ইসলাম নলেজইসলামিক প্রশ্ন উত্তর

কামেল পীর চেনার উপায় কুরআন হাদিস থেকে

এই পোষ্টে কামেল পীর চেনার উপায় কুরআন হাদিস থেকে জানতে পারবেন এবং আল্লাহর ওলীর পরিচয় সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা পাবেন।

পীর কাকে বলে?

পীর ফার্সি শব্দ, আরবি ভাষায় মুর্শিদ/আউলিয়া, মুহসেনিন, সাদেকিন, শায়েখ। পীর শব্দের বাংলা অর্থ: পথ প্রদর্শনকারী, অভিভাবক, বুযুর্গব্যাক্তি, ধর্মীয় জ্ঞানের মুরুব্বি, মুসলিম শিক্ষক, মহাপুরুষ।

কামেল পীর চেনার উপায়

* যিনি কামেল মোকাম্মেল পীর হইবেন, তিনির শরিয়ত ও মারেফতের পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকিতে হইবে। এবং এলমে লাদুন্নাতে তাঁর পূর্ণ অধিকার থাকিবে।

* শরিয়তের আদেশ নিষেধ পালন ও তদনুযায়ী কাজ করিবেন। শরিয়ত বিরোধী কাজ হইতে দূরে থাকিবেন। খোদাতায়ালাকে ভয় করিবেন ও মুত্তাকী হইবেন এবং পরহেজগার হইবেন।

* তাঁর মধ্যে এখলাস থাকতে হবে। লোক দেখানোর জন্য তিনি ইবাদত করেন না, বরং তিনি আল্লাহর মুহব্বতে এখলাসের সঙ্গে আমল করেন। আমল করেন কিন্তু এখলাস নেই, মুরিদদের দেখানোর জন্য যে শায়খ খুব নামাজ পড়েন, সে ব্যক্তি কামেল পীর হতে পারেন না। তাঁর ভেতরে এখলাস থাকতে হবে।

* যিনি কামেল পীর হইবেন তিনি লোভ শুন্য হইবেন। কেননা লোভী ব্যক্তি কখনো ফকির হইতে পারেন না।

* হাদিস শরীফে আছে- “যাহাকে দেখিলে আল্লাহতায়ালার কথা স্মরণ হয়, মনে ভয় আসে এবং ইবাদত বন্দেগীতে মন বসে, সেই প্রকৃত কামেল মুর্শিদ, আউলিয়া বা আল্লাহতায়ালার খাসবান্দা।

* কামেল পীর এর মধ্যে আল্লাহর কারামত প্রকাশ পাবে। মানুষ দলে দলে গিয়ে কামেল পীরের মাধ্যমে আল্লাহর অলৌকিক অনেক কার্যাদেশ উপলক্ষ্য করবেন।

* মাওলানা জালালউদ্দীন রুমি (রহঃ) বলেন: “তুমি যদি কোন আল্লাহর অলির নিকট বায়েত হও, তবে ৪০ দিবস তাঁর নির্দেশিত ওয়াজিফা আমল কর এবং নিজেকে তাঁর নিকট শপে দাও। যদি তুমি এ সময়ের মধ্যে আল্লাহর নূর (আল্লাহকে) দেখতে না পাও তবে দৌড়ে পালাও।”

বিশ্ব ওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব বলতেন শুনেছি- “কামেল পীর পাইতে গেলে আল্লাহর দরবারে অনেক কান্নাকাটি করতে হয়, অনেক অনেক ইবাদত বন্দেগী করতে হয়, তারপর অতি ভাগ্যগুনেই কামেল পীরের সন্ধান মেলে। এটা একটা আল্লাহপাকের খাস দয়া।

কামেল মুর্শিদ এর বৈশিষ্ট্য বা কামেল পীরের বৈশিষ্ট্য:

কামেল বা মোকাম্মেল পীরের ভিতর এই তিনটি গুন থাকা একান্ত অবশ্যক –

১. পীরের নিকট হতে ছবক সমূহ আয়ত্ত করা।

২. ফায়েজ হাছিল করা।

৩. মুরিদ দিগকে ফায়েজ পোঁছানোর ক্ষমতা থাকা।

পীর হওয়ার শর্ত বা কামেল পীরের কিছু সামাজিক বৈশিষ্ট:

* কামেল পীরের মধ্যে অলৌকিক কারামত থাকবে।

* তিনি ধর্মের সকল আহকামগুলো নিজে পালন করবেন ও অনুসারিদেরকেও করাবেন।

* তিনি ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক হবেন।

* গভীর রাতে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকবেন।

* ধৈর্য্যশীল, নিরহঙ্কারী হবেন।

* অন্যকে কটাক্ষ্য করবেন না।

* মানুষের প্রতি ভালো ব্যবহার ও আচরণ করবেন।

* কারো সঙ্গে রাগ করবেন না, অশোভন বাক্যও উচ্চারণ করবেন না।

* পরিমিত আহার করবেন, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন থাকবেন।

* তাঁর মুখনিঃসৃত প্রতিটি বাণী হবে কলব থেকে উদ্ভাসিত।

* তিনি মুছকি হাসবেন, স্বল্পভাষী হবেন।

* স্ত্রী-সন্তান ও আওলাদবর্গ সবার কাছে তিনি শ্রদ্ধার পাত্র হবেন।

* নিজ সন্তান-সন্তুতিকে আধুনিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিত করবেন।

* খুশবু ও খেজাব লাগাবেন। মানুষের নালিশ মনোযোগ সহকারে শুনবেন।

* নিজের পিতা-মাতার যত্ম নেবেন এবং কষ্ট লাঘব করবেন।

* মানুষের সুখে আনন্দ পাবেন ও দুঃখে পেরেশান হবেন।

কামেল পীর চেনার উপায় কুরআন থেকে

**“হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।” (সূরা : আত-তাওবাহ্, আয়াত: ১১৯)

**“অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত।” (সূরা : ইয়াসিন, আয়াত: ২১)

[কোরআনে আল্লাহপাক এই আয়াত গুলোর মাধ্যমে বুঝিয়েছেন ধর্মীয় শিক্ষক কারা হবেন বা কোন মানুষের অনুসরণ করতে হবে। কামেল মোকাম্মেল পীর আল্লাহর ওলী ব্যক্তি মিথ্যা বলবে না সত্যবাদী হবেন, কোন লোভ থাকবে না সুপথপ্রাপ্ত হবেন।]

কোরআনে পাকে আল্লাহর অলির পরিচয় আরো করিয়েছেন-

“স্মরণ কর, যেদিন আমি প্রত্যেক দলকে তাদের নেতাসহ আহবান করব, অতঃপর যাদেরকে তাদের ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে, তারা নিজেদের আমলনামা পাঠ করবে এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও জুলুম হবে না।” (সূরা : বনী-ইসরাঈল, আয়াত: ৭১)

“আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন। তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। আর আল্লাহ তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে মত্ত অবস্তায় ছেড়ে দিয়ে রাখেন।” (সূরা : আল আরাফ, আয়াত: ১৮৬)

কামেল পীর অনুসরণ কেন করব?

হাদিস শরীফে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এমন এক যুগ তোমাদের মধ্যে আসবে, সে যুগে হাতের ওপর জ্বলন্ত কয়লা রাখার যে কষ্ট তার চেয়ে বেশি কষ্ট হবে ঈমানের ওপর টিকে থাকা।’

পাপ ও শেরেকি গুনাহ হইতে বাঁচিবার জন্য এবং আল্লাহ তায়ালার রেজামন্দি হাছিলের উদ্দেশ্যে মুর্শিদ কামেলের সাহচর্য অনুসন্ধান করা আবশ্যক অর্থ্যাৎ নাফ্সের কুমন্ত্রণা ও শয়তানের ধোঁকা হইতে বাঁচিবার পথই মুর্শিদে কামেল।

আল্লাহর ওলী ও কামেল পীরের মধ্যে পার্থক্য কি?

কামেল পীর হওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে আল্লাহর ওলী হওয়া। আল্লাহর ওলী না হতে পারলে কামেল পীর হওয়া যায় না। আল্লাহর ওলী অনেকেই হতে পারে। তবে কামেল মোকাম্মেল হতে গেলে আল্লাহর ওলী প্রথমে হতে হয়। কামেল শব্দটির অর্থ মাদ্রাসায় পড়ানো হয় পরিপূর্ণ, আর পরিপূর্ণ মানে সত্য বা হক্কানী এই অর্থও বহন করে। তবে তরিকতের ভাষায় কামেল কথাটির আরো কিছু অর্থ বুঝে থাকে মানুষ, তা হলো কামেলীয়াতি থেকে কামেল শব্দটি ব্যবহার করে। কামেলীয়াতি মানে আল্লাহর কারামত প্রকাশ করাকে বুঝিয়ে থাকে। যার নেক নজর বা দৃষ্টিতে একজন চোরও মমিনে পরিনত হয়।

উদাহরণঃ বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ) এর ঘরে এক চোর চোরি করতে প্রবেশ করেছিল সে চোরকে তিনি আল্লাহর ইচ্ছায় আল্লাহর ওলীতে পরিনত করেছিলেন।

মোট কথা হলো যিনি কামেল পীর হবেন তিনি আল্লাহর ওলী হয়েই কামেল হবেন। কিন্তু পক্ষান্তরে আল্লাহর ওলী যেকোন ফরহেজগার ব্যক্তি হতে পারেন তবে তিনির মধ্যে আল্লাহর কারামতের মাধ্যমে মানুষের হেদায়েত প্রকাশ কমও হতে পারে। এখানে বুঝাতে চেয়েছি- আল্লাহর ওলীদের মধ্যে কিছু স্তর থাকে। একেকজনের ক্ষেত্রে একেকটা স্তর রয়েছে। এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে একেকজনের একেকটা দায়িত্বের উপর নির্ভর করে।

এখানে কথা হলো কামেল পীর চেনার উপায়ই হলো আল্লাহর ওলী চেনার উপায় আর কামেল পীর হওয়া মানেই আল্লাহর ওলীর পরিচয়।

অনেকেই পীর মানাকে জায়েজ বলে না

প্রশ্ন হলো অলি আউলিয়া কি ইসলাম তথা কোরআন সুন্নাহর বাইরের কোনো বিষয় যে এটা মানা হারাম, বেদাত, শিরক বা কুফরী হবে এগুলো শিখিয়ে থাকে? যারা ওলি আউলিয়া মানে না তারা বরং কুফরী করে। কোরআন ও সুন্নাহ স্পষ্টভাবে প্রমান করে ওলি আউলিয়া সত্য, এখন যারা ওলি আউলিয়া অস্বীকার করে তারাতো কোরআন ও সুন্নাহকে অস্বীকার করে, আর কোরআনের একটা আয়াত বা নূর নবীজি (সাঃ) এর একটা হাদিস যে অস্বীকার করবে সে সাথে সাথে কাফের হয়ে যাবে।

 ওলীআল্লাহগণ সম্পর্কে আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন, “সাবধান! নিশ্চয়ই যারা আল্লাহপাকের ওলী তাদের কোন ভয় নেই এবং চিন্তা-পেরেশানীও নেই।” [সূরা ইউনূছঃ ৬২]

ওলী আউলিয়া বিরোধিতা প্রসঙ্গে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ্ তায়ালা বলেন: যে ব্যক্তি আমার অলীর সাথে শত্রুতা করে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমার বান্দার প্রতি যা ফরয করেছি তা দ্বারাই সে আমার অধিক নৈকট্য লাভ করে। আমার বান্দা নফল কাজের মাধ্যমেও আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে। অবশেষে আমি তাকে ভালবেসে ফেলি। যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে এবং তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলাফেরা করে। সে আমার কাছে কিছু চাইলে, আমি তাকে তা দেই। সে যদি আমার নিকট আশ্রয় কামনা করে, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই। [বুখারী: ৬৫০২]

ভন্ড পীর কাকে বলে ও ভন্ড পীরের বৈশিষ্ট:

একদল ভন্ড পীর আছে, তারা ‘আমেল সিফলি আমলিয়াতের সাহায্যে জিন-পরী আবদ্ধ করিয়া ও কিছু বইপুস্তক পড়িয়া, পানি পড়া, তাবিজ-কবজ, ঝাড়ফুঁক ও কুফরি কাজের দ্বারা যাদু-টোনা-বান করিয়া উহার সাহায্যে জনসাধারণের (অশিক্ষিত মূর্খ লোকের) নিকট ছদ্মবেশী পীর সাজিয়া রুজির পথ করিয়া থাকে।

আবার কিছু ভন্ড আছে, যারা ভিতরে ভিতরে নানা প্রকার পৈশাচিক কার্য করিয়া থাকে। আর বলিয়া বেড়ায়, রোজা নামাজ কিছু না, এই সকল ইবাদতের কোন আবশ্যক নাই। আমার নিকট মুরিদ হইলে এই সকল ইবাদত করা লাগবে না। এবং এ সম্বন্ধে নানা প্রকার কুতর্ক করিয়া থাকে। ইবাদতের দায় হইতে রক্ষা পাওয়া যাইবে ভাবিয়া, অনেক জাহেল অশিক্ষিত লোক তাহাদের মুরিদ হইয়া থাকে।

আবার কিছু ভন্ড পীর আছে তারা নামাজ রোজা হজ যাকাত সব ঠিক আছে কিন্তু তাদের দেল মুর্দা, মানে তাদের মনের ভিতরে আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) এর মুহাব্বত নাই। কিন্তু মুরিদদের তারা বুঝিয়ে থাকে তারা হক্কানী পীর কিন্তু মূলত তাদের অন্তর গিবতে পরিপূর্ণ, তাদের অন্তর অন্ধকারে নিমজ্জিত। পক্ষান্তরে তাদের লেবাস আচার-আচরণ দেখলে যেকেউ খালি চোখে তাদেরকে চিনতে পারবে না। তারা জিন-পরী আবদ্ধ করিয়া কিছু যাদু দেখিয়ে থাকে। কিন্তু তাদের প্রকৃত আল্লাহর পক্ষ থেকে কারামত থাকে না।

বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব বলতেন- বাবা কেউ যদি পানির উপর দিয়েও হাটিয়া যায় তারপরও তাকে বিশ্বাস করা যাবে না, যদি তার শরিয়ত মারফতের পরিপূর্ণতা না থাকে।

শেষ কথাঃ

যামানায় ভন্ড পীর যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি কামেল পীরও রয়েছে। কামেল পীর চিনে নিতে হবে। আবার আরেকদল লোক আছে যারা কামেল পীরও মানতে চায় না। বা কামেল পীর রয়েছে সেটা বিশ্বাস করতে চায় না। কামেল পীর বা পীর মুরিদী বায়াত বিশ্বাস করতে চায় না বা অন্যদেরও বুঝিয়ে থাকে পীর মুরিদী করা যাবে না, তারা আসলে ইসলাম সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ। মনে রাখতে হবে পড়াশুনা করলেই কেউ শিক্ষিত হয় না, টাকা পয়সা থাকলেই কেউ বড় লোক হয় না, নামাজ পড়লেই আর সুন্দর কথা বলতে পারলেই কেউ ফরহেজগার হয় না। সুন্দর লেবাস আর টুপি দাড়ি থাকলেই ঈমানদার হয় না। মনে রাখতে হবে শয়তানেরও অনেক ইবাদত বন্দেগী রয়েছিল কিন্তু আল্লাহর একটা হুকুম না মানার কারনে ফেরেস্তার সরদার থেকে ইবলিশে পরিনত হয়েছে। শয়তান আল্লাহর হুকুমের উপর নিজের বুদ্ধি খাটিয়েছে যা বেয়াদবি করেছে, যার কারনে অভিশপ্ত হয়েছে। এগুলো আমাদের জন্য নিদর্শন সরূপ।

আমরা যেন কামেল মোকাম্মেল আল্লাহর ওলীকে চিনতে ও বুঝতে পারি আল্লাহ যেন সেই তৌফিক ও ভাগ্য যেন দান করেন। আমিন।

কামেল পীরের লক্ষণ সমূহ

আরো পড়ুন-

তথ্য সূত্র:

খাঁটি পীর চেনার উপায়

kalerkantho.com/print-edition/islamic-life/2018/02/02/597002

sufibad24.com/post/2106

Quick Bangla

বাংলা তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট হিসেবে পরিচালিত এই সাইটটি। তাই বাংলায় অনেক ধরনের তথ্যই এখানে পেয়ে যাবেন। আশা করি সঠিক তথ্য বিষয়বস্তু জানতে পারবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

Adblock Detected

Please Turn off ad blocker