মাজারে সেজদা করা জায়েজ কি কোরআন হাদিস থেকে
এই পোষ্টের মাধ্যমে মাজারে সেজদা করা জায়েজ কি কোরআন হাদিস থেকে দলিল জানুন। মাজার শরীফে সিজদা দেওয়া যাবে কিনা ও কেন সেজদার মত করে জানতে পারবেন।
মাজারে সেজদা করা জায়েজ কি
মাজারে সেজদা করা জায়েজ কি। সেজদার মালিক মহান আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহ ব্যতিত কাউকে সেজদা করা যাবে না এটা আল্লাহর নিষেধ।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের মাজারের সামনে একটি সাইনবোর্ড লাগানো থাকে তা নিচে দেখানো হলো। সেখানেও আল্লাহ ব্যতিত কোন পীর কিংবা কোন মানুষকে সিজদা না করার জন্য বলা হয়েছে।
নবী-রাসূল ও আউলিয়াগনকে তাজিমি সেজদা করা জায়েজ
তাজিমি সেজদা শুধুমাত্র আল্লাহর খাছ বান্দা তথা নবী, পয়গম্বর, আউলিয়া কেরামের জন্য। এটি তাঁদের সম্মানার্থে প্রদান করা হয় যা দোষণীয় নয়।
কোরানে পাকে সুরা ইউছুফের ১০০নং আয়াতে উল্লেখ আছে, হযরত এয়াকুব আঃ ও তাঁর অন্যান্য পুত্ররা হযরত ইউছুফ আঃ কে সেজদা দিয়েছেন।উল্লেখ্য এই সেজদা তাজিমি সেজদা।
(১) মেশকাত শরীফের ৩৯৬ পৃঃ ৮ম হিঃ সালে বর্ণিত হাদিসে পাওয়া যায়, হযরত আবু খোজায়মা (রঃ) রাসুলে খোদা (দঃ) কে তাজিমী সেজদা করেছেন।
(২) আনিসুল আরওয়াহ কিতাবে বিভিন্ন হাদিস সূত্রে পাওয়া যায় হযরত ওমর (রাঃ), হযরত বেলাল (রাঃ), হযরত আলী (রাঃ), রাসুলে খোদা (দঃ) কে তাজিমি সেজদা করেছেন।
তাজিমি সেজদা যদি হারাম হত হযরত ইউছুফ (আঃ), রাসুলে খোদা (দঃ) তাজিমি সেজদা গ্রহণ করতেন না বরং বাধা বা নিষেধ করতেন, কিন্তু তাঁরা তা গ্রহণ করেছেন।
সেজদা প্রধানত ২ প্রকারঃ
১। সেজদায়ে তাবুদী বা ইবাদতের সিজদা।
২। সেজদায়ে তাহিয়্যাহ বা তাজিমি সেজদা।
ইবাদতের সেজদার কিছু শর্তাবলী আছেঃ
১। সেজদার নিয়ত থাকতে হবে।
২। সেজদায় তছবী জপতে হবে।
৩। ওযু থাকতে হবে।
৪। কিবলামুখী হতে হবে ইত্যাদি।
তাজিম সেজদার পক্ষ-বিপক্ষ
তাজিমী সেজদা জায়েজ নাজায়েজের ব্যপারে ইসলামিক চিন্তাবিদ গবেষকগন দুই ধারায় বিভক্ত। বহু সংখক তাফসীর কারকগন এর বিরোধী।
অপর পক্ষে মাওলানা রুমি হতে শুরু করে শেরে বাংলা হুজুর সহ তাজিমী সেজদা জায়েজের পক্ষে মত দিয়েছেন।
তাজিমী সেজদা জায়েজের পক্ষে দলিলঃ
পবিত্র কোরানের আয়াত।
(১) “যখন আমি ফেরেশতাগণকে বললাম আদমকে সেজদা করার জন্য তখন ইবলিশ ব্যতীত সবাই সেজদা করল”।
(২) “ইউসুফ (আ:) তার মাতাপিতাকে উচ্ছাসনে বসালেন এবং তারা সবাই তার সামনে সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন”।
আয়াত দুটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় উপরোক্ত সেজদাগুলি ছিল সম্মানসূচক সেজদা। কোরানের আয়াত দ্বারা তাজিমী সিজদা জায়েজ বলে প্রমাণিত হয়। কেননা আল্লাহপাক কোরানের প্রতিটি আয়াত তার বান্দাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য নাজিল করেছেন। আল্লাহপাক নিশ্চই তার বান্দাদের শিরকের নির্দেশ দিবেননা।
হাদিস শরীফে আছে একদা এক লোক রাসুলুল্লাহ (সা:) এর নিকট এসে বললো হে খোদার রাসুল আপনি আপনাকে সেজদা করিতে স্বপ্নে দেখিয়াছি। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলিলেন তোমার স্বপ্ন সত্য। তখন লোকটি নবী করিম (সা:) কে সেজদা করিল। রাসুলুল্লাহ (সা:) কোন বাধা প্রদান করলেননা। সুতরাং কোরআন হাদিস দ্বারা তাজিমী সেজদা জায়েজ বলেই প্রমানিত হয়।
আর এর বিরুদ্ধে কোরআন হাদিসের কোথাও সরাসরি হারাম বলে ঘোষণা করা হয়নি। অবশ্য কাউকে আল্লাহ জ্ঞান করে সেজদা করলে অবশ্যই শিরক হবে। আর তাজিমী সেজদা হলো মূলত এক প্রকার সালাম। এবং এটা শুধুমাত্র সম্মানের জন্য করা হয়। আর তাজিমী সেজদার দ্বারা পীর মুরশিদকে সম্মান জানানো জায়েজ বলেই প্রমাণিত।
কদমবুচি করা জায়েজ যা সেজদার মত দেখতে
কোন বুজুর্গব্যক্তিকে তাঁর ভক্তদয় কদমবুচি করে থাকে যা ইসলামের দৃষ্টিতে অনেকাংশে জায়েজ। আবার কোন বুজুর্গব্যক্তি যখন কোন মাজারে শায়িত থাকেন তখন সেই মাজারে বিভিন্ন নতজানুর দৃষ্টিতে খেয়ালে খেয়ালে কদমবুচি বা মাজার শরীফকে চুম্বন করে থাকে যাও ইসলামের দৃষ্টিতে জায়েজ।
অনেক সময় নতুন কোন মানুষ মাজারে গিয়ে এ আদবগুলো দেখে আর বিভিন্ন মোল্লাদের ফতোয়ায় শিরক মনে করে থাকে যা কোন যুক্তিযুক্ত নয়।
কদমবুচি করাকে সেজদা মনে করে অনেকেই আবার অনেকের ফতোয়া হলো মাথা নত করলে সেজদা হয়ে যায়। একথা গুলোরও কোন যুক্তিযুক্ত নেই। কারণ হিসেবে দেখবেন আমরা যখন মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ি তখন কাতার ধরে দাড়ায়, আর তখন সেজদা দেওয়ার সময় একজনের পায়ের কাছে আরেকজন সেজদা দিচ্ছি। যদি কারো সামনে মাথা নত করলে সেজদা হয়ে যায় তাহলে আমরা সবাই মসজিদে গিয়ে ইমামের পিছনে নামাজ পড়ার সময় সবাই শিরক করি। কিন্তু সেজদার উদ্দেশ্য থাকতে হয় ও নিয়ত থাকতে হয় তাহলেই সেজদা হবে। আমাদের উদ্দেশ্য ও নিয়ত হলো মহান আল্লাহ তায়ালা তাই আমাদের সেজদা সামনের লোক পায় না, সেজদাটি পেয়ে থাকে আল্লাহতায়ালা।
আমরা যখন নামাজে সেজদা দেই তখন কাবা শরীফকে কেবলা বানিয়ে কাবার দিকে সেজদা দেই, এখানেও কিন্তু কাবা শরীফ সেজদা পায় না। আমাদের দিক হলো কাবা আর আমাদের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তায়ালা, তাই আমাদের সেজদা আল্লাহকেই দিয়ে থাকি। যদি আমরা কাবা শরীফকে সেজদা দেই তাহলেও কিন্তু শিরক হবে কারণ এটাও কিন্তু একটা মুর্তিরমত।
তাহলে আমাদের বুঝতে হবে কাবা হলো আমাদের দিক আর আমাদের সেজদা হলো মহান আল্লাহ। তাই কারো সামনে মাথা নত করলেই তাকে সিজদা করা হয় না।
হাদিসে আছে-
হযরত যারেঈ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যিনি আব্দুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধি দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তিনি বলেন- আমরা যখন মদীনা শরীফে আগমন করলাম তখন আমাদের বাহন হতে তাড়াতাড়ি নেমে পড়লাম এবং রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাত ও পা মোবারক চুম্বন করলাম। -(আবূ দাউদ, হাদিস নং ৫২২৪, ৩য় খন্ড, ৪ নং অধ্যায় ।
কদমবুচি সম্পর্কে আরো ভালভাবে জানতে নিচের লিংকে গিয়ে আর্টিকেলটি পড়তে পারেন-
👉পায়ে ধরে সালাম করা জায়েজ প্রমাণ, কদমবুচি করা জায়েজ কি
মাজারে সেজদা করা জায়েজ কি প্রসংগে
শেষ কথাঃ
আল্লাহ ব্যতিত কোন মানুষকে সেজদা দেওয়া যাবে না। সেজদার মালিক মহান আল্লাহ তায়ালা। তবে আল্লাহর খাতিরে কোন বুজুর্গব্যক্তিকে বা নিজ মুর্শিদকে (পীরকে) তাজিম করা যাবে। তাজিম আল্লাহকে মেনেই করা হয়। সে ক্ষেত্রে শিরক হওয়ার আশংক্ষা নাই। শিরক হলো আল্লাহকে অস্বীকার করে অন্যকোন কিছুকে বা কোন বস্তুকে স্বীকার করা তারা উপকার করতে পারে। যা ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায় জাহেলিয়াতি যুগে মানুষ বিভিন্ন মুর্তিকে বিশ্বাস করত তারা উপকার করতে পারে। তখন সেই মুর্তিগুলোর উপাসনা করা হত। এই কাজগুলোকে শিরক বলা হত, কারণ তারা এক আল্লাহ বিশ্বাস করত না এবং বিভিন্ন মুর্তি বিশ্বাস করতো।
মাজারে সেজদা করা যাবে কিনা জানার জন্য নিচের ভিডিওর ওয়াজটি শুনুন-
আরো পড়ুন-
- পীরের অনেক মুরিদ নামাজ পড়ে না কেন?
- কাউকে কি গালি দেওয়া যাবে ইসলামের খাতিরে
- জিহাদ কাকে বলে, জিহাদের নামে জঙ্গীবাদ ইসলাম সমর্থন করে না
- জাকের পার্টি চেয়ারম্যান মহোদয়ের বাণী ও উপদেশ
- বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের বাণী ও উপদেশ
তথ্যসূত্রেঃ
sufibad24.com/post/4333/