কাউকে কি গালি দেওয়া যাবে ইসলামের খাতিরে

এই পোষ্টে কাউকে কি গালি দেওয়া যাবে ইসলামের খাতিরে জানতে পারবেন। ইসলামের নাম দিয়ে যারা বিভিন্ন গালাগালি করে ওয়াজ করে তাদের মুখোশ খুলে যাবে।
গালি দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম
বৈধ কিংবা অবৈধ— যেকোনো কারণেই হোক, কাউকে গালি দেওয়ার অনুমতি ইসলামে নেই। এমনকি হাসি-কৌতুক ও ঠাট্টাচ্ছলেও অন্যকে গালি দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে অশোভনীয় ও নিন্দনীয়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা বিনা অপরাধে ঈমানদার পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ এবং স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৮)
গালি-গালাজ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ
হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি [আল্লাহর অবাধ্যাচরণ] এবং তার সঙ্গে লড়াই ঝগড়া করা কুফরি।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৪৫, ৭০৭৬; তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৩)
রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, ‘পরষ্পর গাল-মন্দকারী উভয়ে দুইটি শয়তান। তারা পরষ্পরের নিন্দা করে এবং মিথ্যা কথা বলে।’ (মুসনাদু আহমদ, হাদিস : ১৬৮৩৬)
এক হাদিসে আছে, ‘কবিরা গুনাহগুলোর একটি হলো নিজের বাবা-মা’কে অভিশাপ করা।’ জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর রাসুল! মানুষ নিজের বাবা-মাকে কীভাবে অভিশাপ করে?’ তিনি বললেন, ‘যখন সে অন্যের বাবাকে গালি-গালাজ করে, তখন সে নিজের বাবাকেও গালি-গালাজ করে থাকে। আর সে অন্যের মাকে গালি দেয়, বিনিময়ে সে তার মাকেও গালি দেয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৭৩; তিরমিজি, হাদিস : ১৯০২)
কাউকে কি গালি দেওয়া যাবে ইসলামের খাতিরে
অনেক আগে এক ওয়াজে হযরত আলী (রাঃ) এর সম্পর্কে বলতে গিয়ে বক্তা বলেন আলী (রাঃ) যুদ্ধের ময়দানে ইসলামের জন্য যুদ্ধ করছিলেন তখন এক ইহুদির সাথে তাঁর যুদ্ধ হচ্ছিল, ইহুদি যুদ্ধ করতে না পেরে একপর্যায়ে মাটিতে পড়ে যান তখন আলী (রাঃ) তলোয়ার দিয়ে যখনই তাকে হত্যা করবে ঠিক তখনই ইহুদি নিচ থেকে উপরের দিকে আলী (রাঃ) এর মুখে থুতু মারে তখন আলী (রাঃ) তলোয়ার ফেলে দেন তার থুতু দেওয়া দেখে। ইহুদি তখন মাটি থেকে উঠে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে আপনি আমাকে হত্যা করেননি কেন? তখন আলী (রাঃ) বলেন আপনার থুতু দেওয়া দেখে আমার মনে অনেক রাগ পেয়ে যায় মনে হচ্ছিল আপনাকে তখনই সাথে সাথে হত্যা করি কিন্তু আমি যদি আপনাকে তখন হত্যা করতাম তাহলে সেই হত্যাটি ইসলামের খাতিরে হত্যা করা হত না বরং আমার নিজ জিদের বা আক্রুসের বসে আমি আপনাকে হত্যা করতাম। আমি যদি আমার জিদের বসে আপনাকে হত্যা করতাম তাহলে আমি পাপী হতাম। তাই আমি আপনার থুতু দেওয়াতে আপনাকে হত্যা করেনি। তখন ইহুদি কেঁদে ফেললেন বললেন ইসলাম মানুষকে এত সুন্দর শিক্ষা দেয় এত সুন্দর ইসলামের আদর্শ সেই ইসলাম আমি কবুল করলাম।
আমি বলতে চাই ইসলাম তলোয়ারের আঘাতে প্রতিষ্ঠিত হয়নি বরং প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মুসলমানদের প্রেম প্রীতি মুহাব্বত ভালবাসা আদর্শ ইনসানিয়াত মুল্যভোধ নৈতিকতা দেখে, দলে দলে অমুসলিমরা ইসলাম গ্রহন ও কবুল করে স্বর্গের সুধা পান করেছে। সাহাবিরা যে কত সুন্দর চরিত্রের ছিলেন কত ক্ষমাশীল ছিলেন কত নমনীয় ছিলেন কত সুন্দর তাঁদের মুখের ভাষা ছিল তা তিনিদের জীবনি পড়লে বুঝা যায়।
আর এখন ইসলামের যত আকিদাই আছে প্রায় সবারই ভিতরে ওই আদর্শ দেখা যায় না। প্রকৃত ইসলাম থেকে বেশিরভাগই বিচ্যুত। একটু স্বার্থে আঘাত খেলেই গালাগালি ও গীবত করা শুরু করে দেয় নিজ জিদের বসে। অথচ গালাগালি ও গীবত করে ইসলামের খাতিরেই নাকি। তাদের বলতে চাই কোথায় পেলেন গালাগালি ও গীবত করা যাবে? কার জন্য গালি দিচ্ছেন যার জন্য গালি দিচ্ছেন যদি গালি দেওয়ার কারনে তিনিই আপনাকে না চিনে তাহলে আপনার এই গালাগালি করে ধর্ম পালন বা প্রচার কি কাজে আসবে।
ওলী আওলীয়া সকল এই উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার করেছে তলোয়ারের আঘাতে নয়, হিংসা দিয়ে নয়, গালাগালি করে নয়, গীবত করে নয় বরং প্রেম মুহাব্বত দিয়ে ও রাসুল (সাঃ) এর প্রকৃত সুন্নাতের কামেলিয়াতি দিয়ে ইসলাম প্রচার প্রসার করেছেন।
আরো পড়ুন-
- জিহাদ কাকে বলে, জিহাদের নামে জঙ্গীবাদ ইসলাম সমর্থন করে না
- জাকের পার্টি চেয়ারম্যান মহোদয়ের বাণী ও উপদেশ
- বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের বাণী ও উপদেশ
- পীর আউলিয়ার ওরস শরীফ জায়েজ ইসলামের দৃষ্টিতে
- উসিলা ধরা জায়েজ কোরআন হাদিস থেকে দলিল
তথ্যসূত্রেঃ
dhakapost.com/religion/39375