বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের বাণী ও উপদেশ
এই পোষ্টটি সাজানো হয়েছে বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের বাণী ও উপদেশ দিয়ে। যা নসিহত শরীফ ও অডিও বাণী হতে সংগ্রহিত।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের মহামহিম প্রতিষ্ঠাতা বিশ্ব ওলী হযরত শাহ্ সূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের মহামূল্যবান অনেক উপদেশ দিয়েছেন। তারমধ্যে কিছু সংখ্যক এই পোষ্টে তুলে ধরা হলো।
বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের বাণী ও উপদেশ
১. “আল্লাহতায়ালার পথের পথিকদের সব চেয়ে বড় সম্পদ আদব। বেয়াদব কখনই খোদাতায়ালার প্রেম লাভ করিতে পারিবে না।”
২. “তোমরা আল্লাহকে ভুলো না, কারন আল্লাহ তোমাদের ভুলে না।”
৩. “মানবতার সেবাই আল্লাহর রহমত লাভের সর্বোত্তম উপায়।”
৪. “বিশুদ্ধ ইবাদতের জন্য প্রয়োজন যাবতীয় শিরক হইতে নিজেকে মুক্ত করা।”
৫. “কঠিন পরীক্ষার কষ্টিপাথরে যাচাই না করিয়া খোদাতায়ালা কাহাকেও নিজ দরবারে প্রবেশের যোগ্যতার সার্টিফিকেট প্রদান করেন না।”
৬. “খোদাতত্ত্ব সাধনার পথের পথিক মাত্রই কম বেশী উপলব্ধি করেন মোর্শেদে কামেলের গুরুত্ব কি। তিনি কেমন পরশ মানিক। তাহার নিকট এমনই ক্ষমতা আল্লাহতায়ালার পক্ষ হইতে জমা থাকে, যাহা কার্যতঃ অনবিক ক্ষমতার চেয়েও বহু বহু গুণ বেশী।”
৭. “কালবী জ্ঞানের মাধ্যমে নিজেকে চেনা যায়, নিজ সত্ত্বার নিগুঢ় তত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায়, যে জ্ঞান খোদাতালাশীকে খোদাতায়ালার একান্ত সান্নিধ্যে পৌঁছাইয়া দেয়।”
৮. “আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টি জগতের অর্থাৎ ১৮,০০০ আলমের প্রকাশ্য ও অন্তর্নিহিত জ্ঞান অর্জন করা যায়। যে জ্ঞানের তুলনায় বিজ্ঞানের আবিস্কৃত মহাবিশ্বে ১০০ কোটি গ্যালাক্সির জ্ঞান একেবারেই সামান্য; যাহা উল্লেখেরও দাবী রাখে না। পরিচ্ছন্ন কালবের অধিকারী ওলীয়ে কামেলগণ ১৮ হাজার আলম সম্বলিত সমগ্র সৃষ্টি জগতকে নখদর্পণে দেখিতে সক্ষম।”
৯. “টেলিভিশনে একই সাথে খবর শোনা ও ছবিও দেখা যায়। পরিচ্ছন্ন লতিফা কালব টেলিভিশনের পর্দার মত কাজ করে। ১৮ হাজার আলম বা সৃষ্টি জগতের সব কিছুই কালবের পর্দায় দেখা যায়।”
১০. “কামেলের কালব অত্যন্ত শক্তিশালী এক টেলিস্কোপ। যাহার সাহায্যে আসমানসমূহে রক্ষিত সৌন্দর্য্য, নূরময় জগতের মনোমুগ্ধকর অপরূপ রূপ দর্শন করিয়া ছালেক সবকিছু বিস্মৃত হয়; এমনকি নিজেকেও পর্যন্ত ভুলিয়া যায়। দুনিয়ার প্রতি তাহার আর বিন্দুমাত্র আকর্ষণ থাকে না।”
১১. “পীরের মহব্বতের ভীতর দিয়েই খোদা প্রাপ্তির পথ পাওয়া যায়। আল্লাহকে ধরা যায়।”
১২. “তুমি যে দিন তোমার পীরের জাতকে কবুল করলে, রাসূল (সাঃ) তোমাকে সেদিন উম্মত বলে স্বীকার করলেন। তাই আল্লাহ ও রসূলের স্বীকৃতি তুমি পাইলে ঐ দিন যেই দিন তুমি তোমার পীরের তরফ থেকে স্বীকৃতি পেলে।”
১৩. “পীরানে পীরদের পাক আত্মার যোগাযোগ যখন আপনার লাভ হয়ে যাবে, মুহূর্তেই বিশ্ব আত্মার সান্নিধ্য লাভ হবে, আল্লাহতায়ালা রেজাবন্দি হাছিল হবে। অমূল্য নেয়ামতের অধিকারী আপনি হয়ে যাবেন-যে নেয়ামতের সন্ধান একমাত্র আত্মাদর্শক ব্যতীত অন্য কেহ জানে না।”
১৪. “পাওয়ার হাউজ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বাল্ব সে বিদ্যুৎ ধারন করে জ্বলে উঠে। আলো ছড়ায়। রুমের বাল্ব বিদ্যুৎ ধরে জ্বলে উঠে কিন্তু রুমের অন্য কোন কিছুই যেমন ওয়াল, জানালা বিদ্যুৎ ধরতে পারে না। মানুষের শরীরে এরকম ৭০ হাজার বাল্ব আছে। সেগুলো আল্লাহর তাজাল্লী দ্বারা রৌশন হয়ে উঠে। ৭০ হাজার বাল্বের মধ্যে প্রথম বাল্বই হলো কালব। এটা হলো আল্লাহতায়ালা ভেদের মহাসমুদ্র, মহা জ্ঞান ভান্ডার।”
১৫. “খেয়াল ক্বলবে, ক্বালব আল্লাহর দিকে, আল্লাহ হাজির-নাজির, খেয়াল কালবে ডুবিয়ে, হুজুরি ক্বলবে আল্লাহকে সিজদা করো। মুমিনদের জন্য এটাই মেরাজ।”
১৬. “মুখে বলছেন, সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা অথচ অন্তরে দুনিয়াবী চিন্তা – এমন নামাজে কোন ফল নেই। একে লিপ-সিমপ্যাথি বলা হয়। নামাজ পড়তে হবে হুজুরে কালবে ডুব দিয়ে।”
১৭. “নামাজ পড়তে হবে হুজুরে কালবে ডুব দিয়ে। যখন হুজুরে কালবিতে নামাজ পড়তে পারবেন তখনই নামাজের সত্যিকারের স্বাদ পাবেন।”
১৮. “কামেল পীরের অসিলা ছাড়া কালবে ডুব দিয়ে হুজুরে কালবে নামাজ পড়তে পারবেন না। অসিলা নিয়ে কালবে ডুব দিয়ে যখন নামাজ পড়তে পারবেন তখন কালবের ভিতরেই আপনারা আরশ-কুরছি, লওহ-কলম, বেহেশত-দোযখ দেখতে পাবেন।”
১৯. “আমরা যে শরীয়ত পালন করি তাহলো শরীয়তের সুরত। শরীয়ত ও সুন্নতের আরোও ছয় ভাগ আছে যা আধ্যাত্মিকতার সাথে যুক্ত। পীরে কামেল ছাড়া তা শিক্ষা করা যায় না।”
২০. “কেবলমাত্র প্রশংসা করে বা খেদমত করে বা কোন মূল্য দিয়ে পীরের দেনা শোধ করা যাবে না। অতএব তোমার পীরের কদমে তুমি ধুলি হয়ে যাও।”
২১. “বন্যায় ডুবিয়া গেলে সমস্ত সংসার, হংস ভাসিয়া থাকে ভয় কি তাহার।”
২২. “খোদাতত্ত্ব সাধনার পথে শুরু হইতে পূর্ণতা অর্জন পর্যন্ত মোর্শেদের সাহায্য ও দয়া ব্যতীত এক চুল পরিমানও অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। তাই মোর্শেদে কামেলের কোন বিকল্প নাই।”
২৩. বিশ্ব জাকের মঞ্জিল আল্লাহ ও রাসূলে পাক (সাঃ) এর মহা দান, বিশ্ব মানবের জন্য খোদাপ্রাপ্তির প্লাটফর্ম, আধ্যাত্মিক শিক্ষাকেন্দ্র।
২৪. “পীরের ভালোবাসা ভিতর দিয়া, পীরের মহব্বতের ভিতর দিয়া আল্লাহর উপর মহব্বত পয়দা হয়।”
২৫. “গোলাভরা ধান থাকলেও সকলেই কিছু না কিছু ব্যবসা করবেন। ব্যবসা হলো কাঠার মাছ। ব্যবসা ছাড়া নতুন পয়সার মুখ দেখা যায় না।”
২৬. “হরদম আল্লাহ আল্লাহ জেকেরের মাধ্যমেই খোদাপ্রাপ্তি ঘটে।”
২৭. “কখনও পীরের নির্দেশিত কর্ম করিতে উচিৎ – অনুচিত চিন্তা করিবে না। পীরের আদিষ্ট কর্ম করিতে ভাল-মন্দ চিন্তা করিতে নেই।”
২৮. “পীরের মহব্বত অর্জনের চেষ্টা কর। পীরকে ভালবাস। তাহা হইলে আল্লাহ রাসূলের মহব্বত তোমাদের দেলে পয়দা হইবে। আল্লাহ ও রাসূলের খাছ হোব্ব-এশক-মহব্বতের ফয়েজ তোমরা পাইতে থাকিবে।”
২৯. “ধন সম্পদ, আত্বীয়-স্বজন, পুত্র-পরিজন, এমন কি স্বীয় প্রাণাপেক্ষা যদি আপন পীরকে ভালবাসিতে পার, তাহা হইলে আল্লাহর মারেফাত অর্জন করা বা পরিচয় জ্ঞান লাভ করা তোমাদের জন্য খুবই সহজ হইবে।”
৩০. “খোদাপ্রেম শীতল হইতে পারে এমন কোন চিন্তা মুরীদের জন্য অনিষ্টকর। তাই সেই সকল কর্মে আসক্ত ও ঐ সকল চিন্তায় প্রভাবিত ব্যাক্তিবর্গ হইতে তালেবের দূরে থাকা উচিত।”
৩১. “যাহারা পৃথিবীর সম্পদ অর্জন, আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্য ও মহব্বত অর্জনের চেয়ে বড় মনে করেন ও সেই অনুযায়ী কর্মে লিপ্ত ও আসক্ত থাকেন তাহাদের সংসর্গ আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্যের পথের পথিকদের জন্য মংগলজনক নয়।”
৩২. “পূর্ববর্তী কালের মুর্শিদে কামেলগণ দুইটি বিষয় খোদাতালাশীদের জন্য সব চেয়ে বিপদজ্জনক ও ক্ষতিকর মনে করিয়াছেন। এই দুইটি হইল ধনীদের সংসর্গ এবং আল্লাহতায়ালার পথ বিচ্যুতি হইয়া বিবাহের চিন্তা করা।”
৩৩. “একতার বলে সব হও বলীয়ান, উড়িয়ে আকাশে তব বিজয় নিশান।”
৩৪. “যে ব্যাক্তির আদব নাই, সে ব্যাক্তি কখনও আল্লাহতায়ালার রহমত, করুনা ও দয়া কামনা করিতে পারে না।”
৩৫. “যে ব্যাক্তির আদব নাই সেই ব্যক্তি শুধু নয় তাহার সংগীগণও আল্লাহপাকের অনুগ্রহ হইত দূরে নিপতিত হয়।”
৩৬. “পীরের প্রতি আদব প্রদর্শনের নিমিত্তে পীরের প্রতিটি হুকুম প্রকৃত মুরীদ পুংখানুপুংখরুপে পালন করিবে।”
৩৭. “আপন পীর কেবলাজান ছাহেবের নিকট প্রকৃত মুরীদকে সদাই আদবের সহিত থাকিতে হইবে। স্বীয় পীর কেবলাজান হুজুরের সম্মুখে যতক্ষণ থাকিবে ততক্ষণ মুরীদ পবিত্র হইয়া থাকিবে।”
৩৮. “স্বীয় মুর্শিদের সম্মুখে যাইবার আগে অজু করিয়া লইবে। মনকে সকল দিক হইতে ফিরাইয়া একমাত্র স্বীয় মুর্শিদের প্রতি সন্নিবেশিত করিবে। আপন মুর্শিদে কামেলের নিকট বসিতে হইলে তালেব সর্বদা নতশিরে বসিবে। বসিবার একান্ত প্রয়োজন না হইলে মুরীদ আদবের সহিত দন্ডায়মান থাকিবে।”
৩৯. “স্বীয় পীর কেবলাজানের সম্মুখে কখনই আসন করিয়া বসিবে না। যতক্ষণ মুর্শিদে কামেলের সম্মুখে থাকিবে মুরীদ অন্য কোন দিকে মন বা দৃষ্টি ফিরাইবে না। কারণ তিনি মুরীদকে উদ্দেশ্য করিয়া উপদেশ দান করিবেন। স্বীয় পীরে কামেলের দিক হইতে দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরাইয়া লওয়া অতি অন্যায় ও অনাকাংখিত কর্ম।”
৪০. “মুর্শিদে কামেল মুরীদের মনের অবস্থা সম্পূর্ণ রুপে জ্ঞাত। তাই শুধু বাহ্যিক ভাবেই নয়, পীরে কামেলের নিকটে বা দূরে কোন অবস্থাই তালেব কুচিন্তা, কুভাব মনে প্রশ্রয় দিবে না। নাফসে আম্মারার কুপ্রভাবে কখনও এই রুপে খারাপ চিন্তা মনে আসিলে আপন পীরে কামেল ছাহেবের দয়া ও আশ্রয় ভিক্ষা চাহিয়া মন হইতে সকল প্রকার অনিষ্টকর চিন্তা দুরীভুত করিবার প্রয়াস পাইবে ও সেই সংগে তওবা করিয়া মন অন্য দিক ঘুরাইয়া লইবার জন্য আপন মুর্শিদ কেবলার দয়া মনে মনে প্রার্থনা করিবে। নাফসে আম্মারার এই প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জেহাদ করিবে।”
৪১. “স্বীয় পীর ছাহেব কেবলাজান হুজুরের দরবারে অবস্থান কালে পীর কেবলাজান ছাহেবের সম্মুখে নিয়ম অনুযায়ী বিনীতভাবে খেদমতের বাসনা লইয়া দন্ডায়মান হইবে। তবে এমন সময়ে পীর ছাহেব কেবলাজানের নিকট গমন করিবে না, যখন তিনি কষ্ট পাইতে পারেন বা বিরক্ত হইতে পারেন।”
৪২. “পীরের অছিলাতেই নাফসে আম্মারা-যাহা সৃষ্টিগতভাবে কলুষিত, তাহা পবিত্রতা হাছিল করে; পরিশুদ্ধ হয় এবং আম্মারা বা কলুষতা হইতে প্রশান্তির মাকামে উপনীত হয় এবং সৃষ্টিগত কুফরী হইতে হাকীকী ৰা প্রকৃত ইসলামে সমুন্নত হয়।”
৪৩. “পীরই একমাত্র ব্যক্তি, যাহার উসিলায় মানুষ মহিমান্বিত আল্লাহ্ পর্যন্ত পৌছায়, যাহা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যানের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট।”
৪৪. “যিনি অন্ধকার হতে আলোর দিকে এগিয়ে যাবার পথ দেখান তিনি’ই গুরু।”
৪৫. খাঁটি ওলী আল্লাহ পাওয়া ভারী কঠিন। তাই খাঁটি ওলী আল্লাহ পাওয়ার জন্য তোমরা আল্লাহর দরবারে কান্দো।
৪৬. “কামেল পীরের মহব্বত, কামেল পীরের ভালোবাসা খোদাপ্রাপ্তির পথে উত্তম নেয়ামত।”
৪৭. “এশকেও গভীরও তথ্য যদি চিনিতে চাও, কামেল পীরের পদতলে নেছার হইয়া যাও।”
৪৮. “যেদিন তামাম দুনিয়ার মানুষ নিশির শেষ ভাগে আল্লাহকে ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহমানু, ইয়া রাহিম বলে ডাকবে, সেই দিন দুনিয়াতে আর কোন গযব থাকবে না। আসমান থেকে আর কোন গযব দুনিয়াতে আসবে না। দুনিয়াতে যে গযব আছে তা মাটিতে দাফন হয়ে যাবে। মানুষ অনাবিল শান্তির অধিকারী হবে। আবার গাছে ফল হবে। জমিনে শস্য হবে। পানিতে মাছ হবে। আকাশে-বাতাসে আল্লাহর রহমতের ঢেউ খেলতে থাকবে।”
৪৯. “ইসলামের সত্যিকার নীতি প্রতিষ্ঠা করেছে একমাত্র সত্যিকার মুসলমানগণ। সত্যিকার মুসলমান হলেন তারাই যারা কাম-ক্রোধ, লোভ-মোহ, মদ-মাৎসর্য সহ পার্থিব কামনা বাসনার উর্ধ্বে।”
৫০. আল্লাহপাক ফরমান, “যদিও ভাংগিয়া থাক তওবা শতবার, তবুও রেখেছি খুলে তওবার দুয়ার; পাপী-তাপী যতসব এস ত্বরা করি, করিব তাদের ক্ষমা, এ আদেশ আমারই।”
৫১. “তওবা হইল কৃত পাপের জন্য লজ্জিত বা অনুতপ্ত হওয়া। অন্য কথায়ঃ কৃত পাপ বা অপরাধের জন্য খোদার ভয়ে ভীত হওয়া, লজ্জিত হওয়া, অনুতপ্ত হওয়া, অনুতাপ অশ্রুসহ মহান খোদাতায়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা অর্থাৎ খোদার দিকে প্রত্যাবর্তন করাই তওবা।”
৫২. “মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই কমবেশী ত্রুটি-বিচ্যুতি পূর্ণ। মানুষের হকিকত সিফাতে হাকীকীতে নিহিত। সিফাতে হাকীকী হইল আল্লাহতায়ালার আটটি বিশেষ গুণ। যথাঃ হায়াত, এলেম, কুদরত, এরাদত, বাছারাত, সামাওয়াত, কালাম ও তাকবীন। সিফাতে হাকীকীর দুইটা অবস্থা বর্তমান। একটি নিখুঁত অবস্থা, অপরটি খুঁতবিশিষ্ট অবস্থা। একদিকে নিখুঁত জ্ঞান, নিখুঁত ক্ষমতা, নিখুঁত শ্রবণ শক্তি, নিখুঁত দর্শন শক্তি ইত্যাদি। অন্যদিকে খুঁত বিশিষ্ট গুণাগুণ। সিফাতে হাকীকীর খুঁত বিশিষ্ট অবস্থাই হইল সৃষ্টির হকিকত।”
৫৩. “মানুষের সমুদয় গুণাগুণ তথা কল্পন, দর্শন, শ্রবণ, চিন্তন, সৃজন, কথন-সবই আল্লাহতায়ালার দান। মানুষের হৃদয় বা কালব-তাহাও আল্লাহতায়ালার আমানত বা দান। এই আমানতের খেয়ানত যে করিবে, তাহার পরিণাম ভয়াবহ।”
৫৪. “এক জাকের অপর জাকেরের প্রতি সহোদর ভাই এর চেয়েও সত্তরগুন মহব্বত রাখিতে হইবে। কার্যক্ষেত্রেও সেই মহব্বতের প্রমান দিতে হইবে।”
৫৫. “কোন জাকের যদি আপনার বাড়ীতে যায়, তাহা হইলে মনে করিবেন আপনার পীরই আপনার বাড়ীতে আসিয়াছেন।”
৫৬. “আদব, বুদ্ধি, মহব্বত ও সাহসের সাথে সমস্ত কাজ করলে আল্লাহ আপনাদের সাথে থাকবেন।”
৫৭. “মুসিবত থেকে যদি বাঁচতে চাও, তবো আপন পীরের কদমকে শক্ত করিয়া ধরো।”
৫৮. “তোমরা যতই জ্ঞানী, গুণী, উচ্চ শিক্ষিত হও না কেন, পরবর্তী মূহুর্ত তোমাদের জন্য কি বহন করিয়া আনিতেছে তাহা তোমরা জান না। (মুসিবত থেকে বাচঁতে পীরের কদমকে শক্ত করিয়া ধরো।)”
৫৯. “যদি দুর্বিপাকের তুফান থেকে বাঁচতে চাও, তবে পীরের সংঘকে নূহের তরী মনে করে শক্ত করিয়া ধর, নচেৎ এমনই দুর্বিপাকের তুফান আসিবে, যাহা তোমার সবল ভিত্তিকে ভাংগিয়া মেছমার করে ফেলিবে।”
৬০. “আল্লাহতায়ালার বুজুর্গানের কদম যাহারা ধরিয়া থাকেন, আল্লাহপাক তাহাদের রক্ষা করেন। সমস্ত বিপদ-আপদে, জীবনে চলার পথে আল্লাহপাকের রহমতের ছায়া পাওয়ার জন্য মোর্শেদে কামেল যে পথ আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে প্রদর্শন করেন, সেই পথ অনুসরণ করিলেই, বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।”
৬১. “নবীজীর (সাঃ) মহব্বতই হলো ঈমান। যার অন্তরে রাসূল (সাঃ) এর মহব্বত যতবেশী তার ঈমানও ততবেশী। যার অন্তরে নবীজীর মহব্বত নাই তার ঈমানও নাই। সে সরাসরি বেঈমান।”
৬২. “সমস্ত সৃষ্টির হকিকত, হকিকতে মুহাম্মদীতে নিহিত। নবী (আঃ) গণের হকিকত, ফেরেশতাদের হকিকত, মোমিনদের হকিকত-সবই হকিকতে মুহাম্মদীর প্রতিবিম্ব বা প্রতিচ্ছায়াস্বরূপ।”
৬৩. “সৃষ্ট জগতের উপর যত রকমের রহমত বা ফয়েজ অবিরাম ওয়ারেদ হইতেছে তাহা সকলই হকিকতে মুহাম্মদীর মধ্যস্থতা হইয়া আসিতেছে। কাজেই, যে কেহ, যাহা কিছুই অর্জন করুক না কেন, যাহা কিছুই খোদাতায়ালার দরবার থেকে প্রাপ্ত হউক না কেন, তাহা সবই রাসূলে পাক (সাঃ) এর মাধ্যম হইয়া আসিতেছে।”
৬৪. “পীরের মহব্বত অর্জনের চেষ্টা কর। পীরকে ভালবাস। তাহা হইলে আল্লাহ রাসূলের মহব্বত তোমাদের দেলে পয়দা হইবে। আল্লাহ ও রাসূলের খাছ হোব্ব-এশক-মহব্বতের ফয়েজ তোমরা পাইতে থাকিবে।”
৬৫. “সৃষ্টিজগতস্থিত সকল বস্তুর অনু-পরমাণুই আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর যৌথ নাম সম্বলিত কালেমা শরীফের জেকের করিয়া আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতেছে। একমাত্র মানবকুলই অকৃতজ্ঞ।”
৬৬. “আল্লাহর ওলীগণ হলেন জ্বলন্ত লৌহসদৃশ। এক খন্ড লৌহ যেইরুপ আগুনে পুড়িয়া আগুনের রং ধারন করে, সেইরুপ আল্লাহর ওলীগণ আল্লাহ তায়ালার নূরের তাজাল্লীতে জ্বলিয়া আল্লাহর গুণে গুনান্বিত হন।”
৬৭. “ওলী-আল্লাহসকল সেই জেকেরকারী দল-যাহাদের অছিলায় গাছে ফল হয়, জমিনে শস্য হয়, পানিতে মাছ হয়, আকাশ হইতে মিঠা পানি বর্ষে। তাঁহাদের অছিলাতেই জগতে রহমতের ধারা প্রবাহিত থাকে।”
৬৮. “কামেল পীর সকলের সমষ্টি। কামেল পীরের তেত্রিশ কোটি লতিফা আছে। একজন কামেল এক সংগে তেত্রিশ কোটি সাধকের ছুরাতে মুরিদানদেরকে স্বপ্নে বা কাশফে ফয়েজ প্রধান করিতে সক্ষম। ইহাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই। আল্লাহ প্রদত্ত বহু ক্ষমতার মধ্যে ইহা সামান্য এক নিদর্শন।”
৬৯. “পীরের সন্তুষ্টি অর্জনই হইল মূল কথা। পীরের সন্তুষ্টির পশ্চাতে আল্লাহ ও রাসূলের সন্তুষ্টির অবস্থান।”
৭০. “ধন সম্পদ, আত্নীয়-স্বজন, পুত্র-পরিজন, এমন কি স্বীয় প্রাণাপেক্ষা যদি আপন পীরকে ভালোবাসিতে পার, তাহা হইলে আল্লাহর মারেফাত অর্জন করা বা পরিচয় জ্ঞান লাভ করা তোমাদের জন্য খুবই সহজ হইবে।”
৭১. “কামেল পীরগণের কর্মকান্ডও-নবী-রাসূলের অনুরুপ।”
৭২. “যারা ফকির লোকের সাথে বেয়াদবি করবে, মৃত্যুর পূর্বে তারা ইতরের কাছে লাঞ্চিত হয়ে মরবে।”
৭৩. “সবলের হাত থেকে দুর্বলকে রক্ষা করাই মানবতার ধর্ম। মানবতা ও জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্বই ইসলামের আদর্শ ও বৈশিষ্ট্য।”
৭৪. “মানুষের সাথে এক দুষ্টু সঙ্গী আছে, যাহার নাম নফস্। মানুষকে খোদাবিমূখী রাখাই তাহার কাজ।”
৭৫. “পরপারের পাথেয়, পরকালের Establishment পরকালের Environment দুনিয়া থেকে তৈরি করে নিতে হবে। যদি দুনিয়া থেকে তৈরি করতে না পারেন তবে নিশ্চয়ই আপনাকে মহান প্রতিপালকের কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে।”
৭৬. “একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতা স্বীয় পীর ভিন্ন যেনো অন্য কোথাও না যায়। তরিকতের পরিভাষায় একে তৌহিদে মতলব বলে, যেই মুরিদের তৌহিদে মতলব নাই সে বিভিন্ন দরবারে ঘুরতে পারবে, কিন্তু মঞ্জিলে মাকছুদে কষ্মিনকালেও পৌছাইতে পারিবেনা!”
৭৭. “যে সকল সাধক বেলায়েতের নবুয়ত ও কামালাতে নবুয়তের মর্যাদাপ্রাপ্ত-তাহারাই স্বীকৃতি প্রাপ্ত ওলি আল্লাহ। কেবলমাত্র তাঁহাদের দ্বারাই যদি উরস পরিচালিত হয়, তবেই তাহা কবুলিয়তের যোগ্যতা প্রাপ্ত হয়।” (সূত্রঃ নসিহতঃ খন্ড-২১; নসিহত নং-১৩০)
৭৮. “নবী-রাসূল (আঃ) ও ওলী-আলাহগণের আরওয়াহপাকে ছওয়াব রেছানী করা প্রত্যেক মােসলমানেরই কর্তব্য। কারণ তাহারা আল্লাহর রহমতস্বরূপ। তাহাদের অছিলাতেই আল্লাহপাক তদীয় সৃষ্টির প্রতি রহমত বিতরণ অব্যাহত রাখিয়াছেন তাহাদের অছিলাতেই জমিতে ফসল হয়, পানিতে মাছ হয়, গাছে ফল হয়, আকাশ হইতে মিঠা পানি বর্ষে তাঁহাদের অছিলাতেই মানুষ আল্লাহর পরিচয় জ্ঞান অর্জন করে। তাই তাহাদের আরওয়াহপাকে ছওয়াব নজরানা দেওয়া দুনিয়াবাসী মােসলমানবর্গের নৈতিক দায়িত্ব।”
৭৯. “শরীয়তে পাঁচটি রোকন বা ভিত্তি নির্ধারিত আছে। ঠিক তেমনি তরিকতের পাঁচটি রোকন আছে। শরীয়তের রোকন সমুহ হইলঃ ঈমান, নামাজ, যাকাত, রোজা ও হজ্জ। আর তরিকতের পাঁচটি রোকন হলঃ জেকের, রাবেতা, শোগল, মুরাকাবা ও মোহাছাবা।”
৮০. “খোদাতায়ালার জেকের হইল নামাজের অন্তর বা অভ্যন্তরীণ দিক। মুখে আল্লাহর নাম আর অন্তরে দুনিয়ার চিন্তা এমন নামাজে তাই কোন ফল হয় না।মৌখিক ভালবাসার কোন দাম নাই। ইহাকে লিপসিমপ্যাথি বলা হয়।”
৮১. “পীরের কোন হুকুম যদি শরীয়তের খেলাফ মনে হয়, তবুও বিনা দ্বিধায় তাহা পালন করিবে। তবেই কল্যাণ। কারণ কামেল পীর যাহা কিছুই করেন না কেন, তাহা এলহামের নির্দেশে করেন।”
৮২. “পীরের আদেশ বিনা দ্বিধায় পালনের ভিতরেই মুরীদের মঙ্গল নিহিত।”
৮৩. “সর্বাবস্থায় অর্থাৎ চলা ফেরা, উঠা-বসা, পানাহার, শয়ন-উপবেসন ইত্যাদিতে পীরকে অনুসরণ করিবে। ইহাতে বহু মঙ্গল লুকায়িত।”
৮৪. “সর্বাবস্থায় পীরের অনুসরন করাই উত্তম। পীরের সহিত সাক্ষাতান্তে হোজরা হইতে বাহির হওয়ার সময় এমন ভাবে প্রস্থান করিবে যেন, পীরের প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিতে না হয়।”
৮৫. “তুমি মুরিদ হও ‘বা’ না হও বাবা তুমি একজন ভালো মানুষ হও!”
৮৬. “কাম, ক্রোধ, লোভ মোহ, মদ, মাৎসর্য, হিংসা, কিনা, রিয়া, কামনা-বাসনা ইত্যাদি অসৎ রিপুসমূহ নাফস হইতেই সৃষ্ট। সর্বদা খোদাদ্রোহিতায় লিপ্ত থাকা নাফসের জাত স্বভাব।”
৮৭. “নাফসকে খাদমুক্ত করিতে হইলে তথা নাফসের অন্ধকার দোষসমূহ ঝাড়িয়া ফেলিতে হইলে নাফসকে দাহন করা প্রয়োজন। কিন্তু জাগতিক আগুন দ্বারা কিংবা নাইট্রিক এসিড দ্বারা নাফসকে জ্বালানো যায় না। নাফসকে দাহনের জন্য যে অগ্নির প্রয়োজন হয় তাহা দেহে উৎপন্ন হয় কেবলমাত্র আনাহারের দ্বারা।”
৮৮. “রোজার অর্থই হইল ছুবেহ ছাদেক হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অনাহারে থাকা ও প্রবৃত্তিকে সংযত রাখা। রোজার অনাহারে দেহে উৎপন্ন আগুন আল্লাহর শত্রু নাফসে আম্মারাকে পোড়াইয়া তাহার অনিষ্টকর দোষসমূহ ত্যাগ করিতে বাধ্য করে।”
৮৯. “যে কোন যুদ্ধেই বিজয়ের জন্য যুদ্ধাস্ত্রের প্রয়োজন। নাফসের সাথে যুদ্ধে রোজার অনাহার প্রতিরক্ষামূলক দায়িত্ব পালন করে। কাম, ক্রোধ, লোভ-মোহ, মদ-মাৎসরয, হিংসা-কিনা, রিয়া, কামনা-বাসনা ইত্যাদির প্রভাবকে রোজায় সৃষ্ট আগুন দুর্বল করিয়া দেয়।”
৯০. “মানবদেহে এক টুকরা মাংশপিন্ড আছে-যাহার নাম কালব। কালব পবিত্র হইলে সমগ্র মানবসত্ত্বাই পবিত্র হয়।”
৯১. “কালবের অপবিত্রতা বা অপরিচ্ছন্নতার মূল কারণ নাফসের অন্যায় ও পাপাচার। যতক্ষণ পর্যন্ত নাফস পবিত্র না হইবে ততক্ষণ কালবও পবিত্র হইবে না।”
৯২. “মানবদেহে চারটি জড় উপাদান তথা আগুন, পানি, মাটি ও বাতাসের সমন্বয়ে গঠিত। চতুর্বিধ জড় উপাদানে গঠিত মানব শরীরে আরও এক জড় সত্ত্বা বর্তমান-যাহাকে ‘নাফস’ বলে। নাফসের উৎস জড় উপাদান হওয়াতে সংগত কারণেই ইহার বৈশিষ্ট বা স্বভাব অন্ধকারময়। যাবতীয় কুচিন্তা ও কু-স্বভাব নাফস হইতেই উৎপন্ন হয়।”
৯৩. “আল্লাহ তা-আলার পথের পথিকদের সব চেয়ে বড় সম্পদ আদব। বেয়াদব কখনই খোদাতায়ালা প্রেম লাভ করিতে পারিবেনা।”
৯৪. “খোদা তালাশী ব্যক্তিবর্গ পীরে কামেলের খেদমতের মাধ্যমেই খোদাতায়ালার জাত ও সিফাতের জ্ঞান অর্জন করেন!”
৯৫. “বাতেনী আনুগত্য ব্যতীত প্রিয়নবী (সাঃ) এর মহব্বত দেলে পয়দা হয় না। আর প্রিয়নবী (সঃ)-এর মহব্বত ব্যতীত দেল থেকে পাপ ও অন্যায়ের মোহ দূর হয় না। দেল পরিষ্কার হয় না।”
৯৬. “বাতেনী আনুগত্যের জন্য প্রয়োজন আধ্যাত্মিক অনুশীলন।”
৯৭. “সাইয়্যেদুল বাশার বা মানব সরদার। তিনি(রাসূল সা.) রাহমাতুল্লিল আল-আমিন বা জগতসমূহের জন্য রহমত। তিনি(রাসূল সা.) জাতে (সত্তায়) উদ্ভুত প্রেমের প্রথম বিকাশ।”
৯৮. তিনি(রাসূল সাঃ)-ই সৃষ্টির কারণ ও উৎস। তাহাকে সৃষ্টি না করিলে আল্লাহতায়ালা আর কিছুই সৃষ্টি করিতেন না।
৯৯. “ঐ লােকের কপাল পুড়ে যায়, যে কামেল ও মোকাম্মেল পীরের ভুল খোঁজে।”
১০০. “আধ্যাত্মিক চর্চার মাধ্যমে নৈতিক অবক্ষয় রােধ হয়, মানুষের সুকুমার বৃত্তি বিকশিত হয়।”
১০১. “পীরের মহব্বতই খোদাপ্রাপ্তি সাধনার প্রথম দরজা।”
১০২. “পীরের সন্তুষ্টি অর্জনই হইল মূল কথা। পীরের সন্তুষ্টির পশ্চাতে আল্লাহ ও রাসূলের সন্তুষ্টির অবস্থান।”
১০৩. “খোদাকে পাওয়ার ইচ্ছা থাকলে কোনো কামেল পীর তালাশ করে নাও! কেননা, কামেল পীরের সাহায্য ব্যতিরেকে জীবনভর পরিশ্রম করলেও আল্লাহর সন্ধান পাবে না।”
১০৪. “যিনি ভাগ্যগুণে কামেল পীর পাইলেন, আল্লাহকে পাওয়া তার জন্য সহজ হইল।”
১০৫. “অমূল্য সময় চলিয়া যায়। তোমরা আল্লাহতায়ালার রেজামন্দি হাসিলের জন্য দেলে পীরের মহব্বত কায়েম কর।”
১০৬. “যখন কালব ও রূহ এক হয়, তখন ছালেক(মুরীদ) আল্লাহতায়ালার প্রেম সমুদ্রে সাঁতার কাটিতে থাকে। তখন আল্লাহর গুণে ছালেকের চরিত্র গঠন হইতে থাকে।”
১০৭. “নাফসকে বাধ্য করিয়া আল্লাহর পথে আনা খুবই কষ্টকর। তাই পীরে কামেলের পাক তাওয়াজ্জুহ দ্বারা নিজের নাফসকে সংশোধন কর।”
১০৮. “নিজের কালবকে জিন্দা করিয়া নাফসকে সংশোধন করিয়া লও। তাহা হইলে নাফস, রূহ ও কালব জিন্দা হইয়া আল্লাহতায়ালার প্রেমের সমুদ্রে সাঁতার কাটিবে।”
১০৯. “নিজেকে চিনিলে, আল্লাহকে চিনিতে পারিবে। মান আরাফা নাফসাহু ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু। তখন আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্য তোমাদের নসিব হইবে।”
১১০. “তুমি যত বড়ই জ্ঞানী, গুণী, বুদ্ধিমান, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক হও না কেন, শেষের ডাক আসিলে আর এক মুহূর্ত দেরী করিতে পারিবে না। শেষের ডাক কেহই ফিরাইয়া রাখিতে পারে না। অতএব পীরের সহব্বতে থাকিয়া এই দেলকে পরিস্কার করাইয়া লও। দিন থাকিতে শেষের ডাকের জন্য প্রস্তুত হও।”
১১১. “নিজ পীরের প্রতি এমন বিশ্বাস রাখিবে যে, পীর ভিন্ন অন্য কেহই আমাকে খোদাতায়ালা পর্যন্ত পৌছাইয়া দিতে পারিবেনা।”
১১২. “পীরের ভালবাসার বাহনে চড়িয়া আল্লাহর-রাসূলের প্রেম সমুদ্রে সন্তরণের যোগ্যতা অর্জন কর । আশা করা যায় তোমরাও এই ধন , অমূল্য সম্পদ লাভে ধন্য হইবে ।’
১১৩. “পীরকে কষ্ট প্রদানের মধ্যেই মুরিদের বিপদ। ইহা ব্যতীত অন্য যে কোন ভুল-ত্রুটি হউক না কেন, তাহার প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব কিন্তু পীরকে ব্যথা দেওয়ার কোন প্রতিকার নাই। পীরের অসন্তুষ্টিই মুরীদের দুর্ভাগ্যের কারণ।”
১১৪. পীরের দরবারে নগ্নপায়ে চলিবে। ইহাই মুরীদের জন্য উত্তম। পীরের নিকট মুরীদ সব সময় ভিখারী বা মিসকিন। আর মিসকিনকে মিসকিন হালতেই থাকা উচিৎ।
১১৫. ” অল্প আহার , অল্প নিদ্রা ও অল্প কথার অভ্যাস করা একান্ত আবশ্যক ।”
১১৬. ” আল্লাহতায়ালা বলেন , ” আল্লাহকে ভয় করো এবং তাহাকে পাইবার জন্য উসিলা অন্বেষণ করো ” । সেই ওসিলাই যামানার কামেল ওলীসকল , যেহেতু তাঁহাদের পাক আত্মার যোগাযোগের বিশ্ব আত্মা সান্নিধ্য লাভ হয় ।”
১১৭. ” হে জাকেরানগণ ! বর্তমান যামানা কঠিন মুছিবতের সময় । ইহা এমন এক সময় যখন জলে-স্থলে আকাশে-বাতাসে সর্বত্রই বিপদ দেখিতে পাইবে । সেই কঠিন বিপদের সময়ে যদি বাঁচাতে চাও , যামানার কামেলকে শক্ত করিয়া ধর ।”
১১৮. ” কোন মুরিদ যদি বিপদে পতিত হইয়া পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে হইতে আপন পীরকে স্মরণ করে , আর পীর যদি পৃথিবীর অপর প্রান্তে থাকে । এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্তের মুরিদের ডাকে সাড়া দিয়ে পীরে কামেল আত্বিকভাবে তাওয়াজ্জুহ এর হাত বাড়াইয়া বিপদগ্রস্ত মানুষকে বিপদ হইতে রক্ষা করিতে পারেন।”
১১৯. ” মাজার জিয়ারত আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায় । বাতেনী ফায়েজ হাসিল হয় , দুনিয়াবী বিভিন্ন মকসুদ পূন্যাত্মার ওসিলা আল্লাহ ক্ষমা করেন এবং পূর্ণ করেন ।”
১২০. ” শরীয়তের খেলাফ হয় – এমন কোন কাজ মাজারে করিবে না । ইহা ঘোর বেয়াদবী ।”
১২১. ” বাইন কাঁদায় বাস করে । কিন্তু তাহাদের গায়ে কাঁদা লাগে না । বাইন মাছ কাদায় থাকিয়া যদি কাঁদা হইতে বাঁচিতে পারে তবে তুমি মানুষ হইয়াও গুণাহের মধ্যে ধাকিয়া কেন গুনাহের কাদা হইতে বাঁচাতে পারবে না ? অতএব , পীরের মহব্বতের চাদর দিয়ে নিজেকে ঢাক । তাহা হইলেই নিজেকে সকল প্রকার গুনাহ ও গোমরাহী হইতে বাঁচাইতে পারিবে । আল্লাহর প্রেমে দেল ভরিয়া উঠিবে ।”
১২২. ” বাবা ! এমনিভাবে গজব আসতে শুরু করবে , যেমনিভাবে তসবিহ এর দানা একটার পর একটা আসিতে থাকে ঠিক তসবিহ এর দানার মতো গজব আসতে শুরু করবে । সেই গজব থেকে যদি বাঁচতে চাও তরিকতের ওজিফা কালাম যেন ভুলো না , আপন পীরের কদমকে নূহের তরী মনে করে শক্ত করিয়া ধর ।”
১২৩. ” বাবা ! অচিরেই গোটা পৃথিবীতে লোহার মই টানা হবে , মু’মিন ছাড়া কেহ সেই গজব থেকে রেহাই পাবে না।”
১২৪. ” যেদিন তামাম দুনিয়ার অন্ধ মানুষ সকল নিশির শেষভাগে , সুখের নিদ্রা ত্যাগ করে নিবেদিত প্রাণ আল্লাহতায়ালাকে প্রাণ ভরে ডাকবে , সেদিন তামাম দুনিয়াতে রহমতে ভরে যাবে । গাছে ফল হবে , জমিন শস্য হবে , পুকুরে মাছ হবে । দুঃখ-দৈন্যের লেশমাত্র আর থাকিবে না ।”
১২৫. ” যদি এক মুহূর্ত আপন পীরের পাক দলের সাথে তোমার নাপাক দেল মিশাইতে পার , তবে তোমার দেলে গওহর পয়দা হইবে , গোলাপ ফুলের মত ফুটিয়া , ১৪ই রাত্রির পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল হইবে । দেলে আল্লাহ আল্লাহ জেকের জারী হইবে । কখনও আর এই জেকের বন্ধ হইবে না ।”
১২৬. ” খোদাতায়ালার নিদর্শন দেখিবার জন্য দেল দরিয়ায় ডুব দিতে হইবে । কিন্তু ওসিলা ব্যতীত একা – একা কস্মিনকালেও দেলসমুদ্রে খেয়াল-কে ডুবানো যায় না , আজ অবধি কেহ পারে নাই এবং পারবেও না । তাই , প্রয়োজন উসিলা বা মাধ্যমের । আর সেই মাধ্যমই হইল যামানার কামেল ওলীসকল ।”
১২৭. ” অলী আল্লাহসকল যেমন তাহাদের জীবদ্দশায় সকলের জন্য খোদা প্রাপ্তির ওসিলা , তেমনি দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণ প্রাপ্তির মাধ্যম ।”
১২৮. ” অলী-আল্লাহগণের মাজার জিয়ারতে ইহ ও পারোলৌকিক-উভয় কল্যাণ নিহিত । মাজার জিয়ারতে দুনিয়ার মহব্বত হ্রাস পায় । মনের অহংবোধ ক্ষণিকের জন্য হইলেও স্তিমিত হয় ।”
১২৯. ” মুরিদ হলো পীরের আয়না । অর্থাৎ মুরিদের চলা-ফেরা , কথা-বার্তা , চলন-বলন দেখে মানুষ চিন্তা করে লোকটার পীর কেমন । কেবলাজান হুজুর পাক বলতেন , পীরের খাসলতে খাসলত ধর তবেই ত্রাণ ও শান্তি।”
আরো পড়ুন-
- পীর আউলিয়ার ওরস শরীফ জায়েজ ইসলামের দৃষ্টিতে
- উসিলা ধরা জায়েজ কোরআন হাদিস থেকে দলিল
- রাসুল সাঃ মেরাজের রাতে আল্লাহকে দেখেছেন কোরআন হাদিসের দলিল
- মাজারে সেজদা করা যাবে কিনা কোরআন হাদিস থেকে
- নবী আমাদের মতই মানুষ ছিলেন এই বিশ্বাস কাফেরদের ছিল
তথ্যসূত্রঃ
sufibad.com/category/খাজাবাবা-ফরিদপুরী-রাঃ-বা/
sufibad24.com/post/tag/খাজাবাবা-ফরিদপুরী-কুঃছে/
সূত্র: বিশ্বওলী হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের নসিহত-সকল খন্ড একত্রের বিভিন্ন স্থান হতে সংগ্রহ করা হয়েছে।
সূত্র: শাহসূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের নসিহত শরীফের বিভিন্ন অংশ ও অডিও বাণী হতে।