বাংলা ব্লগ

ভূমিকম্প কেন হয়? প্রাণীরা কিভাবে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পায়

এই পোষ্টের ভূমিকম্প কেন হয়? প্রাণীরা কিভাবে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পায়, ভূমিকম্প হলে কী করণীয়? এরকম আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। (Why do earthquakes happen?)

আমরা ভূমিকম্পের নাম শুনলেই ভয়ে কেঁপে উঠি। অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো কিন্তু ভূমিকম্প কোন পূর্বাভাস দিয়ে আসে না, তাই তো ভূমিকম্পে হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বেশি হয়ে থাকে।

আজ আমরা ভূমিকম্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, ভূমিকম্প কি? ভূমিকম্প কেন হয়? ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়ার কোন যন্ত্র রয়েছে কিনা? ভুমিকম্পের মাত্রা কিভাবে মাপা হয়? প্রাণীরা কি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পায়? প্রাণীরা কিভাবে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পায়? ভূমিকম্প নিয়ে যত ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে এবং ভূমিকম্প হলে কি করণীয়, নিম্নে তুলে এসব প্রশ্নের উত্তর তুলে ধরা হলোঃ

ভূমিকম্প কি?

ভূমিকম্প হলো ভূকম্পন অর্থাৎ পৃথিবী পৃষ্ঠ যখন অল্প সময়ের জন্য কেঁপে ওঠে তাকে আমরা ভূমিকম্প বলে থাকি। ভূমিকম্প পৃথিবীর অভ্যন্তরে যে জায়গায় সৃষ্টি হয় তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বলা হয় বা ভূমিকম্পের জায়গা বলা হয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ভূপৃষ্ঠের ১৬ (ষোল) কিলোমিটার হতে ৭০০ (সাতশত) কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

ভূমিকম্প কেন হয়?

১। ভূমিকম্প হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। আমাদের এই পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে অনেক গুলো প্লেট এর সমন্বয়ে গঠিত। এই প্লেট একটি আরেকটি থেকে পৃথক রয়েছে। এই প্লেট গুলোকে টেকটনিক প্লেট বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীতে যতগুলো প্লেট রয়েছে সেগুলোকে ১৫ টেকটনিক প্লেট এ ভাগ করা হয়েছে। যখন একটি প্লেট আরেকটি প্লেটের মধ্যে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করে তখনই ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়ে থাকে।

২। অনেক সময় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুতপাতের প্রভাবে ভূমিকম্প সৃষ্টি হতে পারে।

৩।  পৃথিবীর অভ্যন্তরে শিলা চ্যুতি ঘটলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হতে পারে।

৪। ভূমিতে চাপ সৃষ্টি হলে ভূমিকম্প হতে পারে। যেমন-পাহাড় থেকে বিশাল কোন পাথর খন্ড ভূমিতে পড়লে ভূমিকম্প হতে পারে।

৫। আবার ভূপৃষ্ঠে তাপ বিকিরণ করে যদি ঠান্ডা হয়ে সংকুচিত হয় তাহলে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ভূপৃষ্ঠ খানিকটা ভেতরে ঢুকে যেতে পারে এবং এতে করে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

৬। অনেক সময় মানুষের কার্যক্রমের কারণে ভূমিকম্প হতে পারে। যেমন- পারমানবিক বোমা পরীক্ষণের জন্য বিস্ফোরণ ঘটানো হলে এবং পাহাড় ধ্বংস করার জন্য বিস্ফোরণ ঘটানো হলেও ভূমিকম্প হতে পারে।

ভূমিকম্পের পূর্বাভাসের যন্ত্র রয়েছে কি?

আজ পর্যন্ত এমন কোনো যন্ত্র আবিষ্কার হয়নি যার দ্বারা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়া যায়।

ভুমিকম্পের মাত্রা কিভাবে মাপা হয়?

ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপ করার পদ্ধতি রয়েছে। ভূমিকম্প পরিমাপের পদ্ধতিকে বলা হয় সিসমোগ্রাফ এবং ভূমিকম্প পরিমাপের যন্ত্রকে বলা হয় রিখটারস্কেল। রিখটার স্কেলে ০ থেকে ১০ পর্যন্ত দাগ কাটা রয়েছে। রিখটার স্কেলের মান এর উপর ভিত্তি করে ভূমিকম্পকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়ঃ

*মাঝারি মাত্রা হলোঃ ৫ থেকে ৫.৯৯।

*তীব্র মাত্রা হলোঃ ৬ থেকে ৬.৯৯।

*ভয়াবহ মাত্রা হলোঃ ৭ থেকে ৭.৯৯।

*অত্যন্ত ভয়াবহ হলোঃ ৮ এর উপরে।

ভূমিকম্প হলে ৩ ধরনের ওয়েভ বা তরঙ্গ সৃষ্টি হয়ে থাকেঃ

প্রাইমারি ওয়েভ হলোঃ এগুলো সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন।

সেকেন্ডারি ওয়েভ হলোঃ মাঝারি গতিসম্পন্ন।

সার্ফেস ওয়েভ হলোঃ সবচেয়ে কম গতিসম্পন্ন।

প্রাণীরা কি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পায়?

প্রাণীরা কি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পায় যদি সত্যিটা জানতে চান তাহলে বলব। অবশ্যই প্রাণীরা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পেয়ে থাকে। শুধু ভূমিকম্প নয় যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস আগে থেকেই প্রাণীরা পেয়ে যায়। অনেক বিজ্ঞানী পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর অস্বাভাবিক কিছু আচরণ লক্ষ্য করেছেন যার পরবর্তী সময়ে ওই জায়গায় ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে। এরকম অনেক উদাহরণ রয়েছে। যেমন-

* ১৮৫৫ইং সালে টোকিও শহরের কয়েকটি জায়গায় হঠাৎ করে হাঁস-মুরগির ডিম দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তখন হাঁস-মুরগি গুলো খাঁচাতে ঢুকতে চাইত না। তাদের আচরনে বুঝা যাচ্ছিল তারা এই জায়গা থেকে পালাতে চাইছে। পরে সেই জায়গাতে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে।

* ১৮৫৭ইং সালে ইতালির জেনোয়া শহরে পায়রা শূন্য হয়ে গেছিল অথচ যে শহরে যাঁকে যাঁকে পায়রা উড়ে বেড়াতো। পায়রা শূন্য হয়ে যাওয়ার কয়েক দিন পরই ঐ শহরে ভূমিকম্প আঘাত এনে থাকে।

* ১৮৯৬ইং সালে চীনের তিয়েনসিনের বিধ্বংসী ভূমিকম্প হয়ে থাকে। মাত্র ৪ দিন আগে সেখানকার চিড়িয়াখানায় প্রাণীগুলো প্রচণ্ড চিৎকার করতে থাকে। পাখিরাও অস্থির হয়ে পড়ে।

* ২০০৪ইং সালে ইন্দোনেশিয়ায় সুনামি ঘটার পূর্ব মুহুর্তে গভীর সমুদ্র থেকে প্রচুর মাছ উপকূলে জেলেদের জালে ধরা পড়ে।

* ২০০৪ইং সালেই শ্রীলঙ্কায় আঘাত আনে সুনামি। কিন্তু এই সুনামির আঘাত আনার ৩ ঘণ্টা আগে শ্রীলংকার একটি পার্কে হাতিগুলো চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দেয়। বাঘ বা হায়েনাদেরকে কোন খাবারের লোভ দেখিয়েও খাঁচা থেকে বের করা সম্ভব হয়নি।

নব্বই এর দশকে চীনের বেইজিং এ সাপ, ইঁদুর রাস্তায় বেরিয়ে এসে পরে। বেরিয়ে আসার কিছুক্ষণ পরই আঘাত আনে ভূমিকম্প। একথা শুনা যায় যে ভূমিকম্পের পূর্বে সেখানকার কুকুর গুলো চিৎকার করছিল। এ রকম আরো হাজারো উদাহরণ রয়েছে প্রাণীরা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পেয়ে থাকে।

প্রাণীরা কিভাবে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পায়?

প্রাণীরা কিভাবে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পায় এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের নিরন্তর গবেষণা চলছে। অনেক গবেষক অনেক ধরনের যুক্তি দাড় করেছেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে পায়রার মধ্যে কম্পন অনুভব করার অদ্ভূত ক্ষমতা রয়েছে। কুকুরদের মধ্যে ২০ হার্জ এর কম কম্পাঙ্কের শব্দ বুঝতে পারার শক্তি রয়েছে।

অনেক বিজ্ঞানীরা বলেছেন ভূমিকম্পের সময় অনেক পজিটিভ আয়ন তৈরি হয়। আর পশু পাখিদের পজিটিভ আয়ন খুব দ্রুত বুঝতে পারার ক্ষমতা রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় আমাদের মানুষদের মধ্যে অনেকের যাদের সিক্সথ সেন্স রয়েছে তারা  আগাম বিপদের আভাস পেয়ে থাকে।

ভূমিকম্প নিয়ে যত ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে

আমাদের পৃথিবীতে ভূমিকম্প নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। যেমন- গ্রিক জাতির বিশ্বাস অনুযায়ী ভূমিকম্পের দেবতা পোসাডাইন। তিনি যখন রাগের মেজাজে থাকেন তখন ত্রিশূল দিয়ে ভূপৃষ্ঠে আঘাত করে আর এতেই ভূমিকম্প হয়ে থাকে। আবার মানুষ যখন খারাপ কাজ করে তখন দেবতা রুষ্ঠ হয়ে এরকম আচরণ করে বলেও মানুষের মাঝে ধারণা প্রচলিত আছে।

পশ্চিম আফ্রিকানদের বিশ্বাস মতে  আমরা একটি দৈত্যের মাথায় বাস করি আর গাছপালা হলো ওই দৈত্যের চুল এবং মানুষ ও পশুপাখিরা হচ্ছে পরজীবীর মত বাস করে। মাঝেমধ্যে দৈত্য মাথা ঘুরালে ভূমিকম্প হয়ে থাকে।

হিন্দুদের মতে এই পৃথিবীকে ৮ টি হাতি মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর হাতি দাঁড়িয়ে আছে একটি সাপের মাথার উপরে। এদের মধ্যে যখন কেউ নড়াচড়া করে তখন ভূমিকম্প হয়ে থাকে। এরকম আরো বহু ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে ভূমিকম্প নিয়ে।

ভূমিকম্প হলে কি করণীয়ঃ

১। ভূমিকম্প হচ্ছে টের পেলে সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা জায়গায় অবস্থান নেন।

২। আপনি যদি উঁচু ভবনে থাকেন আর ভবন থেকে বের হতে না পারেন তাহলে শক্ত কোন বীম, টেবিল বা সোফার নিচে অবস্থান নিন।

৩। বহুতল ভবনে অবস্থান করলে একসাথে সবাই না থেকে ভাগ ভাগ হয়ে আশ্রয় নিন।

৪। আপনি আপনার নিজ ঘরের গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে দূরে অবস্থান করার চেষ্টা করুন।

৫। উঁচু ভবন থেকে নামার জন্য লিফট ব্যবহার করবেন না এবং ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ার চেষ্টা করবেন না। এতে করে বেশিরভাগই ক্ষতির পরিমানই বেশি হয়েছে গবেষনায় জানা যায়।

৬। গাড়িতে থাকলে গাড়ি খোলা জায়গায় থামিয়ে রাখুন এবং গাড়িতে অবস্থান করুন।

৭। হতবম্ভ না হয়ে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার চেষ্টা করুন।

সর্বশেষ কথাঃ

আশা করি ভূমিকম্প কি? ভূমিকম্প কেন হয়? ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়ার কোন যন্ত্র রয়েছে কিনা? ভুমিকম্পের মাত্রা কিভাবে মাপা হয়? প্রাণীরা কি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পায়? প্রাণীরা কিভাবে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পায়? ভূমিকম্প নিয়ে যত ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে এবং ভূমিকম্প হলে কি করণীয় জানতে পারলেন। যারা ভূমিকম্প সম্পর্কে এই তথ্য গুলো জানা ছিলনা তাদের জন্য অনেক কাজে দিবে আজকের এই লেখাটি।

অনেক সময় আমাদের অসাবধানতা এবং অসচেতনতার কারণে ভূমিকম্পের সময় হতাহতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তাই নিজে সঠিক তথ্য জানুন এবং অপরের মাঝে লেখাটি শেয়ার করে সাবধান করুন। আল্লাহ হাফেজ।

ভূমিকম্প কেন হয়?

আরো জানুন-

Quick Bangla

বাংলা তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট হিসেবে পরিচালিত এই সাইটটি। তাই বাংলায় অনেক ধরনের তথ্যই এখানে পেয়ে যাবেন। আশা করি সঠিক তথ্য বিষয়বস্তু জানতে পারবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

Adblock Detected

Please Turn off ad blocker