বাংলা ব্লগ

ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম (voter transfer bd)

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম (voter transfer bd)। তাছাড়াও ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে কি কি লাগে সকল বিষয় জানুন। (Bangladeshi people voter transfer rules)

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যাদের ভোটার এলাকা স্থানান্তরের প্রয়োজন হয়ে থাকে বা যে এলাকায় ভোটার হয়েছেন প্রথমে পরবর্তীতে অন্য এলাকায় সেই ভোটার হওয়ার জন্য প্রয়োজন হয়।

আজকে এই পোষ্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভোটারগণ কিভাবে ভোটার স্থানান্তর হওয়া যায় বা ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম সম্পর্কে জানব (nid transfer system)। আশা করি নিম্নে উল্লেখিত নিয়ম বা পরামর্শ অনুসরণ করলে আপনার বর্তমান ভোটার এলাকা পরিবর্তন করে অন্য এলাকায় ভোটার হতে পারবেন।

আমরা জীবন চলার পথে অনেক সময় নিজ এলাকা ছেড়ে বা স্থায়ী এলাকা ছেড়ে অস্থায়ী অন্য এলাকায় বসবাসের প্রয়োজন হতে পারে, যেমন- ব্যবসার জন্য, চাকুরীর জন্য, লেখাপড়ার জন্য বা অন্যান্য অনেক প্রয়োজনে অন্যত্র বসবাস করে থাকি।

আমরা যখন অন্য এলাকায় থাকি তখন অনেক সময় সে এলাকায় আমরা ভোটার হয়ে যাই। আবার দেখা যায় স্থায়ী ঠিকানায় আমরা ভোটার হয়ে থাকি কিন্তু পরবর্তীতে বর্তমান বসবাসের এলাকায় ভোটার এলাকা পরিবর্তন করে নিয়ে আসার প্রয়োজন পরে থাকে।

আমরা যে কারনেই হোক ভোটার এলাকা পরিবর্তন বা স্থানান্তর করার জন্য যদি প্রয়োজন হয় তা কিভাবে পরিবর্তন করতে হয় তা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করব।

ভোটার এলাকা স্থানান্তরিত হওয়ার নিয়মঃ (nid transfer system)

আপনি যদি ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে চান তাহলে আপনাকে প্রথমেই যে এলাকায় স্থানান্তরি হবেন বা যে এলাকায় এখন ভোটার হতে চান সে এলাকার উপজেলার নির্বাচন অফিসে যেতে হবে এবং উপজেলা নির্বাচন অফিসে ভোটার এলাকা স্থানান্তরি হওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে।

আবেদন করার জন্য একটি ফরম সংগ্রহ করতে হবে নির্বাচন অফিস থেকে, ফরমটির নাম হচ্ছে ১৩নং স্থানান্তর ফরম। আপনি যদি অফিস থেকে ফরমটি নিতে না চান তাহলে এই অফিসের সামনে দেখবেন কম্পিউটার বা ফটোকপির দোকান রয়েছে সেখান থেকেও চাইলে ফরমটি সংগ্রহ করে নিতে পারেন কারন তাদের কাছে এই ফরমটি পাওয়া যায়।

ভোটার এলাকা পরিবর্তন হওয়ার ফরম পুরণ করার নিয়মঃ

ভোটার স্থানান্তর হওয়ার ফরম-১৩ নেওয়ার পর প্রথমেই ফরমটি পড়ে দেখবেন ভালভাবে। ফরমটি পুরণ করা খুব কঠিন কিছু নয়। খুব সহজেই ফরমটি পুরণ করতে পারবেন।

নিম্নের নিয়মগুলো অনুসরণ করুনঃ

০১নং ক্রমিক নাম্বারে  ফরমে আবেদনকারীর নাম লিখতে হবে বাংলায়।

০২নং ক্রমিক নাম্বার ফরমে আবেদনকারীর এনআইডি কার্ড/ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর লিখতে হবে।

০৩ নং ক্রমিক নাম্বার ফরমে আবেদনকারীর জন্ম তারিখ লিখতে হবে।

০৪ নং ক্রমিক নাম্বার ফরমে আবেদনকারী যে এলাকায় আগে ভোটার ছিল সে এলাকার ঠিকানা লিখতে হবে। সেক্ষেত্রে ভোটার এলাকার নাম, গ্রাম/রাস্তার নাম ও নম্বর, বাসা/হোল্ডিং নম্বর, ভোটার এলাকার নম্বর, উপজেলা/থানার নাম, জেলার নাম সহ সবগুলো খালি জায়গা পুরণ করতে হবে।

তবে ভোটার নম্বর ও ভোটার এলাকার নম্বর যদি না জেনে থাকেন তাহলে লেখার দরকার হবে না অথবা নির্বাচন অফিস থেকে জেনে তারপর লিখতে পারেন। ভোটার এলাকার নাম বা গ্রাম/রাস্তার নাম অধিকাংশ সময় একই হয়ে থাকে, ক্ষেত্র বিশেষে আলাদা হতে পারে।

তাই ভোটার এলাকার নামের স্থানে আপনার গ্রাম/রাস্তার নাম লিখে দিতে পারেন যদি একই হয়ে থাকে জেনে থাকেন।

০৫ নং ক্রমিক নাম্বার ফরমে আবেদনকারী যে ঠিকানায় ভোটার স্থানান্তর করাতে চায় বা যে এলাকা ভোটার হতে চাইছেন সে এলাকার ঠিকানা লিখে দিতে হবে।

এক্ষেত্রে জেলার নাম, উপজেলার নাম, ইউনিয়ন/সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ক্যান্টঃ এরিয়াসহ যে এলাকার আওতায় ভোটার হতে চান সেখানে টিক চিহ্ন দিতে হবে এবং পাশে ইউনিয়ন/সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ক্যান্টঃ বোর্ড এর নাম লিখে দিতে হবে।

তারপর আপনার ভোটার এলাকার নাম, ওয়ার্ড নম্বর,  ভোটার এলাকার নম্বর, গ্রাম/রাস্তার নাম ও নম্বর, বাসা/হোল্ডিং নম্বর, ডাকঘর এবং পোষ্ট কোড, মোবাইল নম্বর লিখে দিতে হবে।

আপনি যদি ভোটার এলাকার সঠিক তথ্য না জেনে থাকেন তাহলে আপনার ওয়ার্ড মেম্বার বা এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকেও জেনে নিতে পারেন আগেই, পুরোপুরো নিশ্চিত হয়ে তারপর ফরমটি পুরন করুন।

০৫ নং ক্রমিকের তথ্যাদি যদি ভুল  হয় বা ভোটার এলাকা ভুল হলে  আপনার সমস্ত কষ্টই বৃথা হয়ে যাবে। কারণ হলো আপনার ভোটার তথ্য ভুল ঠিকানায় পরিবর্তন হয়ে যাবে। তাই যতটুকু সম্ভব সাবধান থেকে ৫ নং ক্রমিক নম্বরের তথ্য পুরন করতে হবে।

০৬ নং ক্রমিক নাম্বারে  ফরমে বলা হয়েছে ০৫নং ক্রমিক নাম্বারে বর্ণিত ঠিকানায় আপনি কতদিন যাবত বসবাস করছেন তা উল্লেখ করে দিতে হবে। হতে পারে এই ঠিকানায় আপনি জন্মগ্রহণ করেছেন, নয়তো  এক বছর বা তিন বছর যাবত অথবা আরো বেশি দিন যাবত বসবাস করছেন যার যেমন তেমনটি লিখে দিতে হবে।

০৭ নং ক্রমিক নাম্বার  ফরমে  বলা হয়েছে, আপনি কিসের জন্য ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে চান।আপনি হয়তো বর্তমান ঠিকানা থেকে স্থায়ী ঠিকানায় পরির্তন হতে চান বা বৈবাহিক কারনে হতে চান, আপনি যে কারনেই ভোটার স্থানান্তর হতে চান সেটি উল্লেখ করে দিবেন।

ফরমটির পিছন এর দিকে আবেদনকারীর স্বাক্ষর বা টিপ সহি’র জন্য স্থান রাখা আছে। এখানে আবেদনকারী সই স্বাক্ষর করবেন। তবে আপনার ভোটার আইডি কার্ডে আগে যেভাবে স্বাক্ষর করা আছে যেভাবেই স্বাক্ষর করতে হবে না হলে আপনার আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।

একজন জনপ্রতিনিধির স্বাক্ষর করাতে হবে। যে কেউ সনাক্তকারীর স্থানে স্বাক্ষর করলে আবেদনপত্রটি বাতিল হতে পারে। সনাক্তকারী জনপ্রতিনিধি অবশ্যই তিনির স্বাক্ষর ও এনআইডি নাম্বার এবং সীল ব্যবহার করতে হবে। 

০৮ নং ক্রমিক নাম্বার ফরমে  প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের বিষয়ে উল্লেখ আছে। যাবতীয় কাগজপত্র  যে ঠিকানার নামে ভোটার পরিবর্তন করে আনতে চান সেই ঠিকানার হতে হবে।

ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে কি কি লাগে

ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হয়ঃ

  • আপনার এলাকা যদি ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন হয় তাহলে চেয়ারম্যান এর প্রত্যয়নপত্র লাগবে। যদি পৌরসভার আওতাধীন হয় তাহলে পৌর মেয়র বা ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর প্রত্যয়নপত্র লাগবে। মানে আপনি যে এলাকায় ভোটার স্থানান্তরিত হতে চান সে এলাকার একজন জনপ্রতিনিধী কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্র লাগবে।
  • আপনার বাড়ীর বিদ্যুৎ বিল অথবা গ্যাস বিলের কপি লাগবে। (বাড়ীর যেকোন একজনের নামের বিল হলেই হবে)
  • ট্যাক্স রশিদ/পৌর কর এর রশিদ/বাড়ী ভাড়ার রশিদ এর মধ্যে যার যেটি আছে সেটি জমা দিতে হবে। (বাড়ীর যেকোন একজনের নামে বিল হলেই চলবে)
  • আবেদনকারীর এনআইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দিতে হবে।  

এই কাগজপত্র সকল আবেদন এর কপির সাথে পিছনে সেপলার মেরে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে জমা দিতে হবে। নির্বাচন অফিস থেকে আবেদনের নিচের অংশ কেটে দিয়ে দেবে সেটি রেখে দিবেন যত্নসহকারে যাতে পরবর্তীতে অফিসে গেলে সংগে নিয়ে যেতে পারেন।

আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হলে আপনার মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

প্রথম মেসেজ আসলে আপনার কোন কিছু করার দরকার হবে না। তবে দ্বিতীয় মেসেজ যখন আসবে তখন আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে আপনার আবেদনটি গ্রহণযোগ্য হয়েছে নাকি বাতিল হয়েছে নাকি আরো অন্যকোন কাগজপত্র নিয়ে অফিসে যেতে হবে। মেসেজে যদি বলা হয় আবেদনপত্রটি গ্রহণযোগ্য হয়েছে তাহলে আপনাকে আর কষ্ট করে অফিসে যেতে হবে না এই সময়।

আর যদি কোন মেসেজ না আসে তাহলে ১ থেকে ২ মাস পর অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করুন।

একবার ভোটার এলাকা স্থানান্তর হয়ে গেলে আপনি ওই এলাকায় ভোটার হয়ে যাবেন ও পরবর্তীতে নির্বাচনের সময় ভোট দিতে পারবেন।

ভোটার এলাকা পরিবর্তন হওয়ার পরে অনলাইন থেকে বা অফিসে এসে রিইস্যুর আবেদন করে এনআইডি কার্ড উঠাতে পারবেন।

আশা করি কিভাবে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য যাবতীয় তথ্য (nid transfer information) এই পোষ্টের মাধ্যমে পেয়ে গেলেন। এ রিলেটেড কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।

ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য ও আমাদের এই ওয়েবসাইটের সাথে থাকার জন্য। 

আরো পড়ুন-

Quick Bangla

বাংলা তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট হিসেবে পরিচালিত এই সাইটটি। তাই বাংলায় অনেক ধরনের তথ্যই এখানে পেয়ে যাবেন। আশা করি সঠিক তথ্য বিষয়বস্তু জানতে পারবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

Adblock Detected

Please Turn off ad blocker