ফেসবুক থেকে আয় করার ৬টি উপায়

আজকের এই দিনে আমাদের সবারই মোটামোটি ফেসবুক আইডি আছে বা আমরা ফেসবুক ব্যবহার করে থাকি। তবে ফেসবুকে মেসেজে কথা বলা, ছবি ও ভিডিও আপলোড দেওয়া এবং যেকোন পোষ্টে লাইক কমেন্ট শেয়ার করা ছাড়াও এই ফেসবুক থেকে আয় করা সম্ভব।
অনেকে হয়তো জানেন ফেসবুক থেকে কিভাবে ইনকাম করা যায় বা কিভাবে ফেসবুক থেকে আয় করবেন। তবে আজ আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে জানব ৬টি পদ্ধতির মাধ্যমে কিভাবে ফেসবুক থেকে ইনকাম করা যায়।
আমরা যে আজকে ফেসবুক ইনকাম করার ৬টি উপায় সম্পর্কে জানবো তা আপনি মোবাইল ও কম্পিউটারে দুই ভাবেই করতে পারবেন।
১. ফেসবুক ভিডিও থেকে আয়
ফেসবুকের নিজেস্ব মনিটাইজশন In-stream ads টুলস দ্বারা আপনি ভিডিওতে এ্যাড দেখিয়ে আয় করতে পারবেন।
আপনারা দেখে থাকবেন ফেসবুক এর মধ্যে যেকোন ভিডিও দেখার সময় মাঝে মধ্যেই বেশ কিছু ভিডিওর নিচে এড সো করে বা ভিডিও চলাকালীন সময় বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে থাকে। তার মানে হল যেই পেইজ থেকে ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে তার মালিক ওই পেইজটিকে In-stream ads এর মাধ্যমে মনিটাইজেশন করে রেখেছে যার কারনে আমরা যখন ভিডিও দেখি তখন বিজ্ঞাপন দেখতে পাই।
আরো ক্লিয়ার করে যদি বলি তাহলে বলব ইউটিউব চ্যানেলে যেভাবে এডসেন্স এর মাধ্যমে মনিটাইজ অন করে এড দেখিয়ে ইনকাম করা হয় ঠিক তেমনি ফেসবুকের মাধ্যমে এভাবে এড দেখিয়ে ইনকাম করা যায়।
এখন কথা হলো কিভাবে আপনি ফেসবুকে In-stream ads এর মাধ্যমে মনিটাইজ অন করে আপনার ভিডিও থেকে আয় করতে পারবেন।
সবচেয়ে প্রথমে আপনাকে একটি ফেসবুক পেইজ তৈরি করতে হবে, তারপর আপনার পেজে উন্নত মানের ভাল ভাল ভিডিও আপলোড করতে হবে, তবে ভিডিও গুলো কম করে হলেও ৩ মিনিট এর হতে হবে।
আপনার পেইজে যখন ১০,০০০ ফলোয়ার্স হয়ে যাবে ও ৬০ দিনের মধ্যে আপনার ভিডিও গুলো ৩০,০০০+১ মিনিটে ভিউস হয়ে যাবে তখনি আপনি ফেসবুকে মনিটাইজেশন অন করার বা In-stream ads ব্যবহার করার অনুমোতি পেয়ে যাবেন।
ফেসবুকে মনিটাইজেশন শর্তগুলো কমপ্লিট করা ইউটিউবের চেয়েও সহজ কারন ফেসবুকে আপনি শেয়ার করার বা ভিডিও সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার অনেক অপশন রয়েছে তাই ভাল মানের ভিডিও আপলোড করলে ফেসবুকে সফল হওয়াও অনেকটাই সহজ কারন ফেসবুকে ভিজিটর সংখ্যা বেশি এবং ভিউও বেশি পাওয়া যায়।
২. ফেসবুক মার্কেটপ্লেস থেকে আয় করা
ফেসবুক মার্কেটপ্লেস Facebook marketplace এর মাধ্যমে আয় করা সম্ভব। ফেসবুক মার্কেটপ্লেস হল আপনি কোন দ্রব্য বা প্রোডাক্ট ফেসবুকের মাধ্যমে বিক্রি করলেন। যেকোন কিছু ফেসবুকের মাধ্যমে বিক্রি করাকে ফেসবুক মার্কেটপ্লেস বলা হয়।
ফেসবুক মার্কেটপ্লেস এ আপনি চাইলে নিজের পন্যও বিক্রি করতে পারেন আবার আপনার যদি নিজস্ব কোন দ্রব্য বা প্রোডাক্ট না থাকে তাহলে রিসেলিং করেও ইনকাম করতে পারেন। রিসেলিং হল অন্য যেকারো পন্য আপনি বিক্রি করে দিয়ে ইনকাম করা। রিসেলিং করার জন্য বিভিন্ন অ্যাপ বা ওয়েবসাইট আছে যেখান থেকে যেকোন পন্য নিয়ে নিজে বিক্রি করে ইনকাম করা যায়।
৩. ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয় করার উপায়
ফেসবুক গ্রুপ থেকেও অনেক ভাল একটা ইনকাম করা সম্ভব। আপনার যদি নির্দিষ্ট নিশ এর উপর একটি গ্রুপ থাকে আর সে গ্রুপে যদি পোষ্ট কনটেন্ট প্রশ্ন ও পুল এর মাধ্যমে মেম্বার বাড়াতে পারেন আর ভাল পরিমানের মেম্বার থাকে গ্রুপে তাহলে সেই গ্রুপের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।
কিভাবে গ্রুপের মাধ্যমে আয় করবেন- ফেসবুক গ্রুপে ফেসবুক মার্কেটপ্লেস থেকেও বেশি ইনকাম করা যায়। আগেই বলেছি ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে যেকোন পন্য বিক্রি করে ইনকাম করা যায়। ঠিক তেমনি ভাবে আপনার যদি কোন বড় ফেসবুক গ্রুপ থাকে সেখানে প্রোডাক্ট বিক্রি করার পোস্ট দিয়ে পন্য বিক্রি করে ইনকাম করতে পারেন। উদাহরন হিসেবে বলতে চাই যেমন ফেসবুক গ্রুপ খুলা হল “ওয়েবসাইট ডিজাইন এন্ড ডেভোলাপমেন্ট” নাম দিয়ে, এখন সেখানে মানুষ ওয়েবসাইট এর যেকোন সমস্যা নিয়ে পোস্ট করে সমাধান পায়, তখন আপনি পেইজের এডমিন হিসেবে যদি ওয়েবসাইট বিক্রি করতে চান বা বানিয়ে দিতে চান তাহলে এই গ্রুপে পোস্ট করার মাধ্যমে আপনি বিক্রি করে বা কাজ করে দিয়ে ইনকাম করতে পারেন। তাছাড়াও
যায় কিন্তু
ফেসবুক মার্কেটপ্লেসের মতোই ফেসবুক গ্রুপ একটি ভালো জায়গা নিজের প্রোডাক্ট অথবা রিসলিং প্রোডাক্ট বিক্রি করে ইনকাম করার জন্য। এছাড়া এই গ্রুপের মাধ্যমে স্পন্সর পোষ্টের মাধ্যমেও ইনকাম করতে পারবেন।
৪. ফেসবুকে ইনফ্লুয়েন্সের হয়ে ইনকাম করার উপায়
সোশ্যাল মিডিয়ায় ইনফ্লুয়েন্সের হয়ে ইনকাম করা যায়, সেক্ষেত্রে আপনি ইনফ্লুয়েন্সের হয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে ফেসবুক প্রোফাইল থেকেই আয় করতে পারেন। যদি আপনার ফেসবুক প্রোফাইল এর রিচ ভাল হয় মানে আপনার পোস্টগুলি যদি ভাল লাইক, শেয়ার এবং কমেন্ট পান আর যদি আপনার প্রোফাইল এর ফ্যান ফলোয়ার বেশি হয় তাহলে আপনি একজন ইনফ্লুয়েন্সর হয়ে ভাল একটা ইনকাম করতে পারেন ফেসবুক থেকেই।
কিভাবে ইনফ্লুয়েন্সের হবেন- বিভিন্ন ওয়েবসাইট আছে যেখানে আপনার নিজের একটি একাউন্ট তৈরি করতে হবে এবং সেই একাউন্ট এর মাধ্যমেই তাদের সাইটে বলতে হবে আপনি কোন প্রোডাক্টটি প্রমোট করতে চান এবং আপনি কত টাকা চার্জ নিবেন এভাবে বলতে পারেন। যদি ওই সাইট থেকে আপনার মাধ্যমে কোন কিছু প্রমুট করতে চায় তখন আপনাকে নির্দিষ্ট একটা চার্জ প্রদান করবে।
৫. ফেসবুক ফ্রিল্যান্স মার্কেটার
ফেসবুক ফ্রিল্যান্স মার্কেটার প্রতিদিন ৫০-১০০ ডলার ইনকাম করতে পারে। তবে ফেসবুক মার্কেটার হিসেবে কাজ করতে অবশ্যেই সে সম্পর্কে শিক্ষা ও দক্ষতা থাকার দরকার হয়।
ফেসবুক মার্কেটিং করতে কি কি দক্ষতা থাকতে হবে- ফেসবুক পরিসংখ্যান বুঝতে হবে, পরিসংখ্যান অনুযায়ী পূর্বাভাস বুঝে পোষ্ট করতে হবে, কিভাবে মার্কেটিং করা যাবে, মার্কেটিংয়ে সফল হতে সঠিক পূর্ব পরিকল্পনা করার দক্ষতা থাকতে হবে, মার্কেটিং এর কলা কৌশল জানতে হবে, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে, মার্কেটিং করার সঠিক সময় বুঝতে হবে।
আপনি যদি ফেসবুক মার্কেটিং করতে চান তাহলে অবশ্যই এসব দক্ষতা থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে অনলাইন থেকে ফ্রিতে শিখেন আর যে কারো থেকে কোর্স করে শিখেন তবে ফ্রিল্যান্স মার্কেটার হতে হলে প্রথমে শিখতে হবে দক্ষতার সাথে।
৬. ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে আয় করুন
ফেসবুক পেইজ থেকে আপনি অনেক উপায়ে আয় করতে পারবেন। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে ভাল উপায় হল পেইজের মাধ্যমে এফিলিয়েট করা। আপনি ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে এফিলিয়েট করতে পারেন। এফিলিয়েট হল যেকারো পন্যের লিংক এনে প্রচার করা, যখন এই লিংকের মাধ্যমে মানুষ যখন পন্যটি কিনবে তখন আপনি ওই বিক্রয়কৃত পন্য থেকে কমিশন পাবেন।
কিভাবে ফেসবুক পেইজ এ এফিলিয়েট করবেন- প্রথমে আপনাকে একটি ফেসবুক পেইজ তৈরি করতে হবে, তারপর আপনার যে নিশটি ভাললাগে সেটি নিয়ে কাজ করতে হবে মানে যে বিষয়টি ভাল লাগে তার উপর পোষ্ট করতে হবে। যদি মোবাইল টেকনোলজি ভাল লাগে তাহলে মোবাইল টেকনোলজি নিয়ে শিক্ষনীয় পোষ্ট করতে থাকুন, যখন আস্তে আস্তে ফ্যান ফলোয়ার বেড়ে যাবে তখন আপনি মোবাইল এর বিক্রি করার লিংক দিলে তখন এই লিংকের মাধ্যমে মানুষ কিনবে বেশি। তেমনি ভাবে যে যেবিষয় নিয়ে পছন্দ করে সে বিষয়ের উপর পেইজ খুলতে পারে।
এফিলিয়েট লিংক কোথা থেকে পাবেন- এফিলিয়েট করার জন্য অনেক ওয়েবসাইট আছে যারা এফিলিয়েট সুবিধা দিয়ে থাকে, তারমধ্যে ওয়াল্ডওয়াইড ভাবে অ্যামাজন, থিমফরেস্ট অনেক পপোলার এ দুইটা সাইট বিদেশি যদিও এখন বাংলাদেশ থেকেও এসব সাইট থেকে অনেকেই পন্য কিনে থাকে, যেমন আমি অ্যামাজন থেকে মাইক্রোফোন কিনেছি এবং থিমফরেস্ট থেকে ওয়েবসাইট থিম কিনেছি। তাছাড়াও বাংলাদেশ থেকেও অনেক সাইট আছে যারা এফিলিয়েট সুবিধা দিয়ে থাকে তারমধ্যে আমার কাছে অন্যতম হল বিডিশপ যেখানে আপনি টেকনোলজির আইটেম গুলো সহজেই পেয়ে যাবেন এবং এফিলিয়েটও করতে পারবেন।
এছাড়াও ফেসবুক পেইজ থেকে আয় করার অনেক উপায় রয়েছে-
ফেসবুকে স্পন্সর পোষ্টের মাধ্যমে আয় করতে পারেন।
ফেসবুক পেইজ বিক্রি করে আয় করতে পারেন।
ফেসবুকে লাইক এবং শেয়ার বিক্রি করার মাধ্যমে আয় করতে পারেন।
তাছাড়াও অন্যদের ফেসবুক পেইজ প্রমোট করে আয় করতে পারেন।
শেষ কথা হলোঃ
ফেসবুক থেকে বিভিন্ন উপায়ে ইনকাম করার কৌশল সম্পর্কে বলা হলো। আপনার যে বিষয়টি ভাল লাগে সেটি নিয়ে কাজ করতে পারেন। তবে আপনি যেটি নিয়েই কাজ করতে চান না কেন, সেটিতে সময় দিতে হবে। আপনি যেকাজই করেন না কেন, পাশাপাশি টার্গেট করে যেকোন একটি নিয়ে আস্তে আস্তে কাজ শুরু করতে পারেন।