মাজার জিয়ারত করা জায়েজ দলিল সমূহ জেনে নিন
এই পোষ্টের মাধ্যমে মাজার জিয়ারত করা জায়েজ দলিল সমূহ জেনে নিন। নিয়ত করে মাযার বা কবর যিয়ারত করা খাছ সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।
আলোচনা শুরুর আগেই বলে নেই- মাজার জিয়ারত করা রাসুল সাঃ এর খাছ সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত কারণ নবীজি সাঃ নিজেই কবর/মাজার শরীফ জিয়ারত করেছেন, জান্নাতুল বাকী ও অন্যান্য কবর শরীফ এবং নিজ মায়ের মাজার শরীফও জিয়ারত করেছেন। সাহাবিরাও কবর/মাজার শরীফ জিয়ারত করেছেন।
কথা হলো কেউ যদি কবর বা মাজার শরীফ জিয়ারত না করে তাহলে তার কোন গুণাহ হবে না। তবে কেউ যদি মাজার জিয়ারতকে পূজা বলে তাহলে কুফুরি করল, কারণ কেউ যখন কোন সুন্নাতকে অস্বিকার করল তখন সে কুফুরি করল। আর কুফুরি করলে বিনা তালাকে নিজের বউ তালাক হয়ে যাবে। অবশ্যই মাজার জিয়ারতকে পূজা বা শিরক বলা যাবে না।
মাজার জিয়ারত করা জায়েজ
নিয়ত করে মাযার শরীফ বা কবর যিয়ারত করা খাছ সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। যা কিনা অসংখ্য হাদীস শরীফের দলীল দ্বারা প্রমানিত। সহীহ হাদীস শরীফের মধ্যে এরশাদ হয়েছে–
হযরত ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এরশাদ করেছেন, যে ব্যাক্তি আমার কবর ( রওজা শরীফ) যিয়ারত করলো তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।”
দলীল–
√ জামে ছগীর ১৭১ পৃষ্ঠা
√ শিফাউস সিকাম ২
√ ওফাউল ওফা ৩৯৪ পৃষ্ঠা !
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওজা শরীফ যিয়ারত প্রসঙ্গে শতাধিক হাদীস শরীফ আছে। প্রয়োজনে সেগুলা পরে উল্লেখ করা যেতে পারে ! আরো একটি গুরুত্বপূর্ন সহীহ হাদীস শরীফে বর্নিত আছে-
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- মদীনা শরীফ আমার ঘর, আর আমার কবরও মদীনা শরীফই হবে। তাই প্রত্যেক মানুষের উচিত এর যিয়ারত করা।”
দলীল-
√ মিশকাত শরীফ।
√ মিরকাত শরীফ।
√ আশয়াতুল লুময়াত।
√ শরহূত ত্বীবি।
এসকল হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় আল্লামা মুহম্মদ ইউসুফ বিন নূরী বলেন-
জমহুর উম্মত এর মাযহাব হল রওজা মুবারক যিয়ারত করা উত্তম ইবাদত, আর নিয়ত করে সফর করা শুধু জায়েজই নয় বরং মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত এতে কোন প্রকার অসুবিধা নেই।”
দলীল-
√ শরহে তিরমিযী ৩য় খন্ড ৩২৯ পৃষ্ঠা।
√ মা’আরিফুস সুনান।
মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর
মাজার জিয়ারত করা জায়েজ ও সফর করাও যায়েজ
বর্তমানে একদল লোক বিশেষ করে ইবনে তাইমিয়া ও তার সমর্থকরা নিয়ত করে মাজার জিয়ারতের জন্য সফর করার ব্যাপারে হাদিস শরীফের ভুল বা মনগড়া ব্যাখ্যা করে থাকে।এমনকি ইবনে তাইমিয়া তার ফতওয়ায়ে কোররাতে হুজুর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এঁর রওজা শরীফও নিয়ত করে জিয়ারতের জন্য সফর করা নিষেধ করেছে।তারা এ ব্যাপারে নিম্নোক্ত হাদিস শরীফ বর্ণনা করে থাকে:
★২. হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ফরমান: তিনটি মসজিদ ছাড়া আর কোথাও (উটের) হাওদা বেঁধো না; যথা- মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আকসা ও আঁমার মসজিদ
[মেশকাত: ৬৪২, বুখারী ও মুসলিম]
অর্থাৎ,হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) বলেন,হুজুর পাক (সাঃ)-বলেছেন তিন মসজিদ ছাড়া সফর করো না,মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আক্বছা ও আঁমার এই মসজিদ।
ব্যাখ্যা বিশ্লেষন ও অভিমত—
*(ক.) এ হাদিস শরীফে রওজা শরীফ, মাজার শরীফ ও মুসলমানদের কবর জিয়ারতের কোনো কথাই নেই। আর তাই, এটিকে কবর জিয়ারতের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলাটা চরম অজ্ঞতা ও হাস্যকর তথা গোমরাহী।ঐ নিষেধাজ্ঞা শুধু অন্যান্য মসজিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তা না হলে, ঐ ৩টি মসজিদ ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্যে তো বাড়ী থেকেই বের হওয়াই যাবে না বা হারাম বলে সাব্যস্ত হবে (নাউযুবিল্লাহ)! যেমন- বাজার, অফিস-আদালত, ব্যবসা কেন্দ্র, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল,শ্বশুর বাড়ী,বিয়াইয়ের বাড়ী তথা আর কোথাও যাওয়া যাবে না!!
সহীহ মুসলিম এই হাদিস দ্বারা প্রমান হয়- প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-স্বীয় মায়ের মাজার জিয়ারত করার জন্য নিঁজ ঘর থেকে ‘ আবওয়’ নামক স্থানে গিয়েছেন। উল্লেখ্য যে,দয়াল নবীজি (সাঃ)-এঁর মাতার মাজার ‘ আবওয়া ’ নামক স্থানে অবস্তিত,যার দুরত্ব মদিনা থেকে প্রায় ২৫০ কিঃমি। এখন আপনারাই বলুন! আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-যদি ২৫০ কিঃমি সফর করে নিঁজের মায়ের মাজার যিয়ারত করতে গিয়েছিলেন।
–এই হাদিস দ্বারাও প্রমাণ হয় মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ।
কবর জিয়ারতের হাদিস
(১) হযরত বুরহিদাহ্ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা করতে পারো (মুসলিম শরীফ)।
(২) অন্য হাদিস শরীফ উনার মধ্যে আছে: হযরত ইবনে মসউদ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা করতে পার। কেননা উহা দুনিয়ার আসক্তিকে কমায় এবং আখিরাতকে স্মরণ করায়। (ইবনে মাযাহ)
মাজারে যাওয়া কি শিরক
কিছু বাতিল ফির্কা ফেতনা সৃষ্টিকারীরা কবর যিয়ারতকে বিদয়াত, শিরিক বলে থাকে, শুধু তাই নয় তারা যিয়ারতকে কবর পূজা বলেও আখ্যায়িত করে থাকে ! কথা হলো কেউ যদি কবর বা মাজার শরীফ জিয়ারত না করে তাহলে তার কোন গুণাহ হবে না। তবে কেউ যদি মাজার জিয়ারতকে পূজা বলে তাহলে কুফুরি করল, কারণ কোন সুন্নতকে অস্বিকার করা কুফুরি আর কুফুরি করলে বিনা তালাকে নিজের বউ তালাক হয়ে যাবে। অবশ্যই মাজার জিয়ারতকে পূজা বা শিরক বলা যাবে না।
মাজার জিয়ারত করা জায়েজ
শেষ কথাঃ
মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর ও কবর জিয়ারতের হাদিস সমূহ জানতে পারলেন। সেই সাথে মাজারে যাওয়া কি হারাম নাকি মাজারে যাওয়া কি শিরক সে সম্পর্কেও জানতে পারলেন। মাজারে গিয়ে দোয়া করলে কবুল হয় অবশ্যই। মাজার জিয়ারত নবীজি সাঃ করেছেন এবং সাহাবিরাও করেছেন। আমাদের সবার উচিত হবে ইসলামের সত্য পথে থেকে ইসলাম পালন করা।
আরো পড়ুন-
- বায়াত হওয়ার দলিল কোরআন হাদীসের আলোকে
- তারাবির নামাজ বিশ রাকাতের দলিল সহিহ হাদিস
- রাসূল সাঃ এর রওজা মোবারক বলার দলিল কোরআন হাদিস থেকে
- রাসুল সাঃ এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খাওয়া চোখে মালিশ করার ফজিলত
- রাসূল সাঃ সৃষ্টি না হলে কিছুই সৃষ্টি হত না কোরআন হাদিসের দলিল
তথ্য সূত্রেঃ
- sunni-encyclopedia.com/2019/01/blog-post_389.html
- m.somewhereinblog.net/mobile/blog/linkshare/29913525
- modinargolam.wordpress.com/2018/04/23/জিয়ারত-বিষয়ক-আলোচনা-৪৪-নং/