ইসলাম নলেজইসলামিক প্রশ্ন উত্তর

পীরের কাছে সাহায্য চাওয়া জায়েজ কেন

এই পোষ্টে পীরের কাছে সাহায্য চাওয়া জায়েজ কেন জানতে পারবেন। পীর এর নিকট কিছু ফরিয়াদ করা কখনই শিরকের অন্তর্ভুক্ত নয়।

পীরের কাছে সাহায্য চাওয়া জায়েজ

রিজিকের মালিক মহান আল্লাহতায়ালা কিন্তু আমরা যখন কোন কিছু খেতে চাই তখন কোন মানুষের কাছে প্রায় সময় চেয়ে থাকি। এই চাওয়াটাকে কিন্তু শিরক ধরা যাবে না। আবার অসুখ দেয় আল্লাহ আবার সুস্থ্যতাও দান করেন আল্লাহতায়ালা, আমরা কিন্তু অসুস্থ্য হলে ঔষধ খায় রোগ ভাল হওয়ার জন্য আবার অসুস্থ্য হলে ডাক্তারকে বলি আমাকে সকল ধরনের চিকিৎসা দিয়ে ভাল করে তুলুন। এখানেও কিন্তু শিরক হয় না। কারণ আমরা জানি আল্লাহ সর্বশক্তিমান তিনি সকল কিছুর উর্ধে। এখন আমরা যদি ডাক্তারকে আল্লাহ ভেবে বলি আমাকে সুস্থ্য করে দিন তাহলে সেখানে শিরক হবে।

ঠিক তেমনি ভাবে আমরা যখন ধর্মীয় কোন বুজুর্গের কাছে যায় আর তিনির কাছে আমাদের সমস্যার কথা বলি তখন তিনিকে কিন্তু আল্লাহ ভেবে বলা হয় না। বরং তিনিকে আল্লাহর প্রতিনিধি বা আল্লাহর বন্ধু ভেবে সমস্যার কথা বলি বা কোন কিছু চেয়ে থাকি।

আমাদের এদেশের বাংলা ভাষায় অনেক ভাষার সংমিশ্রণে ভাষাটি তৈরি বা কথা বলে থাকি। তাই ভাষাগত ভাবে ইসলামিক কথাবার্তায় ফার্সি ভাষা বেশির ভাগ ব্যবহার করি, যেমন- নামাজ রোজা পীর, এসব ভাষা গুলো ফার্সি ভাষা, পীর অর্থ ইসলামের শিক্ষক, গুরুজন, অভিভাবক, বুজুর্গব্যক্তিদেরকে পীর বলে থাকি। তাই পীরের কাছে সাহায্য চাওয়া জায়েজ রয়েছে ইসলামে।

আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো কাছে সাহায্য চাওয়া জায়েয

আল্লাহর বান্দাগন হচ্ছেন উপলক্ষ্য ও উছিলা মাত্র । তাদের উছিলায়ই আল্লাহ সাহাজ্য করেন ও বিপদ দূর করেন ।আল্লাহ তায়ালার নিয়ম নীতি হচ্ছে- কোন ফেরেস্তা বা বান্দার মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করা । যেমনঃ- ফেরেস্তার মাধ্যমে শিশুর রুহ প্রদান করা,বান্দার হেফাযত করা, বৃষ্টি নাজিল করা, মেঘমালা তৈ্রী করা ও পরিচালনা করা, রিজিক বন্টন করা, মৃত্যু দান করা, ডাক্তার ও ঔষধের মাধ্যমে রোগ দূর করা, সূরযের তাপের মাধ্যমে পৃ্থিবী উষ্ণ রাখা, নবী ও অলীগনের মাধ্যমে লোকদের হেদায়াত দান করা, পিতা-মাতার মাধ্যমে সন্তান উৎপাদন করা-ইত্যাদি ।এগুলো হচ্ছে উপলক্ষ্য । (এগুলোকে স্বী্কার করে নেওয়ার নামই হল ঈমান)

অন্য কারো কাছে সাহায্য চাওয়া দলিল

অসংখ্য দলীল দ্বারা অন্য কারো কাছে সাহায্য চাওয়া প্রমানিত । যেমনঃ-

১. সহীহ মুসলিম শরীফে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ-

“আল্লাহ তায়ালা ততক্ষন ঐ বান্দাকে সাহজ্য করেন, যতক্ষন সে অন্য ভাইয়ের সাহায্য করে। (মুসলিম শরীফ)

২. আবু দাউদ শরীফের আরেকটি হাদিসে পাকে আছেঃ-

তোমরা বিপদগ্রস্থকে সাহাজ্য করো এবং পথহারাকে রাস্তা প্রদরশন করো। (আবু দাউদ শরীফ)

উক্ত দুটি হাদিসে অন্যকে সাহাজ্য করা ও পথহারাকে পথ প্রদরশনের জন্য আদেশ করা হয়েছে । সুতরাং সাহাজ্যের জন্য কেউ উপলক্ষ্য হওয়া জায়েয ।

[আল্লাহ তায়ালাই অধিক ভালো জানেন]

অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়া হাদিস থেকে

সরাসরি পীর ও শায়েখ উনার নিকট কিছু চাওয়া বা ফরিয়াদ করা কখনই শিরকের অন্তর্ভুক্ত নয়। হ্যাঁ, যদি পীর বা শায়েখ উনাকে ‘আল্লাহ পাক’ মনে করে কিছু চায়, তবে সেটা অবশ্যই শিরক হবে। এটা শুধু শায়েখ বা পীর (মুর্শিদ ক্বিবলা) উনার জন্যই খাছ নয় বরং যে কাউকেই ‘আল্লাহ পাক’ মনে করে তার নিকট কিছু চাওয়া শিরকের অন্তর্ভুক্ত। আর বান্দার নিকট সাহায্য বা কোনো কিছু চাওয়া বা ফরিয়াদ করার সমর্থন তো হাদীছ শরীফ-এই রয়েছে।

যেমন হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “তোমাদের কেউ যদি কোথাও রাস্তা হারিয়ে ফেলে, তখন বলবে- ইয়া আব্দাল্লাহ অর্থাৎ হে আল্লাহ পাক উনার বান্দা আমাকে সাহায্য করুন।” স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতদেরকে তা’লীম দিলেন বান্দার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতে।

যদি বান্দার নিকট কোনো কিছু চাওয়া শিরক হয়, তবে কি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতদেরকে শিরক শিক্ষা দিয়েছেন? নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক! কেউ যদি একথা বিশ্বাস করে বা কল্পনা করে যে, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতদেরকে শিরক শিক্ষা দিয়েছেন তাহলে তো সে কাফির হয়ে যাবে।

আউলিয়ায়ে কিরামের নিকট চাওয়া বা ফরিয়াদ করা

আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নিকট কিছু চাওয়া বা ফরিয়াদ করা সম্পূর্ণ জায়িয। কেননা আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের উসীলায় আল্লাহ পাক তিনি বান্দা-
বান্দী ও উম্মতদেরকে রিযিক দেন, বৃষ্টি দেন, বিপদ-আপদ, বালা-মুছীবত থেকে হিফাযত করেন। খাছ করে রহমত বরকত নাযিল করেন বলে হাদীছ শরীফ- এ উল্লেখ আছে।

যেমন ‘ইবনে সাদ’ কিতাবের ৪র্থ খ- ১৫৪ পৃষ্ঠায় ও ‘কিতাবুদ দাই’-এর ১ম খ- ৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, একদা হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের পা মুবারক অবশ হয়ে গেলে উনারা প্রত্যেকে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এভাবে দোয়া করেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আমাদের পা ভালো করে দিন।” বলার সঙ্গে সঙ্গে উনাদের পা মুবারক ভালো হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! যদি এক্ষেত্রে সেটা শিরক না হয়ে থাকে তবে শায়েখ বা পীর মাশায়েখের ক্ষেত্রে এটা শিরক হবে কেন? হক্কানী আল্লাহর ওলী বা কামেল পীর তো রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই দেখানো পথে চলে থাকেন।

পীর ও ওলিদের কাছে কিছু চাওয়া যাবে | চুড়ান্ত দলিল দিলেন মাওলানা আমিনুদ্দিন

আরো পড়ুন-

তথ্য সূত্রেঃ

sunni-encyclopedia.com/2019/01/blog-post_819.html

m.somewhereinblog.net/mobile/blog/Masoom007/29446001

Quick Bangla

বাংলা তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট হিসেবে পরিচালিত এই সাইটটি। তাই বাংলায় অনেক ধরনের তথ্যই এখানে পেয়ে যাবেন। আশা করি সঠিক তথ্য বিষয়বস্তু জানতে পারবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close

Adblock Detected

Please Turn off ad blocker