিস আছে কি ভিডিওটি দেখুন-
আরো পড়ুন-
- জানাজার নামাজের পর মুনাজাত করা জায়েজ প্রমাণিত
- ফরজ নামাজের পর মোনাজাতের দলিল সহিহ হাদিসের আলোকে
- পীরকে বাবা বলা জায়েজ কোরআন হাদিস থেকে দলিল
- ইসলামী বর্ষপঞ্জি, ইসলামি হিজরি বছরের গুরুত্বপূর্ণ তারিখ সমূহ
- রাসুল সাঃ হায়াতুন্নবী বা জিন্দা নবী কোরআন হাদিসের দলিল
তথ্য সূত্রেঃ
m.somewhereinblog.net/mobile/blog/uzair/29878107
fatwaarchive.com/fatwa/বুখারীতে-বুকের-উপর-হাত-বাঁধার-কোন-দলীল