রাসূল সাঃ এর রওজা মোবারক বলার দলিল কোরআন হাদিস থেকে
রাসূল সাঃ এর রওজা মোবারক বলার দলিল কোরআন হাদিস থেকে জানুন। রওজা, মাজার ও কবরের মধ্যে পার্থক্য কি এবং নবীজির কবর শরীফকে কেন রওজা বলে জেনে নিন।
রওজা শরীফ, কবর আর মাজারের মধ্যে পার্থক্য
সাধারণ মুসলমানদের যেখানে দাফন করা হয় ওই জায়গাকে আরবিতে “কবর” বলা হয়। নবীগণের (আঃ) সমাধির জায়গাটিকে রওজা শরীফ বলা হয়। সম্মানিত ওলী আল্লাহগণ (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহুম) সমাধিকে “মাজার শরীফ” বলা হয়।
রওজা বলার কারণ হচ্ছে- ফার্সীতে “রওজা” শব্দটি আরবি “রাওদ্বাহ” থেকে এসেছে, যার অর্থ বাগান। হাদিস শরিফে আছে, ‘মানুষের কবরটি হয়তো জান্নাতের একটি বাগান হবে অথবা জাহান্নামের একটি গর্ত হবে।’ বাগানকে আরবিতে ‘রওজা’ বলা হয়। অতএব আম্বিয়ায়ে কেরাম ও সাহাবায়ে কেরাম যেহেতু জান্নাতি, তদ্রূপ নেককার মুমিনরাও ইনশাআল্লাহ জান্নাতে যাবেন, তাই তাঁদের কবরকে সম্মানার্থে ‘রওজা’ও বলা যায়। কারণ হাদিসেই এসেছে জান্নাতিতের কবর মানে বাগান, আর আরবিতে বাগান মানে রওজা।
কবর বলার কারণ হচ্ছে- আমরা যেহেতু সাধারণ মুসলমানদের সম্পর্কে জানি না তিনি জান্নাতি নাকি, সে হিসেবে সকল মুসলিমের দাফন করার পর জায়গাটিকে কবর বলি।
মাজার বলার কারণ হচ্ছে- ‘মাজার’ একটি আরবি শব্দ। বাংলায় এর অর্থ হচ্ছে জিয়ারতের স্থান। শব্দটি ফারসী দরগাহ শব্দটিরও প্রতিশব্দ। এর ধাতুগত অর্থ ‘যিয়ারতের স্থান’ বা পরিদর্শনের জায়গা। এই অর্থে শরিয়ত মতে সব মুমিনের কবরই ‘মাজার’, কেননা সব মুমিনের কবরই জিয়ারতের স্থান এবং কবরই জিয়ারত করা হয়ে থাকে।
তবে আমাদের দেশের অলি-আওলিয়া পীর-দরবেশ ও বুজুর্গদের কবরকে ‘মাজার’ বলে থাকি। যেহেতু সেখানে মানুষ বেশি জিয়ারত করে থাকে। এবং আমাদের যেহেতু বিশ্বাস হয়ে থাকে এই কবরটি একজন নেককার মুমিনের তাই আমরা মাজার সম্ভুধন করি। কারণ মুমিনের কবরই জিয়ারত করার যোগ্য তাই সেটি মাজার শরীফ বলা হয়।
উল্লেখ্য, শরিয়তে আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.), সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ও অলি-নেককারসহ সব মুমিনের কবরেই জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এখানেও মাজার বলা যাবে।
আমরা রাসুল সাঃ এর কবর শরীফকে রওজা মোবারক বা রওজা শরীফ বলে থাকি, সেই সাথে সাহাবায়ে কেরাম ও আল্লাহর ওলী-বুজুর্গব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও রওজা ব্যবহার করতে পারি। রওজা কথাটি বলাটা অনেক বড় আদব।
রাসূল সাঃ এর রওজা মোবারক বলার দলিল
চলুন জেনে নেওয়া যাক রাসূল সাঃ এর রওজা মোবারক বলার দলিল কোরআন হাদিস থেকে–
*** রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর দাফনস্থল বা কবরকে রওজা বলা হয়। মূলত রওজা শব্দের অর্থ বাগান। এখানে রওজা বা বাগান দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ‘জান্নাতের একটি বাগান।’ যেহেতু নবিজীর কবরটি জান্নাতের নেয়ামতে ভরপুর একটি পবিত্র বাগান। তাই এ অর্থে তাঁর কবরকে ‘রওজায়ে আতহার’ (পবিত্র বাগান), রওজা শরিফ ইত্যাদি বলা হয়।
দলিল–
- সহীহ বুখারী-১/১৮৬
- সহীহ মুসলিম-১/২০১
- মুসনাদে আহমদ-২/২৪৬,৩৬৭
এবার আলোচনা করবো নেক বান্দার কবরকে রওজা বলা যাবে কি না
*** হযরত আবু সাইদ (রাঃ) বর্ণনা করেন রাসুলে করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন, কবর হয়ত জান্নাতের বাগানের একটি ‘রওজা’বা বাগান হবে অথবা জাহান্নামের আগুনের মধ্যে একটি আগুন হবে।
দলিল–
- সহীহ তিরমিজি-২৪৬০
- তাফসীরে কবীর,৪র্থ জিঃ ১৮৮পৃ:
- মাকাসিদুল হাছানা: ৩০২পৃঃ
👉এই হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে মানুষের কবরের দুটি অবস্থা হবে। হয় ‘রওজা’ হবে নতুবা আগুন হবে।আল্লাহর বন্ধু যারা তথা নেকবান্দা যারা তাদের কবরকে আল্লাহ্ অবশ্যই রওজা করে দেন। আর আল্লাহ্ যা রওজা করে দেন তাকে রওজা বলতে কোন অসুবিধা কোথায়? কারন আল্লাহ্ পাক স্বয়ং রওজা বানিয়েছেন।
*** রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যাক্তি এলেম অর্জন করতে গিয়ে মারা যাবে সে শহিদী দরজা লাভ করবে এবং তার কবরকে একটি জান্নাতের বাগান সমূহের একটি ‘রওজা’ বা বাগান করে দেওয়া হবে এবং তাঁর কবরকে প্রশস্থ করে দেওয়া হবে যতটুকু তাঁর দৃষ্টি শক্তি যায়।
[তাফসিরে কবির,২য় খন্ড, ১৮৯পৃঃ]
👉এই হাদিস দ্বারাও বুঝা যায়,একজন তালেবে ইলিমের কবরকে যদি আল্লাহ্ খুশি হয়ে ‘রওজা’ বানিয়ে দেন তাহলে আল্লাহর ওলীগনের কবরকে কেন রওজা বানিয়ে দিবেন না।যেনে রাখা আবশ্যক যে রওজা শব্দের অর্থ বাগান তথা জান্নাতের বাগান। আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় বান্দাদের কবরকে জান্নাতের বাগানের পরিণত করেন।
*** হযরত আনাছ (রাঃ)বর্ণনা করেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ফেরেস্তেরা কবরে নেককার মৃত ব্যাক্তিকে বলবেনঃ অবশ্যই আল্লাহ্ তোমার কবরকে জান্নাতের বাগানের পরিণত করেছেন।
দলিল–
- সহীহ বুখারি,হা:১৩৩৮
- মুসলিম শরীফ,নাসাঈ,হা;২০৫১
- আবু দাউদ,৪৭৫২
- মেশকাত,২৫ পৃঃ
- মেরকাত,১ম খন্ড,৩১৪ পৃঃ
👉এই হাদিসে বলা হয়েছে, ফেরেস্তার প্রশ্নের জবাব দিতে পারলে তাঁর কবরকে বাগান বা রওজা বানিয়ে দিবে।বাগানকে আরবিতে জান্নাত/রওজা বলা হয়।একজন সাধারণ মানুষের কবর যদি বাগান তথা রওজা হয় তাহলে আল্লাহর বন্ধুর কি বাগান বা রওজা হবেনা??
👉সবচেয়ে উত্তম রওজা হল রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এঁর কবর মোবারক যেমন বলাহয়েছেঃ নিশ্চয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এঁর কবর শরীফ আল্লাহর বাগান সমূহের একটি উত্তম রওজা,বরং এর চেয়েও আরো উত্তম।
[মাওয়াহেবুল্লাদুনিয়া,৪র্থ খন্ড,৫৯১ পৃ:]
কোরআন পর্যালোচনা করলে আদবের সাথে রওজা বলা আল্লাহরই নির্দেশ
আল্লাহ তায়ালা কোরআন পাকে ঘোষণা করেন-
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চ স্বরে কথা বল, তার সাথে সেইভাবে উচ্চ স্বরে কথা বলো না; কারণ এতে অজ্ঞাতসারে তোমাদের কর্ম নিস্ফল হয়ে যাবে।
যারা আল্লাহর রসূলের সামনে নিজেদের কণ্ঠস্বর নীচু করে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে আল্লাহ-ভীরুতার জন্য পরীক্ষা করেছেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (সূরা আল-হুজুরাত)
এখানে এই সূরাতে আল্লাহ পাক সেই আদব, শ্রদ্ধা, ভক্তি ও মর্যাদা-সম্মানের কথা বর্ণনা করেছেন, যা প্রত্যেক মুসলিমকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্য নিবেদন করতে হয়। যেহেতু নবীজি সাঃ আমাদের মত সাধারণ মানুষ নন তাই তিনির রওজা শরীফকে সাধারণ ভাবে ‘কবর’ বলাটাও আল্লাহর নিষেধ। কারণ নবীজির উদ্দেশ্যে বেয়াদবের মত করে কথা বলা নিষেধ করেছেন সয়ং আল্লাহ নিজেই। যেহেতু হাদিসে এসেছে জান্নাতিদের কবর হবে বাগান মানে রওজা সেহেতু রওজা বলাটাই এখানে আদবের।
*** বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব বলেন- “যে ব্যাক্তির আদব নাই, সে ব্যাক্তি কখনও আল্লাহতায়ালার রহমত, করুনা ও দয়া কামনা করিতে পারে না।”
“যে ব্যাক্তির আদব নাই সেই ব্যক্তি শুধু নয় তাহার সংগীগণও আল্লাহপাকের অনুগ্রহ হইত দূরে নিপতিত হয়।”
“নবীজীর (সাঃ) মহব্বতই হলো ঈমান। যার অন্তরে রাসূল (সাঃ) এর মহব্বত যতবেশী তার ঈমানও ততবেশী। যার অন্তরে নবীজীর মহব্বত নাই তার ঈমানও নাই। সে সরাসরি বেঈমান।”***
শেষ কথাঃ
আশা করি রাসূল সাঃ এর কবর শরীফকে রওজা মোবারক রওজা শরীফ বলার দলিল জানতে পারলেন। রওজা মোবারক বলার কোনো দলিল দরকার হয় না। তবে এখন কিছু নামদারী প্রশ্ন তুলেন কেন রওজা বলা হয়, তাই আজকের এই দলিল ভিত্তিক আলোচনা। সাথে সাথে কবর কোন ভাষার শব্দ তাও জানতে পারলেন এবং মাজার কেন বলা হয় সেটিও জানতে পারলেন।
আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।
আরো জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন-
আরো পড়ুন-
- রাসুল সাঃ এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খাওয়া চোখে মালিশ করার ফজিলত
- রাসূল সাঃ সৃষ্টি না হলে কিছুই সৃষ্টি হত না কোরআন হাদিসের দলিল
- নামাজে বুকে হাত বাধার সহিহ হাদিস আছে কি? একটাও নাই
- জানাজার নামাজের পর মুনাজাত করা জায়েজ প্রমাণিত
- ফরজ নামাজের পর মোনাজাতের দলিল সহিহ হাদিসের আলোকে
তথ্য সূত্রেঃ
modinargolam.wordpress.com/2020/05/29/রাসূল-ﷺ-এঁর-কবর-শরীফকে-রওজ/
kalerkantho.com/print-edition/islamic-life/2020/03/04/881549