ইসলাম নলেজইসলামিক প্রশ্ন উত্তর

রাসুল সাঃ হায়াতুন্নবী বা জিন্দা নবী কোরআন হাদিসের দলিল

এই পোষ্টে রাসুল সাঃ হায়াতুন্নবী বা জিন্দা নবী কোরআন হাদিসের দলিল প্রমাণ সরূপ আলোচনা করা হলো। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কবর দেশে জীবিত আছেন।

নবীজি হায়াতুন্নবী

অনেকে কোরআনের আয়াত দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হায়াতুন্নবী নবী, জিন্দা নবী অস্বীকার করে, মৃত নবী বলে নবীপাকের শানে বিয়াদবী করে, যে আকিদা পোষন করে আমাদের ঈমান ধ্বংস করছে। ইসলামে ঈমান আগে তারপর ইবাদত, যদি ঈমান না থাকে তাহলে ইবাদত করে কি লাভ হবে?

কোরআনের যে আয়াত দ্বারা বিভ্রান্ত করে থাকে তা তুলে ধরলাম-

“প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে।” (সুরা আলে ইমরান,আয়াত ১৮৫)

এখন কথা হলো নবী-রাসুলগণ (আলাইহিস সালাম) এর মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেছেন এ নিয়ে কোন দ্বন্দ্ব নেই। কারণ এটা স্বশরীরে স্বচোক্ষে মানুষ দেখেছে। কিন্তু সবাই সাধারণ মানুষের মত মৃত স্বাদ গ্রহণ করেন না বা মৃত্যুবরণ করেন না, এটাও আমাদের বুঝতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:–
আল্লাহর পথে যারা শহীদ হয় তাদের তোমরা মৃত বল না। বরং তারা জীবিত। তবে তা তোমরা উপলব্ধি করতে পারো না। (সূরা বাকারা-১৫৪)


উক্ত আয়াতের স্পষ্ট ভাষ্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শহীদগণ কবরে জীবিত।
শহীদগণ মৃত্যুর পরেও তারা জীবিত, সুতরাং এইখানে মৃত্যু হচ্ছে ইহকাল থেকে পরকালে যাবার
একটি সেতু, শহীদগনের অনেক উর্দ্ধে নবীদের স্থান!

কেউ যদি তারপরও মৃত মৃত করে কথা বলে তাহলে তারা আল্লাহর কালামকে অস্বীকার করল। আর আল্লাহর আয়াত যে অস্বীকার করল তার কোন ঈমানই থাকলো না। যে হিসেবে কোন বেঈমান লোকের কথা শুনা যায়েজ নয়।

রাসুল সাঃ হায়াতুন্নবী বা জিন্দা নবী

আমাদের প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ব্যাপারে কোরআনে আসছে-
“তবে কেমন হবে যখন আমি (আল্লাহ) প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করবো, এবং হে মাহবুব! আপনাকে তাদের সবার ব্যাপারে সাক্ষী ও পর্যবেক্ষণকারীস্বরূপ উপস্থিত করবো?” (৪:৪১)


মহানবী (সাঃ) যা জানেন না বা দেখেননি সে সম্পর্কে তো তাঁকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্যে বলা হবে না।
“এবং জেনে রেখো, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) রয়েছেন” (৪৯:৭)।


“অতঃপর তোমাদের কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করবেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ)” [৯:৯৪]

এবং “আপনি বলুন: আমল করে যাও; অতঃপর তোমাদের আমল প্রত্যক্ষ করবেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এবং মোমেন মুসলমানবৃন্দ” (৯:১০৫)

সুতরাং যিনি মৃত্যুুর পরেও উম্মতের আমলনামা প্রত্যক্ষ করবেন! তাকে মৃত কিভাবে বলতে পারে। এই আয়াত গুলোর মাধ্যমে নবীজি সাঃ হায়াতুন্নবী এবং নবীজি হাজির নাজির প্রমাণ করে।


*****ইবনুল কায়্যিম:- লিখেন যে- “যদিও হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রূহ মোবারক হযরত আম্বীয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম-এর রূহের সাথে রফীকে আলায় এ রয়েছেন,কিন্তু এতদ্বসত্বেও তাঁর রূহ মোবারক তাঁর শরীর মোবারকের সাথে সম্পর্ক রয়েছে, যে কারণে তিনি সালাম দাতার উত্তর দিয়ে থাকেন। (যাদুল মা’আদ খন্ড:- ২, পৃঃ ৪৯)

নবীরা কি কবরে জীবিত

“সহীহ হাদিসের আলোকে“ হায়াতুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
হযরত মূসা (আলাইহিস সালাম) ও অন্যান্য আম্বিয়া (আলাইহিস সালাম)-বৃন্দ তাঁদের মাযার-রওজায় জীবিতাবস্থায় বর্তমান।


★দলিল:-০১
হযরত আনাস বিন মালেক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস, যিনি বলেন: “আমি আগমন করি”; আর হযরত হাদ্দিব(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর বর্ণনায় হাদীসের কথাগুলো ছিলো এ রকম–
“মে’রাজ রজনীতে ভ্রমণের সময় আমি লাল টিলার সন্নিকটে হযরত মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে অতিক্রমকালে তাঁকে তাঁর রওযা শরীফে নামায আদায়রত অবস্থায় দেখতে পাই। [সহীহ মুসলিম,বই নং ৩০, হাদীস নং–৫৮৫৮]


★দলিল:-০২
হযরত আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে কা’বা শরীফ তাওয়াফ করছিলাম। আমি দেখলাম, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারো সাথে মুসাফাহা করলেন, অথচ আমি কাউকে দেখলামনা। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কারো সাথে মুসাফাহা করলেন, অথচ আমরা তাঁকে দেখলামনা। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “উনি হচ্ছেন আমার ভাই ঈসা ইবনু মারইয়াম। আমি তাঁর তাওয়াফ শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম, অতঃপর (তাওয়াফ শেষ হলে) আমি তাঁকে সালাম দিলাম। রেফারেন্সঃ (তাফসীরে রুহুল মা’আনী-১১/২১৮)


বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম কাস্তাল্লানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
“এ কথা প্রমাণিত যে, আম্বিয়ায়ে কেরাম হজ্জ করেন এবং তাসবিয়াহ পাঠ করেন”।
রেফারেন্সঃ (যারকানী ‘আলাল মাওয়াহিবঃ৭/৩৬৫, ১১/৩৬৭)


★দলিল:- ০৩
আল্লাহর হাবিব হুজুরপাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেন-

অতঃপর আমি মসজিদটির কিবলার দিকে এলাম। তারপর তিনি ওখানে বুরাকটি বাঁধলেন। তারপর আমি বাইতুল মুকাদ্দাসের মুসজিদে-আকসায় ঢুকলাম। অতঃপর আমার সামনে নবীদের জমায়েত করা হল। তারপর জিবরীল আমাকে এগিয়ে দিলেন। পরিশেষে আমি তাঁদের ইমামতি করলাম। (তফসীর ইবনে কাসীর,৩য় খণ্ড,৭মপৃষ্ঠা)

রাসুল সাঃ হায়াতুন্নবী বা জিন্দা নবী হাদিসের দলিল

★দলিল:- ০৪
সুনানে বাগজারে সহিহ সনদে বর্ণিত হাদিস আল্লাহর হাবিব হুজুরপাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
এরশাদ করেন সাহাবিদেরকে, আমার ওফাতের পর তোমরা বিলাপ করে কেঁদোনা। কেননা আমি রাসুল সবার মতো মারা যাবোনা। আমি রাসুল রওজা শরীফ হতে তোমাদের আমল দেখতে পাবো। যখন দেখবো তোমরা ভালো কাজ করছো তখন আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবো আর যখন দেখবো তোমরা খারাপ কাজ করছো তখন আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবো। হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন নবীরা কবরে জীবিত।আর তারা সেখানে নামায পড়েন।
{মুসনাদুল বাজ্জার,হাদীস নং- ৬৮৮৮, মুসনাদে আবী ইয়ালা,হাদীস নং-৩৪২৫, সহীহ কুনুযুস সুন্নাতির নববিয়্যাহ,হাদীস}


মুসলমানদের আকিদা হচ্ছে-রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলমে বরযখে নিজ কবর মুবারকে সশরীরে জীবিত আছেন। তাইতো কোনো মুসলমান দূর থেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ……..করলে সেই ব্যক্তির পক্ষ থেকে তা ফেরেশতার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট পৌঁছানো হয় এবং তিনি তা গ্রহণ করেন।এছাড়া কেউ রওজা মুবারকের নিকট এসে সালাত ও সালাম পাঠ করলে তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সরাসরি গ্রহণ করেন।

হায়াতুন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আকিদা ইসলামের দলিল দিয়ে প্রমাণিত। [তথ্যসূত্র: সহিহ মুসলিম,২য় খন্ড, পৃষ্ঠা-১৭৮/সুনানু বাইহাকি, হাদিস:১৫৮৩/সুনানু দারিমি, হাদিস: ২৭ নবীগণ কবরে জীবিত হওয়ার
দলীল।


★দলিল:- ০৫
হযরত আবূ হোরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর সূত্রে বর্ণিত; মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এরশাদ ফরমান: “আমি নিজেকে ’হিজর’-এর মধ্যে পেলাম এবং কোরাইশ গোত্র আমাকে মে’রাজের রাতের ভ্রমণ সম্পর্কে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিল। আমাকে বায়তুল মাকদিস সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়, যা আমার স্মৃতিতে রক্ষিত ছিল না। এতে আমি পেরেশানগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম; এমন পর্যায়ের পেরেশানির মুখোমুখি ইতিপূর্বে কখনোই হইনি। অতঃপর আল্লাহ পাক এটিকে (বায়তুল মাকদিসকে) আমার চোখের সামনেমেলে ধরেন। আমি তখন এর
দিকে তাকিয়ে তারা (কুরাইশবর্গ) যা যা প্রশ্ন করছিলো সবগুলোরই উত্তর দেই।আমি ওই সময় আম্বিয়া
(আলাইহিস সালাম)-বৃন্দের জমায়েতে নিজেকে দেখতে পাই। আমি হযরত মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে নামায পড়তে দেখি। তিনি দেখতে সুদর্শন (সুঠাম দেহের অধিকারী) ছিলেন, যেন শানু’য়া গোত্রের কোনো পুরুষ।
আমি মরিয়ম তনয় ঈসা মসীহ (আলাইহিস সালাম)-কে দেখি নামায আদায় করতে; সকল মানবের মাঝে তাঁর (চেহারার)সবচেয়ে বেশি সাযুজ্য হলো উরওয়া ইবনে মাস’উদ আস সাকাফী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর সাথে। আমি হযরত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)কেও সালাত আদায় করতে দেখি; মানুষের মাঝে তাঁর (চেহারার)
সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্য হলো তোমাদের সাথী (মহানবী স্বয়ং)-এর সাথে।নামাযের সময় হলে পরে আমি তাতে ইমামতি করি। নামায শেষে কেউ একজন বল্লেন, ‘এই হলেন মালেক (ফেরেশতা), জাহান্নামের রক্ষণাবেক্ষণকারী; তাঁকে সালাম জানান। ’আমি তাঁর দিকে ফিরতেই তিনি আমার আগে (আমাকে) সালাম জানান।”
[সহীহ মুসলিম, ১ম খণ্ড, হাদীস নং- ৩২৮; ইমাম হাফেয ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:)-ও এটিকে নিজ ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৪৮৩ পৃষ্ঠায় সমর্থন দিয়েছেন].


★দলিল:- ০৬
ইবরাহীম ইবনে শায়বান বলেন: আমি কোনো এক বছর হজ্জ্বে গেলে মদীনা মোনাওয়ারায় মহানবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর রওযা শরীফেও যেয়ারত উদ্দেশ্যে যাই। তাঁকে সালাম জানানোর পরে ’হুজরাহ আস্সাআদা’র ভেতর থেকে জবাব শুনতে পাই: ‘ওয়া আলাইকুম আস-সালাম’।
এই বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন মোহাম্মদ ইবনে হিব্বান (রহ:)-এর সূত্রে আবূ নু’য়াইম তাঁর কৃত ‘আত্তারগিব’ (পৃষ্টা-১০২) পুস্তকে; ইবনে আন্নাজ্জার নিজ ‘আখবার আল-মদীনা’ গ্রন্থে(১৪৬ পৃষ্ঠা)। ইবনে জাওযী স্বরচিত ‘মুতির আল-গারাম’ বইয়ে (৪৮৬-৪৯৮ পৃষ্ঠা) এটি উদ্ধৃত করেন; আল-ফায়রোযাবাদী এ রেওয়ায়েত তার ‘আল-সিলাত ওয়াল্বুশর’ পুস্তকে (৫৪ পৃষ্ঠা) এবং ইবনে তাইমিয়া নিজ ‘এয়াতেদা’ আল-সীরাত আল-মুস্তাকীম’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ৩৭৩-৩৭৪) এই বর্ণনা লিপিবদ্ধ করে।


★দলিল:- ০৭
হযরত সাইয়্যেদাহ আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেন:
“যে ঘরে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও আমার পিতা (আবূ বকর–রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে দাফন করা হয়, সেখানে যখনই আমি প্রবেশ করেছি, তখন আমার মাথা থেকে পর্দা সরিয়ে ফেলেছি এই ভেবে যে আমি যাঁদের জেয়ারতে এসেছি তাঁদের একজন আমার পিতা ও অপরজন আমার স্বামী। কিন্তু আল্লাহর নামে শপথ! যখন হযরত উমর ফারূক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ওই ঘরে দাফন হলেন, তখন থেকে আমি আর কখনোই ওখানে পর্দা না করে প্রবেশ করিনি; আমি হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর প্রতি লজ্জার কারণেই এ রকম করতাম।” [মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল,৬ষ্ঠ খণ্ড,২০২পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৫৭০১]


★দলিল:- ০৮
হযরত আম্বিয়া কেরাম আলাইহিমুস সালাম এর কবরের জীবন হুবহু জিবীত থাকা সত্য ও হক্ব। ইমাম বায়হাকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ বিষয় বস্তুর উপর একটি সহীহ হাদিস বর্ণনা করেছেন। হাফেজ ইবনে হাজার (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ফতহুল বারী ৬:৩৫২ এবং হাফেজ সাখাবী আলাকওলুল বদী’-১১৬-এ উক্ত হাদিস্কে বিশুদ্ধ সনদ বিশিষ্ট বলেছেন।
এছাড়া আল্লামা সাখাবী(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) লিখেন যে- আমরা ঈমান রাখি সত্ত্যায়ন করি যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে জীবিত এবং তাঁকে রিযিক দেয়া হয় এবং তাঁর শরীর মোবারক কে মাটি খায়না অর্থাৎ নষ্ট করে না। আর এর উপর উম্মতের ইজমা এবং ইত্তেফাক। (আলকওলুল বদী’- ১২৫)


★দলিল:- ০৯
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তার সংগী সাথীরা যখন ফিরে আসতে থাকে, সাথীরা জুতার আওয়াজ শোনা যায় এমন দূরত্বে চলে আসে এমন সময় দুজন ফেরেশতা তার কবরে আগমন করে। উক্ত ব্যক্তিকে বসিয়ে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার ধারনা কি। যদি লোকটি ঈমানদার হয় তখন সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। এ কথা বলার পর ফেরেশতাদ্বয় তখন তাকে বলে, হে বান্দা তুমি তোমার দোযখের ঠিকানাটা দেখে নাও। তোমার এ সাক্ষীর কারণে মহান আল্লাহ পাক তোমার দোযখের ঠিকানাটাকে বেহেশতের ঠিকানায় পরিণত করে দিয়েছেন। তখন সে ব্যক্তি উভয় ঠিকানাই দেখেতে পাবে। তার কবরকে প্রশস্ত করে দেয়া হবে।

আর মৃত্যু ব্যক্তি যদি মুনাফিক অথবা কাফের হয়। তখন তাকে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেখিয়ে বলা হবে এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার অভিমত কি। উত্তরে তখন সে বলবে, আমিতো তার সম্পর্কে কিছুই জানি না লোকেরা তার সম্পর্কে যা সব বলতো আমিও তাই বলতাম। তখন উক্তি ফেরেশতাদ্বয় তাকে বলবে তুমি তাকে জানতেও চাও নাই অথবা পড়েও দেখ নাই। অতঃপর লোহার হাতুড়ী দ্বারা তাকে এমন ভাবে প্রহার করা হবে যে, প্রহারের আঘাতে সে এমন ভাবে চিৎকার করতে থাকবে। জ্বিন ও মানুষ ছাড়া এই চিতকার সবাই শুনতে পারে।
[সহিহ বোখারী,হাদিস নং-১২৫৭ ই.ফা]

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কবর দেশে জীবিত আছেন

★দলিল:- ১০
হযরত আবু হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত –
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন:- যে ব্যক্তি স্বপ্নে আমাকে দেখলো, সেই আমাকে অচিরেই জাগ্রত অবস্থাতে দেখতে পাবে, শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারেন না। [সহীহ বোখারী শরীফ -হাদিস নং- ৬৫৯২]


★দলিল:- ১১
হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত।রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন-
নবীরা কবরে জীবিত। আর তারা সেখানে নামায পড়েন।
{মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৬৮৮৮, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৩৪২৫, সহীহ কুনুযুস সুন্নাতির নববিয়্যাহ,
হাদীস নং-২২}
তবে সেটা বারযাখী জীবন, যা মানুষের জ্ঞানের বাইরে ঐ সালাত দুনিয়াবী সালাতের সাথে তুলনীয় নয়।


★দলিল:- ১২
হযরত আবু দারদা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-তোমরা জুমআর দিন বেশি বেশি করে দুরুদ পড়। নিশ্চয় ফেরেস্তারা এর উপর স্বাক্ষী থাকে। আর যখন কেউ আমার উপর দুরুদ পড়ে তখনই তা আমার নিকট পেশ করা হয়।আবু দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন-আমি জিজ্ঞাসা করলাম-মৃত্যুর পরেও কি তা পেশ করা হবে?
উত্তরে তিনি বললেন-হ্যাঁ!,কেননা আল্লাহ তায়ালা জমিনের জন্য নবীগণদের দেহ ভক্ষণ করা হারাম করে দিয়েছেন।
{ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৬৩৭, ১৬৩৬, সুনানুস সাগীর লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৪৬৯,আল
মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৪৭৮০, সুনানে দারেমী, হাদীস
নং-১৫৭২,মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৪৮৫,মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫৭৫৯}


★দলিল:- ১৩
আবূ ইয়ালার ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে ও ইমাম বায়হাকী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর ‘হায়াত আল-আম্বিয়া’ পুস্তকে হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)
থেকে বর্ণিত আছে যে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ ফরমান:
’আম্বিয়া (আলাইহিস সালাম) তাঁদের মাযার-রওযায় জীবিত আছেন এবং তাঁরা (সেখানে) সালাত আদায় করেন’।”
[ইমাম সূয়ুতী কৃত ‘আল-হাওয়ী লিল্ফাতাউইয়ী’,২য় খণ্ড,২৬৪ পৃষ্ঠা]


ইমাম হায়তামী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ওপরে বর্ণিত সর্বশেষ হাদীস সম্পর্কে বলেন, “আবূ ইয়ালা ও বাজ্জার এটি বর্ণনা করেছেন এবং আবূ ইয়ালার এসনাদে সকল বর্ণনাকারী-ই আস্থাভাজন।”
ইমাম হাফেয ইবনে হাজর আসকালানী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-ও এই রেওয়ায়াতকে সমর্থন দিয়েছেন নিজ ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৪৮৩ পৃষ্ঠায়। [কাদিমী কুতুবখানা সংস্করণের ৬০২-৬০৩ পৃষ্ঠায়]উপরে উল্লেখিত কোরঅানের আয়াত ও সহিহ হাদিসের দলিল এবং মেরাজের ঘটনা মাধ্যমে প্রমানিত হয়
নবী-রাসূল আলাইহিস সালামগণ তাদের নিজ নিজ রওজাতে জিন্দা অবস্থায় রয়েছেন।
সুতরাং কোরআন এবং সহীহ হাদিসের ভিত্তিতে নবীগণ জীবিত, অস্বীকারকারীরা মুসলমানদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।

শেষ কথাঃ

কোরআনের ২ টি দিক একটি জাগতিক ও অন্যটি আধ্যাত্নিক। যারা জাগতিক জ্ঞান নিয়ে থাকেন তারাতো শুধু জাগতিক দিকটি দেখতে পাবে। আধ্যাত্নিক জানতে ও বুঝতে আধ্যাত্নিক শিক্ষক দরকার। জাগতিকজ্ঞানে প্রত্যেকে মৃত, কোরআনের ভাষায় আবার আধ্যাত্নিক জ্ঞানে এই কোরআনে বলে যারা আল্লাহর রাস্তায় জীবন দেয় তারা জিবীত ও আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিক প্রাপ্ত (আল ইমরান ১৬৯ আয়াত)

তাই সব কিছুর একটি সমাধান শুধু জাগতিকজ্ঞান ইসলাম নয়, আধ্যাত্নিক জ্ঞানও রয়েছে এসব বুঝতে প্রয়োজন কামেল পীর। কোরআনে বলেন- যারা দুনিয়াতে অন্ধ তারা পরকালেও অন্ধ।

তাইতো বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব বলেন- বাবা কামেল পীর পাইতে গেলে আল্লাহর দরবারে অনেক কান্না কাটি করতে হয়। অতি ভাগ্যগুনে কামেল পীরের সন্ধান মেলে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হেদায়েত দান করে প্রিয় নবী সাঃ এর শ্বান মান বুঝার তৌফিক দান করুক। আমিন।

হায়াতুন্নাবী বিষয়ে সকল বিভ্রান্তির সমাধান, এনায়েতউল্লাহ আব্বাসী

আরো পড়ুন-

তথ্যসূত্রেঃ অনলাইন

Quick Bangla

বাংলা তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট হিসেবে পরিচালিত এই সাইটটি। তাই বাংলায় অনেক ধরনের তথ্যই এখানে পেয়ে যাবেন। আশা করি সঠিক তথ্য বিষয়বস্তু জানতে পারবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

Adblock Detected

Please Turn off ad blocker